আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি পুলিশের ওপর হামলা করেছে। হামলা হলে কি পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ললিপপ খাবে? পুলিশ চুপ করে থাকবে? আত্মরক্ষা তো তাদেরও করতে হবে।
শনিবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে সাভারের রেডিও কলোনি মাঠে সাভার-ধামরাই উপজেলা এবং আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিএনপি-জামায়েতের ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচারের প্রতিবাদে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, তারেক রহমানের অর্থ পাচারে টাকা ধরা পড়েছে সিঙ্গাপুরে। দেশে এসে এফবিআই সাক্ষ্য দিয়ে গেছে—সুইস ব্যাংকে টাকা, দেশে দেশে বিলাসবহুল মার্কেট। বিএনপি নয়াপল্টনে ১০ তারিখের সমাবেশের অনুমতি পায়নি। অনুমতি পাওয়ার আগেই কী করেছে তারা সেখানে, প্রস্তুতি নিয়েছে। পুলিশ তল্লাশি করে কী পেলো ১৬০ বস্তা চাল, মশারি। বিএনপি আগেও দেশের বিভিন্ন বিভাগে পিকনিক পার্টি, বনভোজন করছিল। ফখরুল সাহেব কোথা থেকে আসে এত টাকা?
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যেই বাংলাদেশে সরকারের বিকল্প সেন্টার হাওয়া ভবন, গাজীপুরে খোয়াব ভবন হয়েছে। আওয়ামী লীগের আহসানুল্লাহ মাস্টার, শাহ এ এম এস কিবরিয়া, মমতাজ উদ্দিনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেছে। রক্তের নদীর ধারা বইয়ে দিয়েছে বিএনপি। আপনারা কি সেই বাংলাদেশ চান?
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকে পল্টনে গেলেন না। হাফ ডিফিট হয়ে গেছে। ঢাকা আজ শেখ হাসিনার কর্মীদের দখলে।
তিনি বলেন, এখন তারা লবিস্ট নিয়োগ করেছে। কিছুদিন আগে র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ফাঁস হয়ে গেছে। ব্রিটিশ এক আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান আল জাজিরায় সাক্ষাৎকারে বলেছেন—আমি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রে র্যাব-পুলিশের ওপর নিষেধাজ্ঞার জন্য লবি করেছি। যুক্তরাষ্ট্র শুনেছে, যুক্তরাজ্য শোনেনি। স্বয়ং আল জাজিরায় এ কথা বলেছে।
জনসভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, অ্যাড. কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এছাড়াও জনসভায় ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য বেনজির আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ, সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা দৌলা, সাভার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র হাজী আব্দুল গনী, আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক হাসান তুহিন, ঢাকা জেলা উত্তর তাঁতীলীগের সভাপতি হাজী মোবারক হোসেন খোকন, সাভার উপজেলা তাঁতীলীগের সভাপতি মো. আবু সাঈদসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির এমপিদের পদত্যাগে সরকারের কিছু যায় আসে না: হানিফ
সংসদ থেকে বিএনপির সাত এমপির পদত্যাগের ঘোষণা রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, এতে সরকারের কিছু যায় আসে না।
তিনি বলেছেন, বিএনপি সমাবেশ করছে। শুনলাম তাদের সাতজন এমনি নাকি পদত্যাগ করবেন। পদত্যাগ করার গণতান্ত্রিক অধিকার তাদের আছে। তবে পদত্যাগ স্পিকারের কাছে করতে হয়, মাঠে ভাষণ দিয়ে হয় না। এগুলো বিএনপির রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজি। এতে সরকারের কিছু যায় আসে না।
শনিবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে সাভারের রেডিও কলোনি মাঠে সাভার-ধামরাই উপজেলা এবং আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
হানিফ বলেন, বিএনপি মিথ্যাবাদী, ভাওতাবাজির দল। জনগণের সঙ্গে ভাওতাবাজি করে, দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও ভাওতাবাজি করে। তাদের পরিকল্পনা ছিল দলের কর্মীদের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকায় এনে নাশকতা করে সরকারকে বিব্রত করে সরকার ফেলে দেবে। এ সরকার খালেদা জিয়ার সরকার নয়। শেখ হাসিনার সরকার। আওয়ামী লীগ সরকারকে ধাক্কা দিয়ে ফেলা যায় না। কারণ আওয়ামী লীগের শেকড় এ বাংলার মাটির অনেক গভীরে। এত গভীরে আছে যে, এই গাছকে বারবার ধাক্কা দিয়েও ফেলা যায়নি। যারা ধাক্কা দিতে এসেছে তাদের কপাল, মাথা ফাটে।
জনপ্রিয়তা যাচাই করার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশ নিয়ে জনপ্রিয়তা পরীক্ষা করুন। দেখুন জনগণ কার সঙ্গে আছে। জনগণ কী চায়? দেশের মানুষ উন্নয়ন, অগ্রগতি ও শান্তি চায়। উন্নয়ন, শান্তি দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
দেশের মানুষ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দেখতে চায় না। এতিমের টাকা আত্মসাৎ করা খালেদা জিয়া ও দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক সন্ত্রাসী তারেক রহমানকে দেখতে চায় না- বলেন তিনি।
হানিফ বলেন, আমি কয়েকদিন আগে সমাবেশে বলেছি, বিএনপি নেতারা তাদের কয়েকটা সমাবেশে কিছু লোকজন দেখে জোশে হুঁশ হারিয়ে ফেলেছে। হুঁশ হারিয়ে লাগামছাড়া কথা বলতো। এক শিশু বক্তা আছে রফিকুল ইসলাম মাদানি। এক ওয়াজে গিয়ে মাদরাসার কিছু ছেলেদের দেখে বললো সরকার মানি না, সংবিধান মানি, রাষ্ট্র মানি না। পরে পুলিশ যখন ধরে নিয়ে গেলো তখন পুলিশের হাত-পা ধরে বলে ভুল হয়ে গেছে। সামনে মানুষ দেখে বেহুঁশ হয়ে বলে ফেলেছি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপির অবস্থা কিছুটা ওরকম হয়ে ছিল। এমনও বললো ১০ তারিখের পর খালেদা জিয়ার কথায় দেশ চলবে। আমি বলেছিলাম, জোশে বেহুঁশ হলে পুলিশের হাত-পা ধরা লাগবে। এখন তো দেখছেন আপনারা। গত দুদিন ধরে পুলিশের হাত-পা ধরা শুরু হয়েছে।
দেশের মানুষকে বিএনপির মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে হানিফ বলেন, বিএনপির মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না। ২০৪১ সালে উন্নত দেশ গড়ার মহাপরিকল্পনা নিয়েছেন শেখ হাসিনা। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি তাহলে দেশকে উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এছাড়া সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।