বঙ্গভবনে প্রবেশের চেষ্টা, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ,  ২ জন গুলিবিদ্ধ

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা সেনাবাহিনীর
ডেস্ক রিপোর্ট
  ২২ অক্টোবর ২০২৪, ২৩:২৯

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের বাসভবন বঙ্গভবনের সামনের নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বাধা, লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের পর ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় আন্দোলনকারীরা। পরে আবারও তারা বঙ্গবভন ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান করে বিক্ষোভ করতে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরা চেষ্টা করছেন।

মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভকারীদের হটাতে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ভুয়া ভুয়া স্লোগান দেন। এতে দুই জন গুলিবিদ্ধ হয়

 

সরেজমিন দেখা যায়, রাষ্ট্রপতি চুপ্পুর পদত্যাগের দাবিতে রাত ৮টা ১৫ মিনিটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নারী সদস্য মাইকে ঘোষণা দেন। এরপরে ৩০০-৪০০ জন বঙ্গভবনের সামনের তারকাঁটার ব্যারিকেডে ধাক্কাধাক্কি করে। ব্যারিকেডের পেছনেই অবস্থান ছিল সেনাবাহিনীর সদস্যদের। ব্যারিকেড টেনে সরিয়ে ফেলেন আন্দোলনকারীরা। ৮টা ২২ মিনিটে আন্দোলনকারীদের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। এসময় পুলিশ সদস্যদের ধাওয়া দেয় আন্দোলনকারীরা। সেনাবাহিনীর সদস্যরা আন্দোলনকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। সেনাবাহিনীর সঙ্গেও আন্দোলনকারীদের ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা পুলিশ সদস্যদের বঙ্গভবনের ভেতরে পাঠিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা।

রাত সাড়ে ৯টার দিকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা মাইকিং করতে শুরু করেন। তারা আন্দোলনকারীদের মাইকিং করে সরে যেতে বলেন। এ সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন আন্দোলনকারীরা। পরে রাত ১০টার দিকে বিক্ষোভকারীরা আবারও বঙ্গবভনের প্রধান ফটকের সামনে আসার চেষ্টা করলে পুলিশের ধাওয়ার মুখে পরে তারা। সবশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এভাবেই চলতে থাকে।

বিক্ষোভকারী আসাদুজ্জান জানান, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণের দাবিতে বঙ্গভবনের সামনে আন্দোলনকারীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা লাঠিচার্জ করে। একপর্যায়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয়। পরে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ সময় বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত বিক্ষোভকারীদের মধ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে নেতা-কর্মীরা যোগ দেন।

এ ব্যাপারে রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। এরআগে মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) দুপুরের পর থেকে বঙ্গভবনের সামনের মোড়ে অবস্থান নিয়ে রাষ্ট্রপতির অপসারণ চেয়ে বিক্ষোভ করেন বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে আসা বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। এ ঘটনায় ওই এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, এপিবিএন ও র‌্যাব সদস্যরাও রয়েছে। আনা হয় এপিসি ও জলকামান।

এরআগে দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল শুরু করে বঙ্গভবনের দিকে যাত্রা শুরু করে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা কমিটি। তারা হাইকোর্ট মাজার মোড় এলাকায় পুলিশ তাদের বাধা দেয়। কিন্তু বাধা অতিক্রম করে বঙ্গভবন পর্যন্ত এগিয়ে যায় তারা। পরে তারা বঙ্গভবনের সামনের মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।
এদিকে, রাষ্ট্রপতির অপসারণ দাবিতে মঙ্গলবার বিকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণজমায়েত করে। সেখানে তারা সরকারের কাছে রাষ্ট্রপতির অপসারণ ও ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করাসহ নতুন করে ৫ দফা দাবি জানায়।
প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার তোপের মুখে গত ৫ আগস্ট পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি পালিয়ে যাওয়ার পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি।’ তবে সম্প্রতি মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমানের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি জানান, তিনি শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তার কাছে এ সংক্রান্ত কোনও দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র নেই। রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়তো সময় পাননি।’ এরপর থেকে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে নতুন করে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজসহ বিভিন্ন সংগঠনে নেতারা।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে বঙ্গভবনের সামনে পুলিশের বাধার মুখে দুই শিক্ষার্থীসহ চারজন আহত হয়েছেন। তাদের ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। 

আহতরা হলেন— শ্যামপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ বিশাল (২৩), কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরিফ খান (২৩), সংবাদমাধ্যম বার্তা২৪-এর মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার রাজু (২৫), এবং ভ্রাম্যমাণ দোকানি শফিকুল ইসলাম সেলিম (৪৫)।

মঙ্গলবার রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে এ ঘটনা ঘটে।

আহতদেরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসা মেহেদী হাসান বলেন, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে তারা বঙ্গভবনে ঢুকতে গেলে পুলিশ  সদস্যরা তাদের বাধা দেয় ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে। এসময় তারা আহত হন।

গুলিবিদ্ধ দুইজন হলেন ফয়সাল আহমেদ বিশাল (২৪) ও শফিকুল ইসলাম (৪৫)। আর সাউন্ড গ্রেনেডে আহত হন আরিফ (২০)। তাদের সবাইকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছে। 

ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মোঃ ফারুক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘বঙ্গভবনের সামনে থেকে ছররা গুলিতে আহত হয়ে দুইজন এবং সাউন্ড গ্রেনেডে আহত হয়ে একজনকে আনা হলে জরুরি বিভাগের তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে জানিয়েছি।’