ফের উপবৃত্তি পাবে এবতেদায়ী শিক্ষার্থীরা

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২২ মে ২০২৫, ১১:১০

এবতেদায়ী মাদ্রাসার শিশু শিক্ষার্থীরা আবারও পাবে উপবৃত্তি। সাড়ে পাঁচ বছর আগে ‘হঠাৎ’ বন্ধ হয়ে যাওয়া উপবৃত্তি চালু করতে যাচ্ছে সরকার।
এবতেদায়ী মাদ্রাসার প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাসিক ১৫০ টাকা হারে বছরে ১৮০০ টাকা উপবৃত্তি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
আগামী জুলাই মাস থেকেই শিক্ষার্থীদের হাতে উপবৃত্তির টাকা পৌঁছানোর পরিকল্পনার কথা বলছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মত মাদ্রাসা পর্যায়ে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির অর্থাৎ এবতেদায়ী পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ২০২০ সালে বন্ধ হয়ে যায়।
আলিয়া মাদ্রাসা ধারার যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হয়, সেগুলোই এবতেদায়ী মাদ্রাসা। এ মাদ্রাসাগুলো প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এনসিটিবি প্রণীত শিক্ষাক্রম মেনে পাঠদান করে।
প্রথম ধাপে সরকারি অনুদান পাওয়া ১৫১৯ এবতেদায়ী মাদ্রাসার ১ লাখ ৯৪ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে আবারও উপবৃত্তির আওতায় আনা হচ্ছে। তাদের উপবৃত্তি দিতে বছরে ৩৫ কোটি টাকার বেশি খরচ হবে।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকেই শিক্ষার্থীদের হাতে উপবৃত্তির টাকা পৌঁছানোর পরিকল্পনা থাকলেও কারিগরি প্রস্তুতিতে অনেকটা সময় লেগে গেছে; তাই জুলাই মাস থেকে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা পাঠাতে কাজ চলছে বলে মঙ্গলবার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বেনজীর আহমেদ।
“এবতেদায়ী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির আওতায় আনতে তথ্য যাচাই চলছে। আমাদের লাইভ সার্ভারও প্রস্তুত। আমাদের কাছে অনুদান পাওয়া ১৫৯১টি এবতেদায়ী মাদ্রাসার তথ্য আছে। সেগুলো আমরা উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের কাছে পাঠিয়ে বলেছি যাচাই করতে। সে তথ্যগুলো পেলে আমরা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সফটওয়্যারে শিক্ষার্থীদের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করতে বলব।”
তার ভাষ্য, ব্যানবেইস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই ১৫১৯টি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ১ লাখ ৯৪ হাজারের বেশি। এ মাদ্রাসাগুলোর প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাথাপছিু উপবৃত্তি বাবদ দেওয়া হবে মাসে ১৫০ টাকা। প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরাও একই হারে উপবৃত্তি পায়।
“প্রাথমিকে প্রাকপ্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা মাসে ৫০ টাকা উপবৃত্তি পেলেও এবতেদায়ী পর্যায়ে প্রাক-প্রাথমিক এখনও চালু নেই,” বলেন বেনজীর আহমেদ।
সাড়ে পাঁচ বছরের অপেক্ষার অবসান
আগে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে উপবৃত্তি পেত এবতেদায়ী পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা।

স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক ঐক্যজোট ও বাংলাদেশ স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদের মহাসচিব শামসুল আলমের ভাষ্য, ২০২০ সালের শুরু থেকে হঠাৎ করেই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবতেদায়ী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়া বন্ধ করে দেয়।
“কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে উপবৃত্তি বন্ধ হয়ে গেলে আমরা বিভিন্ন অফিসে ধরনা দিয়েছি, কিন্তু উপবৃত্তি চালু হয়নি। এবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়ার সরকারি বরাদ্দ থাকলেও আমরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছি।”

ফের উপবৃত্তি চালুর খবরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা খুশি জানিয়ে এ শিক্ষক নেতা বলেন, “দ্রুতই যেন শিক্ষার্থীদের হাতে উপবৃত্তির টাকা পৌঁছায়, সেটাই চাওয়া।”
এবতেদায়ী শিক্ষার্থীদের জন্য মিড-ডে মিল চালুরও দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “এ দুই উদ্যোগ এবতেদায়ী শিক্ষার্থীদের জন্য বাস্তবায়িত হলে তা শিক্ষা প্রসারে সহায়ক হবে।”
ফের উপবৃত্তি চালু হওয়ার খবরে উচ্ছ্বসিত ঢাকার দোহারের মুকসেদপুর জামিয়া ইসলামিয়া স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসার প্রধান হাফেজ মো. আব্দুল হান্নান।
তিনি বলেন, “আগে আমরা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে উপবৃত্তি পেলেও সেটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বিগত সরকার এবতেদায়ী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি চালুর কথা বললেও তা হয়নি। এখন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের তত্ত্বাবধানে উপবৃত্তি চালু হচ্ছে, এটা নিঃসন্দেহে ভালো খবর।”
যাচাই হচ্ছে তথ্য
গত ১৯ মে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের পাঠানো এক চিঠিতে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর বলেছে, অনুদানভুক্ত ১৫১৯টি স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়ার প্রস্তাবে কর্তৃপক্ষের নীতিগত অনুমোদন আছে।
ওই চিঠিতে উপবৃত্তির লাইভ সার্ভারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের অ্যাকাউন্ট সচল করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে কর্মকর্তাদের নিজ নিজ অধিক্ষেত্রের মাদ্রাসাগুলোর তথ্য লাইভ সার্ভারে সংশোধন করতে বলা হয়েছে।
ওই সার্ভারে মাদ্রাসাগুলোর সুস্পষ্ট তথ্য আসার পর এবতেদায়ী প্রধানদের সার্ভারে শিক্ষার্থীদের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হবে। তারপর যাচাই-বাছাই শেষে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির জন্য নির্বাচন করা হবে।
বছরে ৩৫ কোটি টাকা যাবে শিক্ষার্থীদের অ্যাকাউন্টে
১ লাখ ৯৪ হাজার শিক্ষার্থীর উপবৃত্তিতে মাসে ২ কোটি ৯১ লাখ টাকা ও বছরে ৩৫ কোটি টাকা খরচ হবে বলে তথ্য দিয়েছেন সহকারী পরিচালক বেনজীর আহমেদ।
“মাধ্যমিক পর্যায়ে যেমন চার ধাপে দেওয়া হয়, একইভাবে কয়েকটি ধাপে কয়েকমাসের উপবৃত্তির টাকা একবারে শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে।”
উপবৃত্তির জন্য নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে পাঠানোর পরিকল্পনা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের তথ্য যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত হয়েই টাকা পাঠানো হবে।
বরাদ্দ ফেরত যাওয়ার শঙ্কা
অনুদানের ১৫১৯টি এবতেদায়ী মাদ্রাসার ১ লাখ ১৯ হাজার শিক্ষার্থীকে গত জানুয়ারি মাস থেকেই উপবৃত্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল, বরাদ্দও ছিল ৫০ কোটি টাকা।
তবে লাইভ সার্ভার প্রস্তুত করতে সময় লেগে যাওয়ায় সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা যায়নি বলে জানান সহকারী পরিচালক বেনজীর।
অর্থবছরের শেষ প্রান্তে এসে শিক্ষার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ায় উপবৃত্তির জন্য বরাদ্দ হওয়া টাকা ফেরত যাওয়ার শঙ্কার কথাও বললেন এ কর্মকর্তা।
“আমরা চাচ্ছি গত জানুয়ারি মাস থেকেই শিক্ষার্থীরা যেন টাকা পায়। আমরা তথ্যগুলো নিচ্ছি। যাচাই-বাছাই শেষে জুনের মধ্যে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করা গেলে আমরা জানুয়ারি মাসের টাকা থেকেই শিক্ষার্থী দেব। এ ক্ষেত্রে শুরুতেই আগের ছয় মাসের টাকা পাবে শিক্ষার্থীরা।”
তবে শিক্ষার্থী নির্বাচনে সময় লাগলে বরাদ্দের টাকা ফেরত যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মহোদয়কে জানাব, উনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই উপবৃত্তি বিতরণ করা হবে।”