বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন আওয়ামীলীগের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ‘আলো আসবেই’ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা এখন তুঙ্গে। সম্প্রতি সেই গ্রুপের ১৪৬টি স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়েছে, যা নিয়ে সর্বমহলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। গ্রুপটিতে শিক্ষার্থীদের ওপর ‘গরম পানি ঢালা’র পরামর্শ দেওয়া অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস গোপনে দেশ ছেড়ে কানাডা পাড়ি জমিয়েছেন।
সেখান থেকে পুরো বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন দেশের একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে। আত্মপক্ষ সমর্থনে এটিও পরিষ্কার করেছেন, ‘গরম জল’ বলতে তিনি জলকামানের কথা বুঝিয়েছেন!
অরুণা বলেন, ‘আমরা কিন্তু সেখানে (গ্রুপে) কোনও বাজে কথা বলিনি। আমরা কিন্তু সব সময় বলেছি ছাত্রদের সঙ্গে বসেন। কথা বলেন। আমরা তো আর নীতিনির্ধারণী কেউ না।
সেখানে বলা হয়েছে হাসপাতালে আগুন। ওখানে কেউ ঢুকতে পারছে না। আমি বলেছি গরম জল দিলেই হয়। গরম জল তো কামান থেকে দেয়। জলকামান লিখি নাই আর কি। ওখানেই বোধহয় মিসটেক হয়েছে। কামানে যে গরম জল থাকে সেটার কথা বলেছি।’
আন্দোলনের সময় আপনারা বিটিভি ও মেট্রোরেলের পাশে দাঁড়িয়েছেন অরুনা বিশ্বাস ছাত্রদের পাশে তো দাঁড়াতে পারতেন?
এর জবাবে অভিনেত্রী বলেন, ‘সত্যি কথা হলো আমি তখন অসুস্থ ছিলাম। পাঁচদিন কোনও খবর নিতে পারিনি। ইন্টারনেট যখন বন্ধ ছিল, তখন। ওই সময় যে বাচ্চাদের এত কিছু হয়েছে জানতাম না।
আসলে আমরা কেউ কিন্তু ছাত্রদের বিপক্ষে ছিলাম না। আমাদের মিডিয়ার লোকজন তাদের বিপক্ষে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছে। আমরা কিন্তু সন্ত্রাসীদের কথা বলেছি। ছাত্রদের কথা না।’
এদিকে কানাডা থেকে দেশে ফেরার প্রসঙ্গে এড়িয়ে যান অভিনেত্রী। বলেন, ‘এগুলো এখন আর না বলি। এখন কোনও কিছুই নরমাল লাগছে না। কাউকে আপন মনে হচ্ছে না। দেখছি তো অনেক সাংবাদিকের বউ মন্ত্রীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে গান গাইছে।
অনেক সাংবাদিক জাতীয় পুরস্কার পাইছে। তারা তো ধুমায়া লিখে গেছে। আমি আওয়ামী লীগ করছি ঠিকই, সেন্সর বোর্ডের মেম্বার ছিলাম, কিন্তু আমি তো কোনও নীতিনির্ধারকের জায়গায় ছিলাম না।’
কিন্তু এটাও তো গুঞ্জন রয়েছে অরুণা বিশ্বাস এত কিছু করেছেন বিটিভি’র মহাপরিচালক হওয়ার আশায়। সে বিষয়টি এড়িয়ে না গিয়ে শুধরে দিয়ে বলেছেন, ‘নাহ। আমি বিটিভির ডিজি হতে চাই নাই।
এটা তো হওয়া সম্ভব না। আমি ডিরেক্টর অব প্রোগ্রাম হওয়ার জন্য বলেছিলাম আগের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রীকে। উনি বলেছিলেন, এটা তো প্রধানমন্ত্রীর বিষয়। এইটুকুই। আমি আসলে কাজ করার জন্যই হতে চেয়েছিলাম।’
৫ আগস্টের ফলাফল নিয়ে অরুণা বিশ্বাসকে যদি আত্মসমালোচনা করতে বললে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন। এরপর অরুণা বলেন, ‘আমি এগুলো বলতে গেলে তো…। এসব নিয়ে বলা ঠিক না। কিছুই বলব না। অনেক সময় সত্য কথা বলা যায় না। বলা উচিতও না।
আমরা শিল্পী হইতে পারি, আমাদের যে অনেক মর্যাদা আছে তা না। আমি কিন্তু বিএনপির সময়ও কোনও অ্যাওয়ার্ড পাইনি। ওই সময় বিটিভিতে বাবুল ভাইকে বলে দু-একটা কাজ করেছি। অনেকে ভাবছে আওয়ামী লীগ করেছি, অনেক টাকা-পয়সা পেয়েছি। কোথায় টাকা-পয়সা? অনেক সময় তো আমাদের সঙ্গে ঠিকমতো কথাও বলত না।’
আলাপের শেষাংশে অরুণার অভিমানী ইঙ্গিত বিগত সরকারপ্রধান ও কর্তাদের দিকেই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর লক্ষ্যে তৎকালীন তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত এবং সংসদ সদস্য ফেরদৌসের নেতৃত্বে ‘আলো আসবেই’ নামের ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলা হয়, যেখানে আওয়ামীপন্থি শিল্পী ও সাংবাদিকেরা যুক্ত ছিলেন। তবে প্রকাশিত স্ক্রিনশট শটে সক্রিয় ছিলেন অভিনেত্রী সুইটি, সোহানা সাবা, অরুণা বিশ্বাসসহ কয়েকজন।
জনপ্রিয় নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী শুরু থেকেই ছাত্রদের পক্ষ ছিলেন। ওই গ্রুপে ফারুকীকে নিয়েও চলে সমালোচনা। অরুণা সমালোচনার এক পর্ক্সায়ে ফারুকীকে ‘হারামজাদা’ বলে বসেন। এমনকি বিভিন্ন ব্যক্তিকে ‘রাজাকার’ তকমা দেয়া, আবার শিল্পীদের স্ট্যাটাস-কর্মকাণ্ডে তুলে ধরে তাদের চিহ্নিত করে রাখতে বলেছেন এই অভিনেত্রী।
‘আলো আসবেই’ গ্রুপটিতে আরও ছিলেন সুবর্ণা মুস্তাফা, সোহানা সাবা, বিজরী বরকতুল্লাহ, আজিজুল হাকিম, স্বাগতা, বদরুল আনাম সৌদ, শমী কায়সার, তানভীন সুইটি, রওনক হাসান, মাসুদ পথিক, আশনা হাবীব ভাবনা, শামীমা তুষ্টি, জামশেদ শামীম, উর্মিলা কর, মামুনুর রশিদ, সাজু খাদেম, হৃদি হক, আশরাফ কবীর, দীপান্বিতা মার্টিন, সাইমন সাদিক, জুয়েল মাহমুদ, জায়েদ খান, ঝুনা চৌধুরী, লিয়াকত আলী লাকি, সৈয়দ আওলাদ, নূনা আফরোজ, রোকেয়া প্রাচী, গুলজার, এসএ হক অলীক, লিমন আহমেদ প্রমুখ।