২০০৩ সালে যুক্তরাজ্যে ‘কো-অপ’ নামে একটি সুপারশপে প্রতি ঘণ্টায় মাত্র ৩ পাউন্ড বেতনে কাজ করতেন ক্যালি রজার্স। সেই সময়টিতে তাঁর বয়স ছিল ১৬ বছর। আর এই বয়সেই কি-না তিনি জিতে নিয়েছিলেন একটি ব্রিটিশ জ্যাকপট! এর ফলে সবচেয়ে কম বয়সী লটারি বিজয়ী হিসেবে বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলেছিলেন তিনি। ২০ বছর আগের সেই লটারিতে পাওয়া অর্থের পরিমাণ ছিল সাড়ে ১৮ লাখ পাউন্ড। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ২৮ কোটি ৫০ লাখ টাকারও বেশি। বিপুল এই অর্থ ক্যালির জীবনকে রাতারাতি বদলে দিয়েছিল। আর বদলে যাওয়া সেই জীবনই শেষ পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছে তাঁর সব পাউন্ড।
গত মাসেই পঞ্চম সন্তানের জন্ম দিয়েছেন বর্তমানে ৩৭ বছর বয়সী ক্যালি। লটারি জয়ের কোনো অর্থই তাঁর কাছে এখন আর অবশিষ্ট নাই। তবু তাঁর কাছে মনে হচ্ছে, সেদিনের সেই বিপুল বিত্তবৈভবের চেয়ে বরং এই জীবনটিই অনেক আনন্দময় এবং সুখের। তাঁর জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য মিরর। জানা যায়, মাত্র ১৬ বছর বয়সে ক্যালির লটারি জয়ের পরই যুক্তরাজ্যে এই খেলায় অংশ নিতে ন্যূনতম বয়স নির্ধারণ করে একটি আইন পাস হয়েছিল। নতুন আইনে ১৮ বছর বয়স না হলে কেউ জ্যাকপটের টিকিট কিনতে পারবেন না। কম বয়সে বিপুল অর্থ যে মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনতে পারে ক্যালি ছিলেন তাঁর জ্বলন্ত প্রমাণ।
ক্যালি রজার্সও এখন মনে করেন, জীবন বদলে দেওয়ার মতো এত বিপুল অর্থ পাওয়ার জন্য তাঁর বয়সটি সত্যিই অনেক কম ছিল। এর ফলে তিনি মাদকের রাজ্যে হারিয়ে গিয়েছিলেন, ডুবে গিয়েছিলেন বিষণ্নতায়। এমনকি আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন তিনি। রাতভর পার্টি, বিলাসবহুল ডিজাইনের পোশাক, আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য কসমেটিক সার্জারি—গত ২০টি বছর এভাবেই কেটে গেছে ইংল্যান্ডের ওয়ার্কিংটনে বসবাস করা ক্যালির। সব অর্থ শেষ হওয়ার পর এখনকার সময়টিকে ‘স্বাভাবিক জীবন’ আখ্যা দিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি পাঁচ সপ্তাহ বয়সী কন্যা সন্তানের ছবি পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, ‘জীবনের সেরা পাঁচ সপ্তাহ। তোমাকে ভালোবাসি ছোট্ট বাবু।’
দ্য সানের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে ৩৫ বছর বয়সী এক নতুন সঙ্গীর সঙ্গে সংসার করছেন ক্যালি। একবার আইটিভির ‘দিস মর্নিং’ শোতে উপস্থিত হয়ে তিনি দাবি করেছিলেন, কিশোর বয়সে বিপুল অর্থ পাওয়ার পর তিনি হতাশার চক্রে নিমজ্জিত হয়েছিলেন। সেই সময়টিতে তাঁর পাশে ভিড় জমিয়েছিলেন অসংখ্য নকল বন্ধু। এই বন্ধুরা আসলে তাঁকে ভালোবাসতেন না, বরং তাঁর অর্থ ভাঙানোর ধান্দায় থাকতেন সব সময়। লটারি জয়ের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘একটি সাধারণ শিশু থেকে রাতারাতি আমি প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গিয়েছিলাম। এটি এখনো আমাকে তাড়া করে ফেরে।’