নিউইয়র্কে স্নিগ্ধতা ছড়াচ্ছে চেরি ফুল

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৬ মার্চ ২০২৪, ১২:১২

বরফ জমা শীতের সময় শেষ। প্রকৃতি এখন কিছুটা উষ্ণ, সূর্যও আগের থেকে প্রখর রোদ দিচ্ছে। সকালের দিকে তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে তা বাড়তে থাকে। নিউইয়র্কের প্রকৃতিতে এখন বসন্তের শুরু। আগের বছরের মতো এবারও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খানিকটা আগেই ধরা দিচ্ছে বসন্তের চিত্র। শহরের বিভিন্ন পার্ক কিংবা সড়কে শোভা পাচ্ছে সাদা-গোলাপি রঙের চেরি ফুল। আর চেরির সৌন্দর্য স্নিগ্ধতা ছড়াচ্ছে চারদিক।
জানা গেছে, মার্চের শেষের দিকে কিংবা এপ্রিলের শুরুর দিকে বেশি সংখ্যক চেরি ফুটে থাকে। তবে সম্প্রতি সময়ে মার্চের শুরু থেকেই চেরি ফুলের দৃশ্য চোখে পড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্ক, ব্রুকলিন বোটানিক্যাল গার্ডেন, ব্রঙ্কস বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ বিভিন্ন স্থানে এখন শোভা পাচ্ছে চেরি ফুল।
এনওয়াইসি পার্কের ওয়েবসাইট অনুসারে, ওকামে গাছে (ছোট গোলাপী ফুল) মার্চের মাঝামাঝি থেকে শেষের দিকে চেরি ফুটতে শুরু করে। তারপরে ইয়োশিনো চেরি এবং শেষ পর্যন্ত কোয়ানজান চেরি গাছ, যেগুলোর ফুলে গোলাপি ফুল রয়েছে। যারা পুরো এপ্রিল জুড়ে ফোটে।
সরজমিনে দেখা যায়, পত্রপল্লবহীন বিমর্ষ ন্যাড়া-গাছগুলো প্রাণ পেতে শুরু করে। গাছের ডালে ডালে ফোটে আছে নানান রঙের ফুল। কিছু ডালে কলিরা ফোটার অপেক্ষায় পাপড়ি মেলছে। হালকা বাতাসে দৌল খাচ্ছে সাদা-গোলাপি ফুল। দূর থেকে দেখলে মনে হয় গাছের ডালে ডালে পরীরা পাখা মেলে বসে আছে। শত-সহস্র ফুলে চেয়ে যাওয়া গাছগুলো যেন বিলিয়ে বেড়াচ্ছে সৌন্দর্যের অমেয় সুধা।
সেন্ট্রাল পার্কের ওয়েবসাইট অনুসারে—চেরি হিল, পিলগ্রিম হিল এবং শীপ মেডোর গাছগুলো এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ব্রুকলিন বোটানিক্যাল গার্ডেনের মানচিত্র বলছে, বেশিরভাগ চেরি ফুল এই মুহূর্তে প্রি-ব্লুম পর্যায়ে রয়েছে। ব্রঙ্কসের বোটানিক্যাল গার্ডেনে গ্রেডিয়েন্ট গ্রাফ অনুযায়ী, সেখানে ফুলগুলি বর্তমানে প্রস্ফুটিত হচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে চেরি ফুল এবং ড্যাফোডিল সবেমাত্র সেখানে ফুটতে শুরু করেছে। কিন্তু ম্যাগনোলিয়াস, অ্যাজালিয়াস এবং লিলাকগুলি এখনও ফুটেনি।
এদিকে ইতিমধ্যে ফুটতে শুরু করা এসব চেরির সৌন্দর্য অবলোকন করতে প্রতিনিয়ত ভিড় করছেন মানুষ। ভোরে সাইকেল চালিয়ে কিংবা বেলা পেরিয়ে বিকেল গড়ালে হাঁটতে হাঁটতে রেকের পাড়ে এসে চেরির সৌন্দর্য নিতে দেখা যাচ্ছে মানুষদের। প্রাপ্ত বয়স্কদের সাথে বয়োবৃদ্ধরা যেমন এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসেন তেমনি শিশুরাও গাছের নিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চেরি ফুল নিয়ে খেলা করার দৃশ্য চোখে পড়ে শহরের একাধিক স্থানে।
তথ্য মতে, চেরি প্রুনাস গণের প্রজাতি। প্রুনাস সেরুলাটা প্রজাতিটির ফুল গোলাপি এবং প্রুনাস স্পেসিওসার রং সাদা। তা ছাড়া অনেক হাইব্রিড প্রজাতি রয়েছে। বাড়ির আঙিনার প্রান্তে, সড়কের দুই পাশে শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদ হিসেবে খুবই মানানসই গাছ। তবে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আবহাওয়ায় চেরির বেড়ে ওঠা ও প্রস্ফুটন বিরল। চেরি ফল বেশ সুস্বাদু। পাখিরা এ ফল খেতে ভালোবাসে। পৃথিবীতে প্রকৃতির বুকে যত ফুল ফোটে, তার মধ্যে চেরি খুবই প্রভাব বিস্তারকারী একটি ফুল। মানুষ এ ফুল ফোটাকে ঘিরে চেরি উৎসব পালন করে। চেরি ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিবছর আয়োজন করা হয় নানান উৎসব।
প্রসঙ্গত, বন্ধুত্বের স্মারক হিসেবে ১৯১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে ৩ হাজার গাছ উপহার দিয়েছিলো জাপান। যা ওয়াশিংটনের বিভিন্ন পার্কে রোপন করা হয়। সেই থেকে প্রতি বছর চেরি ফুল ফোটার সময়টাকে ঘটা করে বরণ করে আমেরিকানরা। কালের বিবর্তনে এই চেরি উৎসব ছড়িয়ে পড়েছে আরও অনেক দেশে। জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও চেরি ফুলের উৎসব হয় চীন, তাইওয়ান, কোরিয়া ও ফিলিপাইনে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ২২ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত চলে চেরি উৎসব বা চেরি ব্লসম ফেস্টিভ্যাল। যেখানে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন।