আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের স্থান নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা কাটেনি। পুলিশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২৬ শর্তে সমাবেশের অনুমতি দিলেও বিএনপি সেখানে যেতে নারাজ। চাহিদা অনুযায়ী বিকল্প স্থানে সমাবেশ করতে না দিলে শেষ পর্যন্ত নয়াপল্টনে থাকতেই অনড় দলটি। নয়াপল্টন এলাকা নিজেদের দখলের রাখতে বেশ কৌশলী ভূমিকায়ও দলটি। এরই মধ্যে নেতাকর্মীদের পদচারণায় সরগরম হয়ে উঠেছে নয়াপল্টন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত ঢাকার বাইরে থেকে আসা নেতাকর্মীরা নানামুখী স্লোগান আর সরকার পতনের দাবিতে নয়াপল্টন এলাকায় অবস্থান করছেন। তারা একসঙ্গে বেশি লোক জড়ো হচ্ছেন না। অনেক নেতাকর্মীকে পল্টনের আশপাশে রাতে ঘুমাতেও দেখা গেছে। সব মিলিয়ে আগামী ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন এলাকা ক্রমশ উত্তাপ ছড়াচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিজ নির্বাচনী জেলা ঠাকুরগাঁও থেকে আশি বছর বয়সী এক বৃদ্ধ এসেছেন গণসমাবেশে যোগ নিতে। তিনি নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে রাত্রিযাপন করছেন।
তিনি বলেন, দলে আমার কোনো পদ-পদবি নেই। আমি বিএনপিভক্ত, আগামী ১০ তারিখ গণসমাবেশ উপলক্ষে গত ১ ডিসেম্বর ঢাকায় এসেছি। এখানেই (পল্টন) থাকছি, খাচ্ছি।
টাঙ্গাইলের সদর থানা বিএনপির সদস্য সৈয়দ খালেক মোস্তফা। তিনি ঢাকায় এসেছেন গত সোমবার (৫ ডিসেম্বর)। তিনিও কার্যালয় নিচে অন্যদের সঙ্গে পার্টি বিছিয়ে থাকছেন। ভোলা সদর থেকে এসেছেন আব্দুল জলিল নামের একজন।
যুবদল ঢাকা দক্ষিণের আহ্বায়ক গোলাম মাওলা শাহীন এসব বিএনপিপন্থিদের দেখভালো করেন। কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেওয়া কর্মীদের খাবারের ব্যবস্থা করছেন। কার্যালয় নিচেই চলছে রান্নার আয়োজন।
অন্যদিকে, পিকাপভ্যান ভর্তি পানির বোতল নিয়ে মজুত করা হচ্ছে দলীয় কার্যালয়ে, সেখানে পল্টন যুবদল নেতা খলিল মৃধা প্রধান ফটকে দাঁড়িয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে কাজ করছেন।
বিএনপিপন্থিদের নয়াপল্টনে অবস্থানের বিষয়ে ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মতিউর রহমান বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ও তারেক রহমানের আহ্বানে সারাদেশে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলন নস্যাৎ করার শক্তি এ অবৈধ সরকারের নেই। দেশের মানুষ জেগে উঠেছে তাদের ভোটের অধিকার আন্দোলনের মাধ্যমে রাজপথে অর্জন করবে। সরকার ১০ তারিখের ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ বন্ধ করতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ্।
বিদেশিদের বিবৃতি বা স্যাংশনের (নিষেধাজ্ঞা) গুঞ্জন আন্দোলনে কী ধরনের প্রভাব পড়বে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার দেশে ও দেশের বাইরে সব জায়গা থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়েছে।
বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ বলেন, গত ১৬ বছর ধরে আন্দোলন করছে বিএনপি। এসময়ের মধ্যে প্রাণপ্রিয় নেত্রীকে জেলে দেখেছি। অসংখ্য সহযোদ্ধাদের গুম হতে দেখেছি, খুন হতে দেখেছি। আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আমরা এখন রণসজ্জায় সজ্জিত। আওয়ামী লীগ যদি দেশের মঙ্গল চায় তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনবে এবং পদত্যাগ করবে। এটা দেশের জন্য মঙ্গল এবং আওয়ামী লীগের জন্য সম্মানজনক হবে।
তিনি বলেন, কে কে বিবৃতি দিল, কে কয়টা স্যাংশন দিল এটা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। আমাদের মনোযোগ মাঠের আন্দোলনের দিকে। আমরা গত ১৬ বছর ধরে আন্দোলন করছি, আমাদের দাবিতে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আর বিদেশিরা যেসব ইস্যুতে কথা বলছেন সেগুলো তো আমরাই এ অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে বলে আসছি। সরকার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, তারা তো এগুলোই বলছে। সেটা তাদের ব্যাপার। আমাদের আন্দোলন যৌক্তিক পর্যায়ে চলে এসেছে, এ সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের দাবি পূরণ করা হবে।
এদিকে, নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং এর আশপাশের এলাকায় গত কদিন ধরেই অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জলকামান এনে রাখা হয়েছে।