কি আছে কানে স্বর্ণপামজয়ী সিনেমায়?

বিনোদন ডেস্ক
  ২৫ মে ২০২৫, ২৩:০৭

ইরানি নির্মাতা জাফর পানাহির সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট’ এবারের ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘স্বর্ণপাম’ জিতে নিয়েছে। এই সিনেমাটি ইরানি সমাজে নিপীড়ন, রাজনৈতিক বন্দিত্ব এবং ন্যায়বিচারের প্রশ্নকে কেন্দ্র করে নির্মিত একটি প্রতিশোধমূলক থ্রিলার।
চলুন, ভ্যারাইটি ও আলজাজিরা অবলম্বনে জেনে নেওয়া যাক সিনেমাটি সম্পর্কে-

গল্পে যা আছে
সিনেমার শুরুতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি তার গর্ভবতী স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন। একটি কুকুরকে চাপা দিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। গাড়ির ক্ষতি মেরামতের জন্য তিনি একটি গ্যারেজে যান, যেখানে মেকানিক ভাহিদ তার পা খোঁড়া দেখে সন্দেহ করেন যে এই ব্যক্তি সেই নির্যাতক, যিনি তাকে কারাগারে নির্যাতন করেছিলেন। ভাহিদ তাকে অপহরণ করে এবং তার পরিচয় নিশ্চিত করতে আরও কয়েকজন প্রাক্তন বন্দিকে ডেকে আনেন। তারা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করেন, এই ব্যক্তি তাদের নির্যাতক কিনা এবং তাকে শাস্তি দেওয়া উচিত হবে কিনা।

থিম ও বার্তা
সিনেমাটি প্রতিশোধ, ন্যায়বিচার এবং ক্ষমার জটিল প্রশ্নগুলোকে কেন্দ্র করে নির্মিত। এটি দেখায় কিভাবে দীর্ঘদিনের নির্যাতন ও অবিচার মানুষের মনে প্রতিশোধের আগুন জ্বালিয়ে দেয়, এবং সেই আগুন কিভাবে ন্যায়বিচারের সীমারেখা অতিক্রম করতে পারে। পানাহি তার নিজস্ব অভিজ্ঞতা- কারাবাস, গৃহবন্দিত্ব এবং চলচ্চিত্র নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন।

নির্মাণ প্রেক্ষাপট
জাফর পানাহি ইরানে সরকারি অনুমতি ছাড়াই এই সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন, যা তার সাহসী প্রতিরোধের প্রতীক। তিনি অতীতে গৃহবন্দিত্বে থাকাকালীন কেকের ভেতরে পেনড্রাইভে করে তার সিনেমা আন্তর্জাতিক উৎসবে পাঠিয়েছেন। এই সিনেমাটিও তার সেই প্রতিরোধের ধারাবাহিকতা।

কান উৎসবে প্রতিক্রিয়া
‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট’ কান উৎসবে প্রদর্শিত হওয়ার পর দর্শকরা দাঁড়িয়ে ১০ মিনিট ধরে করতালি দিয়েছেন। পানাহি তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমি এখানে উপস্থিত হতে পেরে আনন্দিত, কিন্তু ইরানে এখনও অনেক শিল্পী কারাবন্দি। আমি কিভাবে আনন্দিত হতে পারি, যখন তারা এখনও বন্দি?’
এই সিনেমাটি শুধু একটি চলচ্চিত্র নয়, এটি একটি প্রতিবাদ, একটি প্রতিরোধ, এবং একটি সাহসী কণ্ঠস্বর। জাফর পানাহি তার কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন, শিল্প কখনও থেমে থাকে না, এটি সবসময় সত্যের পক্ষে কথা বলে।