বলিউড সিনেমায় ভারতীয় সেনাবাহিনী সুপার হিরো। একা একজন জাওয়ানাই পরাস্ত করেন শত শত শত্রু সেনা। আর সিনেমা শেষে উড়ে যায় ভারতের তে-রঙা পতাকা। সেই সঙ্গে গগন বিদারী উল্লাসে প্রকম্পিত হয় প্রেক্ষাগৃহ। তবে এ ধরনের সিনেমাগুলো কাকতালীয়ভাবে মুক্তি পায় নির্বাচনের ঠিক আগে। উদ্দেশ্য, ভারতীয়দের উগ্র জাতীয়তাবাদী আদর্শে উদ্বুদ্ধ করে বিজেপির ভোট ব্যাংক বাড়ানো।
উড়ি, শেরশাহ, গুঞ্জন, এলওসি কারগিল, দ্য ঘাজি অ্যাটাকসহ এ ধরনের প্রতিটি সিনেমাই নির্বাচনের আগে আগুনের উত্তাপ ছড়িয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো ঠিক তার উল্টো। বলিউডে ২০ সেকেন্ডে শক্র শেষ হয়, আর বাস্তবে সেনা আসে ২০ মিনিট পরে। যার নিকটতম উদাহরণ পহেলগাঁওয়ে হামলা।
২০১৯ সালের সেই ঘটনা ভুলে যায়নি ভারত। ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বর্তমান পাকিস্তানের আকাশ সীমায় প্রবেশ করেছিলেন সিনেমার মত হলে হয়ত তিনি শত্রু শত শত ঘাঁটি ধ্বংস করে ফিরতেন। কিন্তু বাস্তব তার বিমান ভূপাতিত হলো। ধরা পড়লেন পাকিস্তানি সেনাদের হাতে।
অথচ ২০১৯ সালে এ ঘটনায় নির্মিত বলিউড সিনেমা ‘উরি-দ্য সার্জিকাল স্ট্রাইক’ বক্স অফিসে সুপারহিট ছিল। এই সিনেমাটিই ভিকি কৌশলের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। এছাড়াও যুদ্ধের পরিস্থিতির ওপর তৈরি অনেক সিনেমা রয়েছে, যা জনগণের থেকে প্রচুর ভালোবাসাও পেয়েছে।
এবারও সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলা এই উত্তেজনা ও অপরেশন সিঁদুর নিয়ে সিনেমা বানানোর ধুম পড়ে গেছে।
তবে ‘অপারেশন সিঁদুর’ সিনেমার পোস্টার আসতেই ব্যাপকভাবে ক্ষেপেছেন ভারতীয়রা। যেখানে সীমান্তে সেনা জওয়ানরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লড়াই করছেন, সেখানে সিনেমার পোস্টার আসাকে ভালো চোখে নিতে পারছে না কেউই।
বিতর্কে ‘অপারেশন সিঁদুর’ সিনেমার প্রথম পোস্টার
খবর আগেই ছিল যে, একজন-দু’জন নয়, অনেক সিনেমা পরিচালকই তাদের সিনেমার জন্য ‘Operation Sindoor’ টাইটেল রেজিস্ট্রার করার আবেদন করেছেন। কিন্তু এই টাইটেলটি আসলে কে পাবে তার উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি। এখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলা যুদ্ধের মধ্যে পরিচালক উত্তম মাহেশ্বরী ও নিতিন কুমার গুপ্ত এই বিষয়টি নিয়ে সিনেমা তৈরির ঘোষণা করে ফেলেছেন। এই সিনেমার প্রযোজনা করবেন নিকি ভিকি ভগনানি ফিল্মস ও দ্য কনটেন্ট ইঞ্জিনিয়ার। পোস্টার প্রকাশ করে নির্মাতারা এই বিষয়টি আনেন সামনে
পোস্টারে যুদ্ধের পরিস্থিতির ব্যাকগ্রাউন্ডের সামনে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক জওয়ানকে হাতে বন্দুক ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। পোস্টারে সিনেমার টাইটেল ‘অপরেশন সিঁদুর’-এর আগে ‘ভারত মাতা কি জয়’ লেখা হয়েছে। পোস্টারটি পছন্দ হবে কি না, সেটা তো দূরের কথা, এই মুহূর্তে নির্মাতাদের এই সিনেমার ঘোষণাই মেনে নিতে পারছে না কেউ।
প্রায় সকলেই, নির্মাতাদের তীব্র নিন্দা করেছেন। একজন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী পোস্টারের কমেন্ট সেকশনে লিখেছেন, ‘বর্তমানে চলা যুদ্ধ পরিস্থিতিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা, তাও আবার AI দিয়ে তৈরি একটি পোস্টারের মাধ্যমে। এটা নির্লজ্জতার সব সীমা অতিক্রম করে গেছে।’
একজন কমেন্ট করেছেন, ‘নিজেকে এবং নিজের দেশকে হাস্যকর করে তুলবেন না।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘আপনাদের এবং পুরো বলিউডের লজ্জা হওয়া উচিত সবকিছুকে টাকা ছাপানোর রাস্তা বানানোর জন্য। অপরেশন সিঁদুর এখনো শেষও হয়নি, আর আপনারা এখনই এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতির ফায়দা তোলার চেষ্টা করছেন।’