জিশান আলী ১০ বছর ধরে একজন ড্র্যাগ আর্টিস্ট (কসটিউম হিসেবে আলাদা চুল ও পোশাক নিয়ে যিনি কাজ করেন) হিসেবে কাজ করছেন। শো করছেন ভারতজুড়ে। তার পারফর্মেন্সের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে প্রায় ৪৫টি উইগের (আলাদা চুল/পরচুল) সংগ্রহ।
মুম্বাইয়ের বাসিন্দা আলী বলেন, এটি একটি আলাদা আইডেনটিটি, যা আমাকে দৈনন্দিন সত্তা থেকে বেরিয়ে অসাধারণ ব্যতিক্রমী চরিত্রে রূপান্তরিত হতে সাহায্য করে।
তিনি বলেন, আমি যখন আমার ক্যারিয়ার শুরু করি তখন ভারতে উইগের সহজলভ্যতা অত্যন্ত কঠিন ছিল। এর বেশিরভাগই বিদেশ থেকে সংগ্রহ করা হতো অথবা আমি হাতের কাছে থাকা উল, কাপড় থেকে উইগ তৈরি করতাম।
তিনি আরও বলেন, এখন অনেক পরিবর্তন এসেছে। উইগ এখন কেবল ড্র্যাগ বা সিনেমার শিল্পীদের জন্য নয়। বরং অনেক নারীরা নিজেদেরকে আলাদা বা আকর্ষণীয় দেখাতে উইগ পরেন। এটি এখন কেবল চুলের আনুষাঙ্গিক নয় বরং একটি স্টাইলও।
উইগ বা পরচুল তৈরিতে ভারতীয় চুলের চাহিদা সবসময়ই ছিল। ভারত হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম মানব চুল রপ্তানিকারক দেশ, যেটি বিশ্বব্যাপী চাহিদার ৮৫ শতাংশ সরবরাহ করে।
চেন্নাইয়ের আভাদিতে অবস্থিত কোলাচি ভেঙ্কটেশ ২০ বছর ধরে চুল সংগ্রহ করে আসছেন। শুরুর দিকে তিনি ঘরবাড়ি ও আবর্জনা থেকে চুল সংগ্রহ করতেন।
তিনি বলেন, আমার বাবা-মা চুল সংগ্রহ করতেন এবং তারপর আমিও একই কাজ শুরু করি।
বাড়ি ও সেলুন থেকে সংগ্রহ করা চুলকে নন-রেমি চুল বলা হয়। রেমি চুলের চেয়ে অন্য চুলের প্রক্রিয়াকরণের বেশি প্রয়োজন হয়।
ভেঙ্কটেশ বলেন, এই চুল ফেলে দেওয়া হয় তবে এটি সোনা।
সংগ্রহকারীরা সাধারণত ভেঙ্কটেশের মতো স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে চুল বিক্রি করে প্রতি কেজি ১০ সেন্ট থেকে ১ ডলার এর মধ্যে, যা চুলের গুণগতমান ও দৈর্ঘ্যের ওপর নির্ভর করে। লম্বা চুলের দাম বেশি হয়।
ভেঙ্কটেশ বলেন, একজন পরিশ্রমী সংগ্রাহক দিনে ১-৫ কেজি চুল সংগ্রহ করতে পারেন। যা দিয়ে তারা দিনে ৫৯ সেন্ট থেকে ৬ ডলার পর্যন্ত আয় করেন। এই আয়ের স্তর প্রায়শই ন্যূনতম মজুরির মানের নিচে।
যদিও আমাদের কাজ বিলিয়ন ডলারের বিশ্ব বাজারে অবদান রাখছে। আমাদের আয় এখনও খুবই কম। মধ্যস্থতাকারীরা দাম নিয়ন্ত্রণ করে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ভেঙ্কটেশের মতো ব্যবসায়ীদের দ্বারা সংগৃহীত বেশিরভাগ ভারতীয় চুল চীনে রপ্তানি করা হয়। সেখানে এই চুল থেকে উইগ বা পরচুল তৈরি করা হয়।
প্লেক্সকনসিলের বেঞ্জামিন চেরিয়ান বলেন, চীনে পাঁচ থেকে ছয় বিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি বিশাল পরচুল তৈরির শিল্প রয়েছে।
চেরিয়ান বলে, চীনে শত শত কারখানা রয়েছে যা চুল শিল্পে মূল্য সংযোজন করছে। তবে এক্ষেত্রে ভারতে এখনও মূল্য সংযোজন বাড়ানো প্রয়োজন।
তিনি বলেন, চুল শিল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সরকারের সহায়তা করা উচিত। শত শত ডলারে চুল রপ্তানি করার পরিবর্তে ভারতের উচিত হাজার হাজার ডলারের পরচুল বিক্রি করা।
তিনি আরও বলেন, আমরা এটির ওপর কাজ শুরু করেছি। কিন্তু এখনো অনেক দূর যেতে হবে। আমাদের গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থাকা দরকার।
সূত্র: বিবিসি