৩১শে ডিসেম্বর ২০২৩ দুপুরে যাচ্ছিলাম জ্যাকসন হাইট্স। বিকিউই (ব্রুকলীন-কুইন্স এক্সপ্রেসওয়ে) দিয়ে বেরিয়ে ৬৯স্ট্রীটে লেফট-টার্ন দেয়ার সাথে সাথে লাল-লাইট। থামতে হলো। মেঘাচ্ছন্ন আঁকাশ, দৃশ্যটি চমৎকার লাগলো। বাতি সবুজ হয়ে গেছে। দ্রুত একটি ছবি তুললাম। তোলার কারণ লাইট-পোষ্টের ওপর বসে থাকা কবুতর।
লাল-ছাদ (দু’টো গাড়ীর সামনে বাঁদিকে) বাড়ীটির নাম ‘সিংহ-বাড়ী’, বাঙ্গালীরা তাই বলে, কারণ বাড়িটি গেটে দু’টি সিংহ বসানো আছে। এখানে প্রচুর বাংলাদেশীর বসবাস। কিছুকাল আগে এই বাড়ী থেকে বাংলাদেশী এক সন্ত্রাসীকে এফবিআই ধরে ছিলো, তখন ‘সিংহ বাড়ীর শিয়াল’ নামে একটি নিবন্ধ লিখেছিলাম।
এলাকাটি খুব পরিচ্ছন্ন তা নয়, মধ্যবিত্ত বা নিন্ম-মধ্যবিত্তের বাস। এ রাস্তায় সবসময় ভীড় থাকে, হয়তো বছরের শেষদিন বলে ঐসময় ফাঁকা ছিলো। ছবিটি তোলার সময় আমার এক বৃদ্ধার কথা মনে এলো। আমাদের দেশে মানুষের আগে আমেরিকা সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিলোনা, লন্ডন ছিলো আমাদের গন্তব্য। ব্যাপকহারে আমাদের আমেরিকা আগমন মূলত: নব্বই দশকের শুরুতে।
গল্পটি আমার শোনা। এক বৃদ্ধা নিউইয়র্কে অবতরণ করেন। বিমানবন্দরে ঝামেলা সেরে বাইরে বেরিয়ে আসেন। সেটা জুলাই মাস, মধ্য দুপুর, গরম ও ঝলমলে রৌদ্র। ভদ্রমহিলা অবাক হয়ে হয়ে বলে ওঠেন, “ওমা, আমেরিকাতে-ও সূর্য ওঠে”! এ ছবিটি দেখে কেউ যেন আবার না বলে উঠেন, ‘এইডা আমেরিকা? এমন দালান তো আমাগো দেশেও আছে’।
এটি জ্যাকসন হাইট্স, লোকে বলে ‘বাঙ্গালী পাড়া’। এখানে ডাইভার্সিটি প্লাজায় দেশের মতোই সভা-মিছিল-মানববন্ধন; রাজা-উজির মারা, ছবি তোলা, নেতা হওয়ার চেষ্টা চলে। ছবিটি তোলার মুহূর্তে সারি সারি কবুতর দেখে মনে মনে হেঁসে বললাম, আমেরিকাতে কবুতরও আছে!! এটি জানান দিতেই ছবিটি তোলা। ওই কবুতরগুলো সম্ভবত: সিংহ বাড়ীর বাসিন্দা।