সাদিয়া আয়মানের ভিডিও ভাইরাল, বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন মৌসুমীও

বিনোদন ডেস্ক
  ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২২:১৩

ছোট পর্দার অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মানের একটি ভিডিও ধারণকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকদিন ধরে তোলপাড় শোবিজ অঙ্গন। ভাইরাল সেই ভিডিওকে কেন্দ্র করে চাকরিচ্যুত হয়েছেন প্রথম আলো পত্রিকার বিনোদন সাংবাদিক শফিক আল মামুন।
বিষয়টি নিয়ে শোবিজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। জনপ্রিয় অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদও ব্যক্তিজীবনে পোশাক পরিবর্তন নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন। দীর্ঘ স্ট্যাটাসে সেই ঘটনার বর্ণনাও দিয়েছেন তিনি।
দীর্ঘ এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘শুটিংয়ের একটা ঘটনা শেয়ার করি। প্রায় ৩ বছর আগের কথা, পুবাইল শুটিং করছি। বেশ রাত হয়েছে। কিন্তু অনেক কাজ বাকি। সাধারণত আমরা যখন শুটিং করি বিশেষ করে আউটডোর, তখন কাজের চাপ থাকে বেশি এবং শুটিং লোকেশন এবং মেকআপ রুম বা চেঞ্জ রুম বেশ দূরে হয়। বারবার দৌড়াদৌড়ি করে কাপড় পাল্টাতে বেশ কষ্ট হয় এবং সময়ও বেশি লাগে। রাত ১২টা ৩০ প্রায়। আমি যেখানে শুটিং করছিলাম তার পাশেই একটা মাটির ঘর ছিল যে ঘরে লাইটের কিছু জিনিস পত্র রাখা ছিল । পরিচালক আমাকে খুব করে অনুরোধ করলেন বারবার মেকাপ রুমে গিয়ে চেঞ্জ করতে যেই সময় লাগছে সেই সময়টাও নেই, উনি বললেন আমি যদি অনুমতি দেই উনি আমার কাপড়ের ব্যাগটা ওই মাটির ঘরে আনার ব্যবস্থা করবেন ওখানেই চেঞ্জ করতে পারব কি না। আমি বললাম, ঠিক আছে। যদিও সেই ঘরটা মোটেও আরামদায়ক বা সেইফ নয়। তার ওপর দেখি ছিটকানিও নাই দরজায়। আমি বললাম তাহলে কীভাবে হবে ?’
মৌসুমী হামিদ বলেন, ‘তখন ক্যামেরায় যিনি ছিলেন উনাকে আমি মামা ডাকতাম উনি বললেন মামু তুমি টেনশন নিও না, আমি আছি বাইরে পাহারা দিচ্ছি। আমি ওনার কথা বিশ্বাস করেও ওই মাটির ঘরে ঢুকি। সব জানালা বন্ধ করে দেই এবং দরজা চাপিয়ে দেই। আমি নিজেও শুনতে পাচ্ছিলাম ওনারা বাইরেই আছে কথাবার্তা বলছে। পরিচালক তখন সেটে বা অন্য কোথাও। শাড়িটা পরা শুরু করি নাই তখনো। কি যেন মনে করে শাড়িটার ভাঁজ খুলে আমি পুরো শাড়িটা ওড়নার মতো কাঁধের উপর রেখে দেই এবং ঠিক তখনি লাইটের একটা ছেলে হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে পড়ে। আমি চিৎকার দিয়ে উঠি ‘এই চেইঞ্জ করি’!’
তিনি বলেন, ‘খুবই অস্বস্তিকর অবস্থা। ছেলেটা প্রচণ্ড ভয় পেয়ে বের হয়ে গেল। স্যরি আপু আমি জানতাম না আপনি ছিলেন। তখন প্রচণ্ড রাগ হলো মামার ওপর। চিৎকার দিলাম একটা। আমি শুধুমাত্র সহযোগিতা করার জন্য এমন একটা জায়গায় কাপড় পাল্টাতে রাজি হলাম কারণ আমাকে কথা দেওয়া হয়েছিল বাইরে একজন দায়িত্ব নিয়ে পাহারা দেবে। কিন্তু ছেলেটা উঠান পার হয়ে ঘরে ঢুকে গেল কেউ ওরে বলল না যে ঘরে আমি আছি।’
মৌসুমী হামিদ বলেন, ‘আমি যখন ঘরের ভেতর থেকেই চিৎকার করছি ইউনিটের উপর তাদের দায়িত্বহীনতা নিয়ে তখন সেই মামা ( চিত্রগ্রাহক) বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলেন ‘আরে বাদ দে তো ও তো ঢুকেই বের হইয়া আসছে এইটুকু সময় আর কী দেখছে। ওই ছেলেটাকে উদ্দেশ করে বলল ‘ওই তুই কিছু দেখছোস’? বলে অসভ্যর মতো হাসতে লাগল। ছেলেটা কোনো উত্তর দিল না।’
ভয়ংকর সেই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার শরীরের যত খানি অংশ দেখা গেছে সেটা তেমন কোনো বিষয়ই না। আমি নাকি ওভার রিঅ্যাক্ট করছি। এই কথা শোনার পর আমি বের হয়ে জীবনের সর্বোচ্চ রিঅ্যাক্ট সেদিন করেছি সেটে। আমার কলিগের কাছে আমার ‘সম্ভ্রম’ এতটা তুচ্ছ ? পরিবার ছেড়ে দিনের বেশির ভাগ সময় যাদের সঙ্গে কাজ করি তারা এই ভাবে তাদের দায়িত্বহীনতা জাস্টিফাই করবে? সেটের বেশির ভাগ মানুষের কাছে মনে হয়েছে দায়িত্ব নেওয়ার পরও নির্লজ্জের মতো ওনার ওই খ্যাঁকখ্যাঁক হাসায় আমি যে রিঅ্যাকশন দিয়েছি সেটা বেশি বেশি ছিল। সবাই তার অ্যাকশনকেই জাস্টিফাই করে গেল। কিন্তু পরিচালক আমার চিৎকার শুনে সেখানে এসে পুরো ঘটনা শুনে ওই চিত্রগ্রাহককে সেট থেকে বের করে দেন এবং উনি নিজেও ভুল বুঝতে পেরে স্যরি বলেন।’
মৌসুমী বলেন, ‘আমি পুরো ঘটনা ওনাকে বলে ওনার কাছে জানতে চেয়েছিলাম তোমার পরিবারের কোনো মেয়ে এমন অবস্থায় পড়লে দায়িত্বরত মানুষটা দায়িত্ব পালন না করে উল্টা যদি এমন করে রসায় রসায় হাসত, তারপর প্রচণ্ড অপমান বোধে যদি তোমার নিজের মেয়ে বা বোন বা তোমার বউ যদি রিঅ্যাক্ট করত তুমি কি বলতা তোমার মেয়েকে, মামনি ওভার রিঅ্যাক্ট করতেছো কেন ? আমি বেশি অবাক হয়েছিলাম সেটে ওইদিন ওই চিত্রগ্রাহকের দায়িত্বহীনতা ও অসভ্যতাকে যারা জাস্টিফাই করছিলেন তাদের ওপর।’ 
এদিকে সাদিয়া আয়মানের ভাইরাল ভিডিও নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া নিয়ে মৌসুমী হামিদ বলেছেন, ‘আবারও অবাক হয়েছি যারা আয়মান সাদিয়ার ভিডিও দেখে পোস্ট করেছেন ভিডিওতে তো তেমন কিছুই দেখা যায় নাই, তাদের উপর। যিনি ভিডিওটি পোস্ট করেছেন তার জন্য আমার কিছুই বলার নাই। উনি ভিডিও ডিলিটও করেছেন। আমি সাধুবাদ জানাই। কিন্তু সর্বনাশ যা হওয়ার তো হয়ে গেছে। ভিডিও বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে গেছে এবং মানুষের ট্রলিং। কারণ আমি ওনাকে যতটুকু চিনি উনি একদমই ক্ষতিকারক মানুষ নন। বেশ বন্ধু সুলভ হাস্যোজ্জ্বল এবং প্রচণ্ড পরোপকারী মানুষ। আমি বিশ্বাস করতে চাই না উনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এমন কাজটা করেছেন। লুকিয়ে বা গোপন ক্যামেরায় তো নয়ই। বরং উনি অনুতপ্তই হয়েছেন বলে আমি মনে করি।’
তার ভাষ্য, ‘কিন্তু যারা বলছেন এই ভিডিওতে তেমন কিছুই দেখা যায় নাই তাদের জন্য প্রশ্ন আছে, এই তেমন কিছুই না দেখা ভিডিওটির কারণে যে পরিমাণ নোংরা, অসভ্যতা, বুলিং, বডি সেইম, রেইপ থ্রেট মেয়েটাকে সহ্য করতে হয়েছে বা এখনো হচ্ছে সেটা যদি আপনার পরিবারের কোনো মেয়েকে সহ্য করতে হয়, আপনি সেটা দেখার জন্য প্রস্তুত আছেন তো?