বিবাহিত। অথচ বিবাহিত নন! এশিয়ার দেশ জাপানে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে অদ্ভূত এই প্রথা। বর্তমানে দেশটির অনেক তরুণ-তরুণী বিয়ে করছেন, কিন্তু এক ছাদের নীচে থাকতে চাইছেন না। সপ্তাহান্তে, কখনও বা মাসে একবার এক ছাদের তলায় থাকছেন তারা। বাকি সময় কাটাচ্ছেন একা।
সম্প্রতি জাপানের একটি সংবাদমাধ্যম এক দম্পতির কথা তুলে ধরেছেন, যারা ‘বিচ্ছেদ বিবাহ’-তে আবদ্ধ। হিরোমি তাকেদা আর হিদেকাজু।
হিরোমি ফিটনেস ট্রেনার। তার নিজের একটি জিম রয়েছে। নিজেকে স্বাধীনচেতা, পরিণত বলে জানিয়েছেন হিরোমি।
হিরোমির স্বামী হিদেকাজু বিভিন্ন সংস্থার ব্যবসা সংক্রান্ত উপদেষ্টা। দিনের বেশির ভাগ সময় কাটে কম্পিউটারের সামনে। মিটিং, ইমেলের জবাব, রিপোর্ট লিখে দিন কাটে।
হিরোমি আর হিদেকাজুর পেশা একেবারে ভিন্ন। জীবনযাপনও ভিন্ন। একেবারে আলাদাভাবে দিন কাটে দু’জনের। অথচ পরস্পরকে শ্রদ্ধা করেন, ভালবাসেন তারা। একে অপরের ব্যক্তিগত জীবনে নাকও গলাতে চান না। সে কারণে আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
হিদেকাজু একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “খুব কম রাতেই আমি স্ত্রীর বাড়িতে থাকতে পারি। ক্যারিয়ার আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি আগে আরেকটি বিয়ে করেছিলেন। এ ক্ষেত্রে আগের সেই বিয়ে থেকে একটি শিক্ষা নিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
হিদেকাজুর কথায়, “প্রাক্তন স্ত্রীকেও একেবারে সময় দিতে পারিনি। দিনের পর দিন বাড়ি ফিরতে পারিনি। আমার মনে হয়, সে কারণে ও ভেঙে পড়েছিল। আগের বিয়ে থেকে একটা শিক্ষাই পেয়েছি, নারীদের স্বাবলম্বী হওয়া উচিত।”
হিরোমির যুক্তি, তার স্বামী বাড়িতে থাকলে স্বাধীনভাবে অনেক কিছুই করতে পারেন না। অস্বস্তিতে পড়েন। সে কারণে আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্তে তারা ভাল রয়েছেন।
হিরোমি এবং হিদেকাজুর একটি সন্তানও রয়েছে। সে মায়ের কাছে থাকে। সপ্তাহে দু’-তিন বার হিরোমির বাড়িতে আসেন হিদেকাজু।
সাধারণত যখন সন্তানকে দেখভালের জন্য কাউকে প্রয়োজন হয় হিরোমির, তখনই সাহায্য করতে আসেন হিদেকাজু। হিরোমি কোনো কাজে শহরের বাইরে গেলে, বা দীর্ঘ সময় বাড়ির বাইরে থাকলে, সে সময় সন্তানের খেয়াল রাখেন হিদেকাজু।
হিরোমি জানিয়েছেন, তাদের প্রতিবেশীরা ভাবেন, দু’জনের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। তা নিয়ে কানাঘুষোও শুনতে পাওয়া যায়। তবে তারা এসবে কান দেন না।
হিরোমি এবং হিদেকাজু দু’জনেই মনে করেন, বিয়ে করলেই একসঙ্গে থাকতে হবে, এমন কোনও কথা নেই। একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা থাকাটাই জরুরি। একে অন্যের ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকে সম্মান করা দরকার।
হিরোমি বলেন, “একসঙ্গে থাকাটা জরুরি নয়। আমার স্বামী এবং আমি, দু’জনেই নিজেদের জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, বিয়ের পর এভাবেই আলাদা থাকব দু’জন। স্বাধীনভাবে নিজেদের জীবন যাপন করব। শুধু মানসিকভাবে একে অন্যকে সহায়তা করে যাব। যাতে দু’জনেরই মনে হয়, মানসিকভাবে আমরা নিরাপদে রয়েছি।”
হিরোমি, হিদেকাজুরা একা নন। জাপানে ক্রমেই বাড়ছে বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর স্বেচ্ছায় আলাদা থাকার প্রবণতা। মনস্তত্ত্ববিদেরা মনে করছেন, নারী এবং পুরুষের স্বাধীন থাকার প্রবৃত্তির কারণেই সে দেশে ‘বিচ্ছেদ বিবাহের’ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সকলেই ব্যক্তিগত পরিসর নিয়ে খুব সচেতন।
সমাজবিদেরা মনে করেন, বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী আলাদা ছাদের নীচে থাকলে নারীরা নিজের ক্যারিয়ারকে গুরুত্ব দিতে পারেন। বিয়ের জন্য ক্যারিয়ারের সঙ্গে আপসের প্রয়োজন হয় না। তবে এই ধরনের বিয়ের ক্ষেত্রে স্বামী, স্ত্রী দু’জনেরই স্বাবলম্বী হওয়া প্রয়োজন।
অনেক স্বামী-স্ত্রীর ঠিকঠাক বনিবনা হয় না। অথচ চরম বিচ্ছেদের দিকে এগোতে চান না তারা। আইনি জটিলতার মধ্যে যেতে চান না। তাদের ক্ষেত্রে এই ‘বিচ্ছেদ বিবাহ’ সুবিধাজনক বিকল্প। সে কারণেই জাপানের তরুণেরা এই দিকে ঝুঁকেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্র: ওডিটি সেন্ট্রাল, সেইস ডটকম, গ্লোবাল নিউজ