বাংলাদেশের অভিনেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য ফেরদৌসের সঙ্গে ভারতীয় অভিনেত্রী ঋতুপর্ণার বন্ধুত্বের খবর কমবেশি সবারই জানা। ঢাকায় এলে ফেরদৌসের বাড়িতে অতিথি হন ঋতুপর্ণা আর কলকাতায় গেলে ঋতুপর্ণার বাড়িতে ফেরদৌস। ছাত্র–জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ফেরদৌসকে কোথাও দেখা যায়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সক্রিয় নন তিনি। হঠাৎ দুই দিন ধরে চর্চিত হচ্ছে, দীর্ঘদিনের বন্ধু ঋতুপর্ণার কলকাতার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন ফেরদৌস। শনিবার দুপুরে খবরটি সম্পূর্ণ ভুয়া বলে জানালেন ঋতুপর্ণা।
শনিবার দুপুরে যখন ঋতুপর্ণার কথা হচ্ছিল, তখন তিনি সিঙ্গাপুরে আছেন বলে জানালেন। ১৪ আগস্ট পর্যন্ত তাঁর কাজ ছিল, এরপরই তিনি সিঙ্গাপুর গেছেন। ফেরদৌস প্রসঙ্গ উঠতেই ঋতুপর্ণা বলেন, ‘আমার কানেও খবরটা এসেছে। আমাদের দুজনের এমন একটা ছবি দিয়ে খবরটা প্রচার করা হচ্ছে, যে ছবিটা কিছুদিন আগে একটা শোতে তোলা। ফেরদৌস তো আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু, এটা তো সবাই জানেন। শেষবারও যখন ঢাকায় গেলাম, ওর বাসায় গিয়েছি। সে–ও কলকাতায় এলে আমার বাসায় আসে। আমাদের নিয়মিত যাতায়াত আছে। সত্যি কথা বলতে এই ঘটনার পর যোগাযোগ করতে পারিনি।’
ফেরদৌসের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কিছুই জানেন না বললেন ঋতুপর্ণা। তিনি এভাবে বললেন, ‘আমি জানিও না ফেরদৌস এখন কী অবস্থায় আছে। দেশ থেকে বেরিয়েছে কি না, তা–ও জানি না। শুধু এটুকুই চাইছি, ও যেন ভালো থাকে, সুস্থ থাকে, সাবধানে থাকে। কারণ, মানুষ হিসেবে ফেরদৌস খুব ভালো। ওর দেশে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কী হয়েছে, কিন্তু সে তো একজন ভালো মানুষ, চলচ্চিত্রের একজন বড় তারকা, একজন শিল্পী, অসাধারণ একটা সুন্দর মন আছে ওর। সত্যি বলতে, নির্বাচনের সময়ও ফেরদৌস আমাকে বলেছিল, আমি ভালো কাজ করতে চাই। মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করতে চাই। সে জন্যই নির্বাচন করতে এসেছিল। যাহোক, ওর দেশে এখন অন্য রকম একটা পরিস্থিতি হয়েছে—আমি ভাবতে চাই, ফেরদৌস যেখানেই থাকুক নিরাপদে এবং ভালোভাবে আছে।’
ফেরদৌসের সঙ্গে এর মধ্যে যোগাযোগ হয়নি বলেও জানালেন ঋতুপর্ণা। তবে ভালোভাবে আছে, সুস্থ আছে—এটাই ভাবতে চান তিনি।
ঋতুপর্ণা বললেন, ‘হঠাৎ শুনি, ফেরদৌস আমার ভারতের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে, এটা কেমন প্রোপাগান্ডা! এসব প্রোপাগান্ডা যারা ছড়াচ্ছে, তারা অবশ্য ছড়াবেই, তাদের মুখ তো বন্ধ করা যাবে না। আমি বলতে চাই, বাংলাদেশের সঙ্গে আমার খুব ভালো একটা সম্পর্ক। ফেরদৌস আমার একজন ভালো বন্ধু, কিন্তু এ কথাটা তো একদমই এমন নয় যে সে দেশ ছেড়ে বেরিয়ে আমার বাড়িতে গেছে! আমার মনেও হয় না, সে দেশ থেকে বেরিয়েছে, বের হলে আমরা তো জানতে পারতাম। বিষয়টা তো এমন নয় ফেরদৌস অপরিচিত মুখ। তার মতো মানুষ, দেশ থেকে বের হলে এমনিতে সবাই জানতে পারবে যে দেশ থেকে বেরোচ্ছে। আমার পরিষ্কার কথা, সে যেখানেই থাকুক, ভালো থাকুক, বাংলাদেশেরও সবাই ভালো থাকুক।’
কথার একেবারে শেষে বাংলাদেশে শান্তি ফিরে আসুক, এমনটাই কামনা করেছেন ঋতুপর্ণা।
তিনি বললেন, ‘অনেকগুলো খবর আসছে যে বাংলাদেশের অনেক জায়গায় মানুষ অত্যাচারিত হচ্ছে। ঘরবাড়ি পুড়ে যাচ্ছে। আমি চাইব যে সেখানে এ ধরনের লুটতরাজ, মারামারি ও হানাহানি মোটেও কাম্য নয়। বাংলাদেশে শান্তি ফিরে আসুক। কারণ, বাংলাদেশ আমাদের বড় প্রিয় জায়গা। বাংলাদেশের মতো এত সুন্দর সোনার বাংলা যেন সোনার বাংলার মতোই থাকে। সব ঠিক হয়ে যাক, এটাই চাই। একটা দেশে নানা মতের মানুষ থাকবে, এটাই সেই দেশের গণতান্ত্রিক সৌন্দর্য। সবার প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা থাকাটাই সেই দেশের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য। সবাই মিলেমিশে থাকাটাই তো বড় কথা।’
১৯৯৮ সালে বাসু চ্যাটার্জি পরিচালিত যৌথ প্রযোজনার ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ সিনেমায় অভিনয় করে আলোচনায় আসেন ফেরদৌস। এই সিনেমার জন্য ‘শ্রেষ্ঠ অভিনেতা’ হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। এর পর থেকে কলকাতার সিনেমায়ও অভিনয় করেন তিনি। ২০০১ সালে ‘ওস্তাদ’ সিনেমায় প্রথমবারের মতো জুটি বাঁধেন ঋতুপর্ণার সঙ্গে। এরপর অনেক সিনেমায় জুটি হয়েছেন ঋতুপর্ণা-ফেরদৌস। কাজের সূত্রে তাঁদের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।