একটি গোষ্ঠীকে আওয়ামী লীগের ‘বি-টিম’ বলে অভিহিত করেছেন চলচ্চিত্রকার মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তার দাবি, তরুণ প্রজন্মের কাছে ওই গোষ্ঠী অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। বিপ্লবের পর সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার জন্য সময় দেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন এই নির্মাতা।
গতকাল রাতে ফেসবুকে ফারুকী লিখেছেন, ‘আগেও অনেকবার লিখেছিলাম যে, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলন “সময়” থেকে পুরাপুরি বিচ্ছিন্ন। আওয়ামী লীগের বি-টিম হিসাবে খেলতে খেলতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন এবং শর্ট ফিল্ম ফোরাম নতুন প্রজন্মের কাছে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। একবার ভাবেন, হিটলারের আমলে কোনো শিল্পী হিটলারের মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রতিবাদ তো দূরের কথা, তার গাছের গোড়ায় পানি ঢাললে তাকে ইতিহাস কী হিসাবে বিচার করতো?’
আওয়ামী আমলে ওই তিন সাংস্কৃতিক সংগঠনের ভূমিকা প্রসঙ্গে ফারুকী লিখেছেন, ‘আপনি আওয়ামী লীগ সমর্থক হতে পারেন, বিএনপি সমর্থক হতে পারেন, কিন্তু শিল্পী হলে কোনো অবস্থাতেই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গণহত্যা, গুমের মতো অপরাধের সাথে জড়িত ফ্যাসিস্টের পক্ষে কথা বলতে পারেন না, ফ্যাসিজমের পক্ষে সম্মতি উৎপাদন করতে পারেন না। এইবার আপনারা গত ষোলো বছর এই তিনটা সংগঠনের সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক ভূমিকা কী ছিল সেটা ভেবে দেখেন।’
শিল্পকলা একাডেমিতে নাটক বন্ধ করা ও গতকাল প্রতিবাদ সমাবেশে ডিম ছুঁড়ে মারার ঘটনার প্রেক্ষিতে ফারুকী লিখেছেন, ‘তার মানে কি এইসব ফুট সোলজারদের আঘাত করতে হবে? বিপ্লবের পক্ষের ভাই-বোনদের অসন্তুষ্টির আশংকা মাথায় নিয়েও বলবো, আমি ব্যক্তিগতভাবে এর বিরুদ্ধে। পাশাপাশি এটাও মাথায় রাখতে হবে, রক্তের দাগ এখনও শুকায়নাই। খুনী-লুটপাটকারীর বিচার শুরু হয়নাই। কিন্তু নানা জায়গায় উস্কানি দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ডিস্ট্যাবিলাইজ করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আপনারা খুনির ফোনালাপ শোনেন। দেখেন সে অনুতপ্ত, নাকি আরো খুন করার উস্কানি দিচ্ছে? বিপ্লবের পরে কুলিং পিরিয়ডটা পার হতে দিতে হয়। নাহলে এই অবস্থায় আমি লিবারাল ক্রিটিকের স্পেস কীভাবে আশা করবো?’
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নির্মিত সর্বশেষ সিনেমা ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ মুক্তি পায় গত বছর। তাতে প্রথমবারের মতো অভিনয়ও করেন তিনি। ২০১৬ সালের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় হামলার ঘটনার ওপর ভিত্তি করে তার বানানো সিনেমা ‘শনিবার বিকেল’ দেশে সেন্সর ছাড়পত্র পায়নি। দীর্ঘ বিরতির পর সনি লিভ নামের একটি বিদেশি ওটিটিতে মুক্তি পায় ছবিটি, যা এ দেশের মানুষের দেখার সুযোগ ছিল না। এই নির্মাতার বানানো সিরিজ ‘৪২০’ দেশের রাজনৈতিক অবস্থাকে নগ্ন করে তুলে ধরেছিল। সে কারণে মাঝপথে সিরিজটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।