বেসরকারী উদ্যোগে সুদিন ফিরছে খুলনার পাটশিল্পে

নতুন ধারা ডেস্ক
  ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩:০৬
আপডেট  : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩:৪১

সরকারিভাবে না হলেও খুলনার পাটকলগুলোতে সুদিন ফিরতে শুরু করেছে। সাড়ে তিন বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া ৯টি পাটকলের মধ্যে ইজারার মাধ্যমে দুটি পাটকল বেসরকারিভাবে উৎপাদন শুরু করেছে। ইজারা সম্পন্ন হয়েছে আরও দুটি পাটকলের। টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে আরও দুটির। সব মিলিয়ে খুলনার পাটশিল্পে সুদিন ফিরছে। শ্রমিকদের একটি অংশ সন্তুষ্ট হলেও
অপর একটি অংশ সরকারিভাবে পুনরায় চালুর দাবি জানিয়ে আসছে।
খুলনায় বন্ধ হয়ে যাওয়া ৯টি পাটকলের মধ্যে দুটি পাটকল বেসরকারিভাবে উৎপাদন শুরু করেছে। জানা যায়, আর্থিক ক্ষতির কারণ দেখিয়ে ২০২০
সালের জুলাইয়ে খুলনা অঞ্চলের ৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত জুট মিল বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে চাকরি হারান পাটকলগুলোর স্থায়ী-অস্থায়ী প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক। লিজের মাধ্যমে আধুনিকায়ন করে ৩ মাসের মধ্যে মিলগুলো আবার চালু করার ঘোষণা দিয়েছিল বিজেএমসি। কিন্তু ধীরগতিতে পড়ে সেই প্রক্রিয়া।
এরপর ২০২১ সালের এপ্রিলে সরকার পাটকলগুলোকে বেসরকারি খাতে ৫ থেকে ৩০ বছরের জন্য ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ইজারার মাধ্যমে পেয়ে গত ৩ ডিসেম্বর থেকে সীমিত পরিসরে দৌলতপুর জুট মিলে উৎপাদন শুরু করে ফরচুন গ্রুপ। একই প্রক্রিয়ায় একমাস ধরে পরীক্ষামূলকভাবে জেজেআই জুট মিলে উৎপাদন করছে আকিজ গ্রুপ। অন্য পাটকলগুলোর মধ্যে ভারতের মোহন গ্রুপের কাছে হস্তান্তর হয়েছে যশোর কার্পেটিং জুট মিল, রেডিয়েন্ট গ্রুপের কাছে হস্তান্তরের অপেক্ষায় খালিশপুর জুট মিল। ইস্টার্ন আর ক্রিসেন্ট জুট মিলও চুক্তির অপেক্ষায়। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় রয়েছে প্লাটিনাম ও স্টার জুটমিল।সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে,  দৌলতপুর জুট মিলে ২৫০টিতাঁত মেশিন থাকলেও বর্তমানে মাত্র ১০ থেকে ১৫টি তাঁত মেশিন চালানো হচ্ছে। নিয়োগ করা হয়েছে প্রায় ১৫০ শ্রমিক। আর গত ১ মাস ধরে ৩০০ শ্রমিক নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে পাটপণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে জেজেআই জুট মিলে। এখানে ৪৬৬টি তাঁত মেশিনের মধ্যে চালু হয়েছে এক চতুর্থাংশ। দৌলতপুর জুট মিল ও ফরচুন গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার মো. ইসহাক আলী জানান, মিলটি আপাতত স্বল্প পরিসরে চললেও দ্রতই পূর্ণরূপে চালু হবে। নিয়োগ দেয়া হবে আরও অনেক শ্রমিক। এছাড়া মিলটিতে একটি জুতার কারখানা তৈরির কাজও চলছে। পাঁচ হাজারের উপরে শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হবে তখন।
এরই মধ্যে আমাদের পাট পণ্য মজুদ হয়েছে। শীঘ্রই এগুলো বিক্রি শুরু হবে। মিলটি এর আগে লোকসানে চললেও আমরা দ্রুত লাভে ফিরতে পারব।
জেজেআই জুট মিল ও আকিজ গ্রুপের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. তারিক আহমেদ শিমুল জানান, এই মিল নিয়ে আমাদের বড় ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা আমরা নতুন নতুন মেশিন স্থাপন করেছি। মিলটি লাভে
যাবে বলেও আশা করেন তিনি। এদিকে সাড়ে তিন বছরের বেকারত্ব কাটিয়ে চালু হওয়া মিলগুলোতে কাজ পেয়ে শ্রমিকদের মুখ হাসি ফুটেছে। দৌলতপুর জুট মিলের একজন শ্রমিক বলেন, আমি দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে পাটকলে চাকরি করতাম। কিন্তু গত তিন বছর ধরে কাজ না পেয়ে অসহায় জীবনযাপন
করেছি। এখন আবার কাজ করতে পেরে আমি দারুণ খুশী।
এখর পরিবার নিয়ে ভালো আছি। এ মিলের আরেক শ্রমিক বলেন, কিছুদিন হলো আমাদের কষ্টের দিন শেষ হয়েছে। আমরা সকালে কাজ করছি।
মাস শেষে টাকা পাচ্ছি। মিলে কাজ করায় অন্য কোনও কাজও জানতাম না। রিকশা চালিয়ে, ইজিবাইক চালিয়ে কোনোমতে দিন কাটাতাম। এখন আমাদের কিছুটা স্বস্তি মিলেছে। তবে নুর আহমেদ একজন শ্রমিক বলেন, ৯টি মিলে কাজ করতেন প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক। কিন্তু সাড়ে তিন
বছর এখন কাজ পেয়েছে শ’পাঁচেক শ্রমিক। বাকিরা কিন্তু বেকার বসে আছে। অনেকে কাজ না থাকায় গ্রামে ফিরে গেছে। অনেকে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। দ্রুতই সবগুলো মিল চালুর দাবি জানান তিনি। একই সাথে বলেন, বেসরকারিভাবে চালু হওয়ায় সরকারি সুবিধা পাবে না শ্রমিকরা। শ্রমিকদের চাকরির নিরাপত্তা এবং একই বেতন কাঠামো দেয়ার দাবি তাদের।
তবে বিজেএমসি কর্তৃপক্ষ বলছে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে বেসরকারিভাবে চালু হবে সবগুলো মিল। বিজেএমসির আঞ্চলিক সমন্বয় কর্মকর্তা ধ্যে দু’টি মিল উৎপাদন শুরু করেছে। আরও ৬টি মিল চালুর প্রক্রিয়ায় রয়েছে। একে একে ৯টির মধ্যে আমরা ৮টি মিলকে চালু করতে
পারবো। অন্য একটি জুট মিল নিয়ে আইনি জটিলতা থাকায় আপাতত চালুর প্রক্রিয়া হচ্ছে না। এ মিলগুলো চালু হলে এ অঞ্চলে আবারও শিল্পাঞ্চল হিসেবে নাম ফিরে পাবে বলে মনে করেন তিনি।