নগ্ন ওয়েবসাইটে ছবি ছাড়া হবে, মুঠোফোনে এমন হুমকির মাধ্যমে বড় অংকের জালিয়াতির শিকার হলেন অর্ণবপত্নী গায়িকা সুনিধি নায়েক। জানা যাচ্ছে, সিবিআই পরিচয় দিয়ে তার কাছ থেকে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা হাতিয়েছে প্রতারকরা।
সুনিধি বিশ্বভারতীর সংগীত ভবনের প্রাক্তন ছাত্রী এবং কর্মসূত্রে পূর্বপল্লীতে একটি ভাড়াবাড়িতে থাকতেন। এর মধ্যে বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) বাড়িতে একাই ছিলেন তিনি। সেই দিনই অপরিচিত মানুষদের বাড়ির বাইরে ঘোরাফেরা করতে দেখেন তিনি।
অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা ‘হায়দরাবাদের সিবিআই’ পরিচয় দিয়ে ভিডিও কলের মাধ্যমে সুনিধিকে হুমকি দিতে থাকেন। সুনিধি ও তার বাবার প্রাণনাশের হুমকি দেন এবং সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা আদায় করেন। এমনকি বাড়াবাড়ি করলে গায়িকার ছবি নগ্ন ওয়েবসাইটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়।
সুনিধির এই ভাড়াবাড়ির ১০০ মিটারের মধ্যে শান্তিনিকেতন থানা ও এসডিপি অফিস অবস্থিত। এই কারণে নতুন ধরনের এই অপরাধটি জানাজানি হতেই শান্তিনিকেতনে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু হয়েছে শান্তিনিকেতন থানায়।
সুনিধি জানান, বুধবার তার কাছে ফোন আসে। বলা হয়, তিনি নাকি নরেশ গোয়েল নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে আর্থিক জালিয়াতির ঘটনায় জড়িত। এমনকি তার নামে নাকি একটি ক্রেডিট কার্ডও তোলা হয়েছে। এর পরেই সুনিধিকে বলা হয় তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। কথোপকথন এই ভাবে শুরু হলেও পরে তাকে ও তার বাবাকে খুনের হুমকি দিতে থাকেন অভিযুক্তেরা। খুনের হুমকি পেয়ে বাধ্য হয়ে বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) ৫ লাখ টাকা পাঠিয়ে দেন সুনিধি।
ফোন পাওয়ার পরে সন্দেহ হয়নি? প্রশ্ন করতেই গায়িকা বলেন, ‘ওরা আমার ও বাবার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সমস্ত তথ্য জানে। একটা গল্প বানিয়ে বলে, আর্থিক জালিয়াতির মামলায় আমি নাকি ধরা পড়েছি! খুনের হুমকিও দেওয়া হয় আমাদের। বাড়ির বাইরে এক অজ্ঞাতপরিচয়কে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছি। ওরা নাকি ৬-৭ মাস ধরে নজরদারি করছিলো আমার ওপরে। এ-ও বলেছে, আমি যদি মুখ খুলি তাহলে নরেশ গোয়েল আমাকে মেরে ফেলবে। হিন্দি এবং ইংরেজিতে কথা বলছিল ওরা।’
সুনিধি আরও বলেন, ‘প্রথমে আমি ভেবেছিলাম সত্যিই হয়তো হায়দরাবাদের সিবিআই পুলিশ ফোন করেছেন। পরে বুঝতে পারি এরা জালিয়াত। তবে এখন প্রশাসন সাহায্য করছে এবং ঘটনার তদন্ত চলছে।’
গায়িকার অভিযোগ, প্রতারকেরা তাকে জানান যে তার ফোন হ্যাক করা হয়েছে। তার কথায়, ‘আমি কাউকে মেসেজ বা ফোন করলেও নাকি তারা জানতে পারছেন। সেজন্য বিষয়টি নিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলতেও ভয় পাচ্ছিলাম। আমাকে মানসিক ভাবে ভেঙে দেওয়াই ওদের উদ্দেশ্য ছিল। আমি গত তিন দিন ধরে খুব ভয়ে ছিলাম। এখন তদন্ত চলছে। আমি টাকা ফেরত চাই। এ ছাড়াও অপরাধীদের শাস্তি চাই। তার সঙ্গে নিরাপত্তাও চাই।’
উল্লেখ্য, সুনিধি রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী হিসাবে পরিচিত। আরও পরিচিত ঢাকার শিল্পী সায়ান চৌধুরীর অর্ণবের স্ত্রী হিসেবে। ঢাকার মতো শান্তিনিকেতনে মাঝেমাঝেই তিনি আসেন, নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টানে।