বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে গবেষণা

ধুম্রজাল সৃষ্টি করেছে বিজ্ঞানিরা!

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:৪৯

বিজ্ঞানীদের ওপর ভরসা করেই আমাদের এগুতে হয়। আগুপিছু এটা ওটা পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে তারা জানান, পৃথিবীর অতীত ভবিষ্যত। সেই হিসাব-নিকেশেই তারা গণ্ডগোল পাকিয়ে ফেলেছেন, বিশেষ করে তারা ভুল করে বসেছেন বৈশ্বিক উষ্ণায়নের হিসাব কষতে। বিষয়টি ক্রমাগতই স্পষ্ট হয়ে উঠছে যখন প্রকৃতি তার আসল চেহারা দেখাচ্ছে তখন। এই যেমন ২০২৩ সালেই উষ্ণায়নে শিল্পায়ন উত্তরকালের সবচেয়ে উত্তপ্ত ধরিত্রি দেখলো বিশ্ব। ২০১৫ সালে বিশ্বের বাঘাবাঘা পরিবেশবিদ আর বড় বড় অর্থনীতির দেশের হর্তাকর্তারা মিলে যে প্যারিস ক্লাইমেট অ্যাকর্ড করেছিলো আর তার যে একটা প্রয়োজনীয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলো তা কিন্তু আর বাস্তবায়ন হলো না। তখন বলা হয়েছিলো প্রাক শিল্পায়ন সময়ের চেয়ে ১.৫ ডিগ্রির বেশি উষ্ণায়ন তারা পৃথীবিতে হতেই দেবেন না। কিন্তু তারা তাতে ব্যর্থ হলেন। নতুন গবেষণা দেখাচ্ছে, বেশ কয়েক বছর আগেই সেসব প্রতিশ্রুতিকে প্রকৃতি তার রক্তচোখ দেখিয়ে দিয়েছে। আর লক্ষ্যসীমা অতিক্রম করে পৃথিবীকে উষ্ণতর করে তুলেছে। ইউনিভার্সিটি ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া ওশেন ইনস্টিটিউট এই গবেষণা চালিয়েছে। সেই ১৭০০ সাল থেকে ক্যারিবীয় সমুদ্রে জমে থাকা স্কেলরোস্পঞ্জেসের ওপর এই গবেষণা চালানো হয়েছে।
তা থেকে গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠে গেছে ২০২০ সালেই। যদিও অন্য গবেষকরা প্রশ্ন তুলেছেন, সমুদ্রের ঠিক একটি অংশের ওপর গবেষণা চালিয়ে গোটা ভূ-গোলকের উষ্ণায়ন নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে কি-না। আর তাতে আমাদের সমুদ্রের সমগ্রটার থারমাল কম্প্লেক্সিটি ধরা পড়বে কি-না?
কিন্তু সে যেটাই হোক, বিশ্বের উষ্ণতা যে শিল্পযুগের আগের চেয়ে ১.৫ ডিগ্রিকে লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে তাতে সন্দেহমাত্র নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আবহাওয়া ও জলবায়ু পর্যবেক্ষণ সেবা প্রতিষ্ঠান কোপার্নিকাসও একই কথা বলছে। তারা জানাচ্ছে গেলো ১২ মাসে পৃথিবীর উষ্ণায়ন কাঙ্খিত ১.৫ ডিগ্রির মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ২০২৩ সালে এই মাত্রা ১.৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি উষ্ণ ছিলো। আর ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এসে তো তা ১.৬৬ ডিগ্রি উষ্ণতর হিসেবেই রেকর্ডেড হলো। যার মধ্য দিয়ে শিল্পযুগ উত্তর পৃথিবীতে সবচেয়ে উষ্ণতার মাসের তকমাও পেয়ে গেলো মাসটি।
প্যারিসচুক্তিতে বিশ্বনেতারা এই মাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচেই রাখতে চেয়েছিলেন। এমনকি বিজ্ঞানীরা হিসাব কষে বলেছিলেন, এর চেয়ে বেশি উষ্ণ হয়ে উঠবে না বিশ্ব। কিন্তু সে হিসেবতো ধোপে টিকলোই না, বরং অন্য গবেষণা বলছে, ২০২০ সালেই এই মাত্রা ছাড়িয়ে পৃথিবী তার উষ্ণতার রূপ দেখিয়ে দেয়।
যে উদ্যোগই নেওয়া হোক, জলবায়ু পরিবর্তন, সে ঘটেই চলেছে। জলবায়ু সচেতনতা স্রেফ বুর্জোয়াদের নথিতে বন্দি। আর তাদের দেওয়া বুলিই পরিবেশকর্মীদের মুখে মুখে ফেরে। এই যে যেভাবেই হোক বৈশ্বিক উষ্ণতা শিল্পযুগের আগের চেয়ে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়তে দেওয়া যাবে না এমন উচ্চাভিলাষী সিদ্ধান্ততো নেওয়াই হয়েছিলো প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে। কিন্তু এরই মধ্যে তা অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। অথচ আমরা বছর কয়েক পার করে ফেলেছি তা জানতেই পারিনি। এর মধ্য দিয়ে আমরা তো আমাদের নিজেদেরই আর আমাদের পরিবেশেরই বিশাল ক্ষতি সাধন করে চলেছি।
ন্যাচার ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ছয়টি স্কেলেরোস্পঞ্জেস বিশ্লেষণ করে জানা গেছে আরও অন্তত চার বছর আগেই বিশ্বের উষ্ণতা এই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায়। স্কেলেরোস্পঞ্জেস সমুদ্র তলদেশে খাদে খাদে আটকে থাকা এক ধরনের স্পঞ্জ যেগুলো পরীক্ষা করেই জলবায়ু বিজ্ঞানীরা উষ্ণতা পরিমাপ করেন। তারা এগুলো বলেন ন্যাচারাল আর্কাইভ। এগুলো জমে অতি ধীরে। এক মিলিমিটারের ভগ্নাংশ পরিমাপ জমা পড়ে এক বছরে। এগুলো থেকেই পরিমাপ করা হয় জলবায়ুর উষ্ণতা।
এই স্পঞ্জগুলোর স্টরনশিয়ান ও ক্যালশিয়ামের অনুপাত বিশ্লেষণ করে গবেষণা দলটি বেশ কার্যকরভাবে গত ১৭০০ বছর ধরে সমুদ্রের তাপমাত্রা হিসাব করতে পেরেছে।
গবেষণাটি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে, পৃথিবীর এই উষ্ণায়ন শুরু হয় আইপিসিসি'র দেওয়া হিসাবেরও আনুমানিক ৮০ বছর আগে থেকে। এবং আমরা ২০২০ সালেই উষ্ণতায় ১.৭ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছি। সেটাই উদ্বেগের। তবে কিছু কিছু আবহাওয়াবিদ এখনো বিষয়টিকে পাত্তা দিতে চাইছেন না। তারা বলছেন, সমুদ্রের একাংশের স্পঞ্জেস থেকে পরীক্ষা করে সার্বিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে না।