বাংলাদেশের একটি বড় অধ্যায় হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ। তাই মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে এ পর্যন্ত বহু চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। স্বাধীনতা দিবসে দেখতে পারেন সেগুলোর মধ্যে সাড়া জাগানো কয়েকটি চলচ্চিত্র। কিছু চলচ্চিত্র তুলে ধরা হল।
ওরা এগারো জন : ১৯৭২ সালে মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত বাংলাদেশের প্রথম এবং সবচেয়ে সাড়া জাগানো চলচ্চিত্র। এটি নির্মাণ করেছিলেন প্রয়াত চাষী নজরুল ইসলাম। ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের কিছু অংশ দেখানো হয়েছিল এতে। অভিনয় করেছেন রাজ্জাক, শাবানা, নূতন, খসরু, সৈয়দ হাসান ইমাম ও খলিলউল্লাহ খানসহ অনেকে।
অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ওপর নির্মিত এ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছিলেন বিখ্যাত পরিচালক সুভাষ দত্ত। এর তিনটি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়িকা ববিতা, নায়ক উজ্জল ও আনোয়ার হোসেন। বিষয়বস্তুগত দিক থেকে এ ছবিটিকে সে সময় একেবারেই অন্যরকম বলে মন্তব্য করেছিলেন বুদ্ধিজীবীরা।
আলোর মিছিল : মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এ ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৭৪ সালে। এটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক নারায়ণ ঘোষ মিতা। অভিনয় করেছেন ফারুক, ববিতা, রাজ্জাক ও সুজাতা।
আগুনের পরশমণি : ১৯৯৪ সালে এ ছবিটি নির্মিত হয় প্রয়াত কথাসাহিত্যিক, নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের হাতে। সরকারি অনুদানে তৈরি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবিটি আটটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায়। অভিনয় করেন আসাদুজ্জামান নূর, বিপাশা হায়াত, আবুল হায়াত, ডলি জহুর ও হুমায়ূন কন্যা শিলা আহমেদ।
হাঙ্গর নদীর গ্রেনেড : সেলিনা হোসেন রচিত মুক্তিযুদ্ধের গল্প ‘হাঙ্গর নদীর গ্রেনেড’ অবলম্বনে ১৯৯৭ সালে একই নামে ছবি নির্মাণ করেন চাষী নজরুল ইসলাম। এ ছবিতে রয়েছে একজন সন্তানহারা মায়ের গল্প। যে চরিত্রটি করেছিলেন সুচরিতা। বিভিন্ন চরিত্রে ছিলেন সোহেল রানা, অরুণা বিশ্বাস, অন্তরা ও ইমরান।
মুক্তির গান : প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ এবং তার স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বাংলা প্রামাণ্য চিত্র এটি। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৯৫ সালে। এটি দক্ষিণ এশিয়া চলচ্চিত্র পুরস্কারে বিশেষ উল্লেখযোগ্য পুরস্কার এবং ২০তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে পুরস্কার পায়। এখনো অনেক রাত : ১৯৯৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল এ ছবিটি। এটি পরিচালনা করেন খান আতাউর রহমান। এটি তার পরিচালিত শেষ চলচ্চিত্র। মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের পরের সময়ের চিত্র রয়েছে ছবিতে। অভিনয় করেছেন ফারুক, সুচরিতা, আলীরাজ, ববিতা ও পরিচালকের ছেলে কণ্ঠশিল্পী আগুন।
শ্যামল ছায়া : হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় ছবি এটি। মুক্তি পেয়েছিল ২০০৩ সালে। এ ছবিতে মুক্তিযোদ্ধা চরিত্রে দেখা গিয়েছিল প্রয়াত কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদিকে। আরও ছিলেন নায়ক রিয়াজ, মেহের আফরোজ শাওন, স্বাধীন খসরু, শিমুল, চ্যালেঞ্জার, ফারুক আহমেদ, ডা. এজাজ ও তানিয়া আহমেদ।
জয়যাত্রা : মুক্তি পায় ২০০৪ সালে। প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা আমজাদ হোসেনের কাহিনি নিয়ে এ ছবির সংলাপ, চিত্রনাট্য লেখা ও পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন তৌকীর আহমেদ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন একদল মানুষের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, মৃত্যু ও বেঁচে থাকার সংগ্রামের গল্প আছে এখানে। অভিনয় করেছেন আজিজুল হাকিম, বিপাশা হায়াত, মাহফুজ আহমেদ, হুমায়ুন ফরীদি, তারিক আনাম খান, আবুল হায়াত ও চাঁদনী।
গেরিলা : নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালনায় ছবিটি মুক্তি পায় ২০১১ সালে। অভিনয় করেন সহস্রাধিক শিল্পী। প্রধান চরিত্রে জয়া আহসান ও ফেরদৌস। এ ছাড়া এটিএম শামসুজ্জামান, রাইসুল ইসলাম আসাদ, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, শতাব্দী ওয়াদুদ, শম্পা রেজা ও গাজী রাকায়েত।
আরও যত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র
মমতাজ আলীর ‘রক্তাক্ত বাংলা’, আনন্দ কথাচিত্রের ‘বাঘা বাঙালি’, আলমগীর কবিরের ‘ধীরে বহে মেঘনা’, খান আতাউর রহমানের ‘আবার তোরা মানুষ হ’, জহির রায়হানের ‘স্টপ জেনোসাইড’, চাষী নজরুল ইসলামের ‘সংগ্রাম’, আনন্দ কথাচিত্রের ‘কার হাসি কে হাসে’, হারুনর রশীদের ‘মেঘের অনেক রং’, নাসিরউদ্দীন ইউসুফের ‘একাত্তরের যীশু’, মোরশেদুল ইসলামের ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ ও ‘অনিল বাগচীর একদিন’, ক্যাথরিন মাসুদের ‘মুক্তির গান’, ফখরুল আলমের ‘জয়বাংলা’, আলমগীর কুমকুমের ‘আমার জন্মভূমি’, খান আতাউর রহমানের ‘এখনও অনেক রাত’, চাষী নজরুল ইসলামের ‘মেঘের পর মেঘ’, মতিন রহমানের ‘চিৎকার’, কবীর আনোয়ারের ‘স্লোগান’, কাজী হায়াতের ‘সিপাই’, বাদল রহমানের ‘ছানা ও মুক্তিযুদ্ধ’, খালিদ মাহমুদ মিঠুর ‘গহিনে শব্দ’, আবদুস সামাদের ‘সূর্যগ্রহণ’, শহীদুল ইসলাম খোকনের ‘ঘাতক’, সাইদুল আনাম টুটুলের ‘কালবেলা’, নুরুল আলম আতিকের ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’, আশুতোষ সুজনের ‘দেশান্তর’, রায়হান রাফির ‘দামাল’, কাজী হায়াতের ‘জয় বাংলা’, অনন্য মামুনের ‘রেডিও’, ফাখরুল আরেফীন খানের ‘জেকে ১৯৭১’, তানভীর মোকাম্মেলের ‘নদীর নাম মধুমতী’ ও ‘জীবনঢুলি’, মাহমুদ দিদারের ‘বিউটি সার্কাস’, খিজির হায়াত খানের ‘ওরা সাতজন’, এম সাখাওয়াত হোসেনের ‘বীরাঙ্গনা ৭১’, জাহিদুর রহমান বিপ্লবের ‘ওমর ফারুকের মা’, পংকজ পালিতের ‘একটি না বলা গল্প’, এফএম শাহীনের ‘মাইক’, হৃদি হকের ‘১৯৭১-সেইসব দিন’, রোজিনার ‘ফিরে দেখা’, শামীম আখতারের ‘ইতিহাস কন্যা’, রিয়াজুল রিজুর ‘বাপজানের বায়োস্কোপ’, ইয়াসমিন কবিরের ‘স্বাধীনতা’, ফারজানা ববির ‘বিষকাঁটা’, শবনম ফেরদৌসীর ‘জন্মসাথী’, হারুন-অর-রশীদের ‘মেঘের অনেক রং’, শহীদুল হক খানের ‘কলমীলতা’, তানভীর মোকাম্মেলের ‘হুলিয়া’, তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’, শামীম আখতারের ‘শিলালিপি’, জাহিদুর রহিম অঞ্জনের ‘মেঘমল্লার’, রুবাইয়াত হোসেনের ‘মেহেরজান’ প্রভৃতি।