ইট পাথরের নগরে মাছ শিকারের উৎসব

সিলেট সংবাদদাতা
  ০৮ অক্টোবর ২০২৩, ১৩:৪০

ইটপাথরের সিলেট নগরে খুব বেশি সুযোগ নেই চিত্তবিনোদনের। ভারত সরকারের অর্থায়নে সংস্কার ও চারপাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণের পর নগরবাসীর বিনোদনের আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ঐতিহ্যবাহী ধোপাদিঘী। সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়নে শতবছরের পুরনো দিঘীটি পেয়েছে নান্দনিক রূপ। দিঘীটি সংস্কার করে কয়েক লাখ টাকার মাছের পোনা ছেড়েছিল সিটি করপোরেশন। সম্প্রতি দিঘীসহ ওয়াকওয়েটি ইজারা দেওয়া হয়েছে। আর ইজারাদাররা ধোপাদিঘীতে মাঝে মধ্যে আয়োজন করছেন মাছ শিকারের উৎসব। নগরের সৌখিন মৎস্য শিকারিরা এই উৎসবে অংশ নিয়ে সারাদিন মাছ শিকার করছেন। 
সিলেট পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পূর্ব পাশের সীমানা দেওয়াল ঘেঁষা বিশাল দিঘী। কয়েকশত বছরের পুরনো এই জলাধারটি ‘ধোপাদিঘী’ নামেই পরিচিত। অযত্ম অবহেলায় পড়ে থাকা দিঘীটি একসময় কচুরিপানায় ঢেকে গিয়েছিল। ভরাটও হয়েছিল দিঘীটি। কয়েক বছর আগে দিঘীটি সংস্কার ও চারপাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণের একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সিটি করপোরেশন। তাতে অর্থায়ন করে ভারত সরকার। ভারত সরকারের অর্থায়নে একসময়ের মজাপুকুরটি এখন সিলেট নগরীর অন্যতম দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। নান্দনিক রূপ পেয়েছে ধোপাদিঘী। সংস্কারের সময় দিঘীটিতে বিভিন্ন জাতের কয়েক লাখ টাকার মাছের পোনা ছেড়েছিল সিটি করপোরেশন।
সম্প্রতি সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পাঁচ বছরের জন্য দিঘী ও ওয়াকওয়ে ইজারা দেয়া হয়েছে। ইজারাদাররা দিঘীর মাছ ধরার জন্য বড়শি দিয়ে মাছ শিকারের আয়োজন করছেন। গত ২ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয় মাছ শিকার উৎসবের। ওইদিন ১০ হাজার টাকা করে টিকেট কেটে শিকারিরা মাছ ধরেন। প্রত্যেক শিকারি সেদিন নানা জাতের দেড় থেকে দুইমণ মাছ ধরতে সক্ষম হন। দ্বিতীয় দফায় শনিবার পুনরায় মাছ শিকার উৎসবের আয়োজন করা হয়। টিকেটের মূল্য কমিয়ে ৮ হাজার টাকা করা হয়। মাছ ধরায় অংশ নেন ৪৫ জন শিকারী।  
নগরীর শেখঘাটের মাছ শিকারি সাত্তার আহমদ জানান, প্রথমবার প্রায় দুইমণ মাছ ধরেছিলাম। এবার ততোটা না হলেও মোটামুটি ভালো মাছই বড়শিতে ধরা পড়েছে। শিকার করা মাছের মধ্যে বেশিরভাগ ছিল রুই, কাতলা, বাউশ, সিলভার কার্প ও পাঙ্গাস। 
তিনি বলেন, সিলেট নগরীতে মাছ শিকারের কোন সুযোগ নেই। মাঝে মধ্যে লালাদিঘী ও শাহীঈদগাহ দিঘীতে মাছ ধরার আয়োজন করা হয়। কিন্তু এই দুই দিঘীতে খুব বেশি মাছ ধরা পড়ে না। ধোপাদিঘীতে তুলনামুলক অনেক বেশি মাছ ধরতে পেরেছেন শিকারীরা। 
আয়োজক ও দিঘীর ইজারাদার হাসান আহমদ চৌধুরী বলেন, বড়শি দিয়ে মাছ শিকার আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্যের অংশ। সিলেট শহরে অনেক সৌখিন শিকারি রয়েছেন, কিন্তু তাদের মাছ ধরার সুযোগ নেই। মাঝে মধ্যে কেউ কেউ নদীতে মাছ ধরতে যান। কিন্তু বেশিরভাগ সময় তাদেরকে খালি হাতে ফিরতে হয়। এসব সৌখিন শিকারিদের উৎসাহে মাছ ধরা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। বড়শি দিয়ে মাছ শিকারের ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখতে আগামীতেও এরকম উৎসবের আয়োজন করা হবে। তবে টিকেটের মূল্য হয়তো আরেকটু কমানো হবে।