‘চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে, উছলে পড়ে আলো।’ রাজধানীর হাতিরঝিলে দাঁড়িয়ে একদল তরুণ-তরুণীকে উচ্ছ্বাস ভরা কণ্ঠে গানটি গাইতে শোনা যায়। কিছুক্ষণ আগেই সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নেমেছে। ঝিরঝির বাতাস বইছে। দুলছে গাছের পাতা। তাদের উচ্ছ্বাসের উপলক্ষ পূব আকাশে থালাকৃতির জোসনাময় চাঁদ।
সেই চাঁদের আলোচ্ছটা ছড়িয়ে পড়ে ঝিলের পানি ঝিক ঝিক করছে। অন্ধকারের বুকে চিরে যাত্রীবাহী ওয়াটার ট্যাক্সি ঝিলের পানিতে ছুটে চলে। ঝিরঝির বাতাসে ফুটপাতে ল্যাম্পপোস্ট সংলগ্ন গাছের পাতাগুলো এদিক-সেদিক দুলতে থাকে।
এমনই এক পরিবেশে যান্ত্রিক নগরী ঢাকার অনেকেই এখন জোসনা রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হাতিরঝিলে ছুটে আসছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে হাতিরঝিল ঘুরে দেখার পাশাপাশি জোসনা রাতের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করে কিছুটা সময় কাটিয়ে খুশি মনে বাড়ি ফিরছেন।
রাজধানীর আজিমপুরের বাসিন্দা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ঝিলের পাড়ে বসে ঝালমুড়ি খাচ্ছিলেন। তার দুই সন্তান ঝাল মুড়ি খাওয়ার চাইতে পূব আকাশে উঠা থালাকৃতির চাঁদ নিয়ে গল্পে ব্যস্ত।
আলাপকালে মোতাহার হোসেন বলেন, সপ্তাহের ছয়টি দিন নিজে অফিসের কাজে ব্যস্ত। সন্তানরাও পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় তেমন ঘোরাঘুরির সুযোগ হয় না। শুক্রবার ছুটির দিনে এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে এসে ফেরার পথে গাড়ি থেকে হাতিরঝিলের ফুটপাতের গাছের ফাঁক দিয়ে জোসনাময় চাঁদ দেখে গাড়ি থামিয়ে নেমে যান। ঝিরঝিরে বাতাসে দাঁড়িয়ে জোসনাময় চাঁদ দেখতে কি যে ভালো লাগছে তা ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয় বলে মোতাহার হোসেন মন্তব্য করেন।
রাজধানীর গুলশানের একটি শাড়ির দোকানের কর্মচারী আশরাফ আলী। সাধারণত বাসে যাতায়াত করলেও গত কয়েকদিন যাবত রাতে ফেরার পথে ওয়াটার ট্যাক্সিতে চলাচল করছেন। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাতে অন্ধকারের বুক চিরে ওয়াটার ট্যাক্সির এগিয়ে চলা ও রাস্তা দিয়ে দ্রুতবেগে ছুটে চলা যানবাহন চলাচলের দৃশ্য দেখার পাশাপাশি চাঁদের জোসনার সৌন্দর্য দারুণভাবে উপভোগ করছেন বলে জানান।
হাতিরঝিলে কর্তব্যরত একজন নিরাপত্তাকর্মী জানান, গত কয়েকদিন যাবত হাতিরঝিলে ঘুরতে আসা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে রাতের বেলা অনেকেই জোসনা চাঁদ দেখতে ছুটে আসছেন। অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে কিছুটা সময় কাটিয়ে বাড়ি ফিরছেন বলে তিনি জানান।