নিউইয়র্কে মামদানির জয়ে অখুশি কেন মোদী সমর্থকরা?

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৬ জুলাই ২০২৫, ২৩:০৮

যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদে ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে জয়ের পর ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম রাজনীতিক জোহরান মামদানি আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছেন। দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত হিসেবে এই পদে তার অভাবনীয় অগ্রযাত্রা যেমন প্রশংসিত হচ্ছে, তেমনই তাকে ঘিরে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের হিন্দুত্ববাদী মহল এবং মোদি-সমর্থক প্রবাসীদের মধ্যে।
৩৩ বছর বয়সী মামদানির জন্ম উগান্ডায়। তার মা প্রখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক মীরা নায়ার। নিউইয়র্কের প্রথম দক্ষিণ এশীয় এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পথে অনেকদূর এগিয়ে গেছেন মামদানি। তবে প্রাইমারিতে তার জয়ের পরপরই হিন্দুত্ববাদী মহলে তাকে ঘিরে শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়।


মোদী-বিরোধী অবস্থানের কারণে আক্রমণের লক্ষ্য

মামদানি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে হওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বরাবরই সরব। ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গায় মোদীর ভূমিকা এবং বাবরি মসজিদের ধ্বংসস্থলে রামমন্দির নির্মাণ—এসব বিষয়ে তার অবস্থান তাকে হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর চোখে ‘অপ্রিয়’ করে তুলেছে।
তিনি মোদিকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ বলেও উল্লেখ করেছেন এবং স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, মোদী নিউইয়র্ক সফরে এলে তিনি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন না।
এই অবস্থানের জেরেই ভারতের অভিনেত্রী ও বিজেপি নেত্রী কঙ্গনা রানাউত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মামদানিকে ‘পাকিস্তানি সুরে কথা বলা’ এবং ‘হিন্দুধর্ম নিশ্চিহ্ন করতে উদ্যত’ বলে আখ্যায়িত করেন।

প্রবাসী হিন্দুদের মধ্যেও বিরোধিতা
মামদানির বিরুদ্ধে ক্ষোভ শুধু ভারতে সীমাবদ্ধ থাকেনি। নিউ জার্সিভিত্তিক একটি গোষ্ঠী ‘ইন্ডিয়ান আমেরিকানস ফর কুওমো’ নিউইয়র্ক সিটির আকাশে ব্যানার উড়িয়েছে—‘সেভ নিউইয়র্ক সিটি ফ্রম গ্লোবাল ইন্তিফাদা, রিজেক্ট মামদানি’।
ভারতের প্রভাবশালী বার্তা সংস্থা আজতাক মামদানির বিরুদ্ধে ‘ভারতবিরোধী’ সংগঠনের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ তুলেছে। হিজাব পরিহিত নারীর ছবি ব্যবহার করে তারা নিউইয়র্কে ‘মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির’ও ইঙ্গিত দেয়।

মুসলিম পরিচয় এবং বর্ণভিত্তিক রাজনীতি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মামদানি শুধু একজন মুসলিম রাজনীতিক হিসেবে নয়, বরং দক্ষিণ এশীয় মুসলিম হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার রাজনীতিতে দৃশ্যমান হওয়ার কারণে অনেকের হীনমন্যতার শিকার হচ্ছেন।
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অরবিন্দ রাজগোপাল বলেন, মামদানি উর্দু, হিন্দি, স্প্যানিশ এমনকি খানিকটা বাংলা জানেন। এমন গভীরতা ও আন্তঃসম্পর্ক একজন প্রার্থীর জন্য বিরল।

প্রাইমারিতে বড় জয়, সামনে চ্যালেঞ্জ
গত ১ জুলাই প্রকাশিত চূড়ান্ত প্রাইমারি ফলাফলে দেখা যায়, মামদানি অ্যান্ড্রু কুওমোকে ৫৬ শতাংশ বনাম ৪৪ শতাংশ ভোটে পরাজিত করেন। তিনি জ্যাকসন হাইটস, পার্কচেস্টার, লিটল বাংলাদেশের মতো দক্ষিণ এশীয় অধ্যুষিত এলাকায় বড় ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন।
তবে সামনে অপেক্ষা করছে আরও বড় লড়াই—নভেম্বরে সাধারণ নির্বাচন, যেখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস।
তীব্র ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজনের আবহে মামদানির মতো একজন মুসলিম, দক্ষিণ এশীয়, প্রগতিশীল প্রার্থী কতটা পথ এগোতে পারেন, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

সূত্র: আল-জাজিরা