নতুন বছরে আলোচিত সিনেমা হিসেবে উঠে এসেছে এরোটিক থ্রিলার ‘বেবিগার্ল’র নাম। ২৫ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়ে ছবিটি বিশ্বের নানাপ্রান্তে দর্শকদের মধ্যে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। ছবিটির গল্প তৈরি করেছেন ও পরিচালনা করেছেন হালিনা রেইন। তিনি ৩০ বছর আগের সুপারহিট ‘বেসিক ইনস্টিংক্ট’ সিনেমার স্মৃতিকেই যেন মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন এই সিনেমা দিয়ে। কিংবা সময়ের স্রোতে সমাজ ও ভাবনাগুলো কতোটা বদলেছে সেটাও বলার চেষ্টা করেছেন। সিনেমাটি যৌনতা, আনন্দ এবং আত্ম-অনুসন্ধানকে গভীরভাবে অন্বেষণ করার জন্য সাম্প্রতিক সময়ে অন্যতম স্মার্ট সিনেমা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি সেই সিনেমাগুলোর মধ্যে একটি যা দর্শকদের সহানুভূতি এবং অনুভূতির সঙ্গে সম্পর্কের জটিলতা এবং আত্ম-অন্বেষণ সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিকোণ প্রদান করে। নানা কারণে ছবিটি মুক্তির পর বেশ উন্মাদনার জন্ম দিয়েছে।
সমালোচকদের প্রশংসা
সিনেমাটি সমালোচকদের কাছ থেকে ভালো রেটিং পেয়েছে। সমালোচকরা ছবির অভিনেত্রী নিকোল কিডম্যানের অভিনয়ের দারুণ প্রশংসা করেছেন। রটেন টমেটোজে প্রশংসিত হয়ে সিনেমাটির রেটিং এসেছে ৭৮%। আইএমবিডিতে এটি রেটিং পেয়েছে ১০ এর মধ্যে ৬। যা বাড়ছেই ক্রমশ। সিনেমাটি ‘বি’ রেটিং পেয়েছে সিনেমাস্কোর থেকে।
উৎসবে বাজিমাত
এটি গত বছর ৮১তম ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রিমিয়ার হয়। নিকোল কিডম্যান ভলপি কাপ পুরস্কার পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে। এছাড়াও সিনেমাটি ২০২৪ সালের টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও প্রিমিয়ার হয় এবং ন্যাশনাল বোর্ড অফ রিভিউয়ে ২০২৪ সালের সেরা দশ সিনেমার মধ্যে জায়গা করে নেয়। সেইসঙ্গে কিডম্যানকে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার দেয়া হয়।
বক্স অফিস সংগ্রাম
সিনেমাটি তুলনামূলক বেশ কম হলে প্রদর্শিত হচ্ছে। সে তুলনায় অনেক ভালো সাড়া ফেলেছে বক্স অফিসে। নিকোল কিডম্যানের সিনেমাটি দ্বিতীয় সপ্তাহান্তে ২,১৬৪টি সিনেমা হলে ৪.৫ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এই আয় প্রথম সপ্তাহের সমান। অর্থাৎ ছবিটি দর্শক হারায়নি বরং একইতালে দর্শক ধরে রাখতে পারছে। ধারণা করা হচ্ছে সিনেমাটি সামনে আরও দর্শক পাবে।
জীবনবোধের গল্প ও অসাধারণ নিকোল কিডম্যান
সিনেমার পর্দায় বরাবরই অনিন্দ্য অভিনেত্রী নিকোল কিডম্যাান। অনেকদিন পর তিনি ফিরে এসেছেন নতুন চরিত্র নিয়ে। এ চরিত্রে নিজেকে উজার করে দিয়েছেন তিনি। দাগ কেটেছেন ভক্তদের মনে। নিকোল কিডম্যান ছবিতে রোমি চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যিনি একটি সফল কোম্পানির সিইও। তিনি তার স্বামী জ্যাকব (অ্যান্টোনিও বান্দেরাস) এবং দুই কিশোরী মেয়ের সঙ্গে সুখী জীবনযাপন করেন।
নিকোল কিডম্যানের বেবিগার্ল নিয়ে কেন এত উন্মাদনা
রোমির জীবন পাল্টে যায় যখন তিনি স্যামুয়েল নামক এক নতুন ইন্টার্নের সঙ্গে পরিচিত হন। এই চরিত্রে হ্যারিস ডিকিনসন অভিনয় করেছেন। স্যামুয়েল কাজ করতে এসে রোমির জীবনে প্রভাব ফেলতে শুরু করেন। রোমি বুঝতে পারেন এ তরুণ ইন্টার্নের কাছ থেকে তিনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। স্যামুয়েলের ব্যক্তিত্ব বা নৈকট্যলাভের চিন্তা তাকে উত্তেজিত করে রাখে। সিনেমাটি মূলত বয়সের পার্থক্য এবং লিঙ্গভেদে সম্পর্কের বিপরীত ভাবনাগুলোর দিকে ফোকাস করেছে। নিকোল কিডম্যান সাধারণত এমন চরিত্রে দারুণ অভিনয় করেন যা দ্বিধা দ্বন্দ্ব বা চারিত্রিক বুদ্ধিমত্তাকে ফোকাস করে। এ ছবিতেও তেমনই অনবদ্য ছিলেন নিকোল। তবে ছবিতে তার লুক-পোশাক একটু বেশি সাদামাটা বলে দাবি করেছেন অনেকে। ছবির গল্প অনুযায়ী উত্তেজনা ফুটিয়ে তোলার মতো লুক আসেনি নিকোল কিডম্যানের চরিত্রে।
এরোটিক থ্রিলারের ঐতিহ্যকে নতুনভাবে উপস্থাপন
বেবিগার্ল সিনেমাটি এরোটিক থ্রিলারের ঐতিহ্যকে ভেঙে নতুনভাবে শারীরিক সম্পর্কে আবিষ্কারের চেষ্টা করেছে। এর গল্পে যৌনতার বিভিন্ন দিক, আবেগ এবং সম্পর্কের জটিলতা একেবারে নতুন ও স্বতন্ত্রভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ছবিতে রোমান্টিক দৃশ্যগুলো দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
ফ্যান্টাসি
এই সিনেমাটি একটি ফ্যান্টাসিও বটে। যা দেখায় কীভাবে প্রাপ্তবয়স্করা তাদের জটিল আবেগ এবং শারীরিক ইচ্ছাগুলো মোকাবিলা করতে পারে। সিনেমার প্লটটি সেই বাস্তবতা এবং কল্পনা একত্রিত করে যা প্রতিটি চরিত্রের মনের মধ্যে লুকানো আবেগ খেলা করে।