যেন অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে! চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন আসবে আর নানা ঘটনায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠবে; চলবে স্বচ্ছ পানি ঘোলা করে মৎস্য শিকারের বিপুল এন্তেজাম! তবে সমালোচনার বিচারে শিল্পীদের অতীতের যেকোনও নির্বাচনকে হার মানিয়েছে শেষ আয়োজনটি। সেটির মেয়াদও প্রায় শেষ প্রান্তে।
ঘনিয়ে এসেছে সংগঠনটির ২০২৪-২৬ মেয়াদের নির্বাচন। সেটাকে ঘিরে এরইমধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে ঢালিউড পাড়ায়। বিভিন্ন তারকা সদস্যের মন্তব্যের পাশাপাশি আলোচনার আগুনে ঘি ঢেলেছে বনভোজন করে জায়েদ খানের সদস্যপদ বাতিলের ইস্যু।
গেলো নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন চিত্রনায়িকা নিপুণ ও চিত্রনায়ক জায়েদ খান। এই পদে কে বিজয়ী, যেটা রীতিমতো কোশ্চেন অব কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছিল! এই দোলাচলে কেটেছে দুই বছর। এবারও একই পদে প্রার্থী হচ্ছেন নিপুণ। কিন্তু জায়েদ পড়েছেন বিপাকে। কারণ সম্প্রতি তার সদস্যপদ বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। ফলে নির্বাচন তো দূর, তার ভোট দেওয়াও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এদিকে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে ভোটের আগে আগে হটিয়ে দিতে সক্ষম হলেও নিপুণ নিজেই পড়ে আছেন অথৈ সাগরে। কারণ গেলো আসরের সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চনকে এবার আর পাশে পাচ্ছেন না তিনি। ইতোপূর্বে কাঞ্চন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি নির্বাচন করবেন না। কেন? এর উত্তরে আক্ষেপে ভরা কিছু কথা শুনিয়েছেন কিংবদন্তি এই নায়ক। শিল্পী সমিতির বনভোজনে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনের পর থেকেই সমিতির একটা পদ (জায়েদ-নিপুণ) নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা কত কিছু করেছেন। কিন্তু শিল্পী সমিতি ও শিল্পীদের স্বার্থ তো আলাদা জিনিস। এ বিষয়টাই কেউ বুঝতে চাইলো না। আপনারা শিল্পীদের স্বার্থ কী করে ভুলে যান? যেখানে ইলিয়াস কাঞ্চন সভাপতি, সেখানে কাঞ্চনের পাশে আপনারা দাঁড়ান না। এই দুঃখটা নিয়ে সমিতি থেকে বিদায় নিচ্ছি। আজকে আমাকে যদি অসম্মান করেন, তাহলে সেই অসম্মান কিন্তু আমার একার নয়। সেই অসম্মান পুরো শিল্পী সমাজের, চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির।’
কাঞ্চন সরে যাওয়ার কারণে নতুন সভাপতির খোঁজে মন দিয়েছেন নিপুণ। দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বটে। কিন্তু ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। জানা গেছে, প্রথমে শাকিব খানকে কয়েক দফা প্রস্তাব পাঠিয়েছেন এই নায়িকা। কিন্তু অনেক দিন ধরেই সমিতি নিয়ে আগ্রহী নন ঢালিউড নবাব। তাই নিপুণকে ফিরিয়ে দিয়েছেন অকাতরে।
এরপর নিপুণ হাজির হন অনন্ত জলিলের দরবারে। একা নন, সঙ্গে প্রযোজক মোহাম্মদ ইকবাল, খোরশেদ আলম খসরুসহ ইন্ডাস্ট্রির কয়েকজনকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সবাই মিলে অনন্তকে প্রস্তাবটি দিয়েছিলেন বটে, কিন্তু মেলেনি গ্রিন সিগন্যাল। অগত্যা নিপুণের অথৈ দরিয়ায় সাঁতার কাটার ইতি ঘটেনি।
সোমবার (৪ মার্চ) সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নির্বাচন না করার প্রসঙ্গে অনন্ত জলিল বললেন, ‘আমার সমস্যা হলো সময়। চলচ্চিত্রকে ভালোবাসি, সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রয়েছে, সবার বিপদে আমি পাশে থাকবো। কিন্তু নির্বাচন করার মতো সময় আমার হাতে নেই।’
এবারের নির্বাচনে প্রধান কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন খোরশেদ আলম খসরু। ফলে একটি প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তা হলো, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনার কেন এক প্রার্থীর হয়ে সভাপতি খোঁজার মিশনে নামবেন? বাংলা ট্রিবিউনকে জবাব দিলেন খসরু। তার ভাষ্য, ‘আসলে এই ঘটনা অনেক আগের। তখনও আমি নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পাইনি। ফলে এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। এখন আমি দায়িত্বপ্রাপ্ত। সুতরাং নিরপেক্ষ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।’
এদিকে শাকিব-অনন্তের পর নিপুণ নাকি অভিনেতা অমিত হাসানের সঙ্গেও আলাপ করেছেন। তবে কি তিনিই হবেন নিপুণের সভাপতি সঙ্গী? এ প্রশ্নের বিপরীতে অমিত হাসানের জবাব, ‘নির্বাচন করার পরিকল্পনা আছে। তবে কোন পদে করবো, সেটা এখনই বলতে পারছি না। তবে আমি নিপুণের সঙ্গেই আছি। আমার বিশ্বাস আছে, নির্বাচনে দাঁড়ালে অবশ্যই শিল্পীদের ভালোবাসা পাবো।’
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে মঙ্গলবার (৫ মার্চ) আরও একটি নতুন খবর পাওয়া গেলো। তা হলো, পূর্বে ঘোষিত ১৯ এপ্রিল নির্বাচনটি হচ্ছে না। বরং ৯ দিন পিছিয়ে আগামী ২৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে এই নির্বাচন। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার খসরু। কারণ হিসেবে তিনি বললেন, ‘১৯ এপ্রিল হলে ঈদের পর পর্যাপ্ত সময় থাকে না। অনেক শিল্পী বাড়িতে যাবেন ঈদ করতে। তাদের ফিরে আসার বিষয় আছে। ঈদ ব্যস্ততার বিষয় আছে। এগুলো বিবেচনা করেই আমরা ২৭ তারিখ চূড়ান্ত করেছি।’
যদিও কেউ কেউ কানাঘুষা করছেন, নিপুণের সভাপতি খোঁজার মিশন শেষ হয়নি বলে হুট করেই এখন নির্বাচন পেছানো হয়েছে। এসব বিষয়ে নায়িকা নিপুণের মন্তব্যের জন্য ফোন করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়। হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি নেত্রীর।