একথা সত্য যে, নিউইয়র্ক সিটি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ব্যয়বহুল সিটি। স্বল্প আয়ের মানুষের পক্ষে এ ধরনের ব্যয়বহুল একটি সিটিতে বসবাস করা কঠিন। এমনকি মাঝারি আয়ের অনেক লোকজনও এই সিটিতে বসবাস করতে হিমশিম খায়। অর্থনৈতিক সাধ্যে কুলায় না বলে প্রতিবছর বহু নিউইয়র্কবাসী স্বল্প ব্যয় সম্পন্ন সিটিতে চলে যায়। তা সত্বেও অধিকাংশ নিউইয়র্কবাসী এই সিটি ছেড়ে যাওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারেন না। এর অন্যতম কারণ ব্যয়বহুল হওয়া সত্বেও নিউইয়র্ক সিটিতে যে সুযোগসুবিধা বিদ্যমান তা আমেরিকার অন্য কোনো স্টেট বা বড় সিটিতে পাওয়া যায় না।
অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বয়স্ক সেবার সুবিধা তো আছেই; সর্বোপরি বিশ্বের সকল প্রান্ত থেকে আগত জনগোষ্ঠীর বিপুল সমাবেশের কারণে যেকোনো কমিউনিটি নিউইয়র্ক সিটিতে তাদের দেশীয় আমেজ পায়। তারা অবাধে এখানে তাদের দেশীয় খাবার খেতে পারে, দেশীয় ধর্ম ও সংস্কৃতির চর্চা করতে পারে।
নিউইয়র্ক সিটি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ইমিগ্রান্ট বান্ধব সিটি বলে বর্তমানে সিটি ৮৩ লাখ বাসিন্দার মধ্যে ২৩ শতাংশই ইমিগ্রান্ট। শুধু সিটি নয়, নিউইয়র্ক স্টেটের জনসংখ্যারও প্রায় এক চতুর্থাংশ ইমিগ্রান্ট এবং স্টেটের শ্রমশক্তি এক চতুর্থাংশের বেশি ইমিগ্রান্ট। ইমিগ্রান্টরা নিউইয়র্ক সিটির অপরিহার্য অংশ। মজুরির পরিমাণ যেমনই হোক না কেন, নিউইয়র্ক সিটিতে অদক্ষ, স্বল্প দক্ষ ও দক্ষ এবং অশিক্ষিত ও শিক্ষিত নির্বিশেষে যে কোনো বয়সের মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের যে সুযোগ রয়েছে, তা দেশটির আর কোথাও নেই। যাতায়াত ব্যবস্থার জন্য মেট্টোপলিটান ট্রানজিট অথরিটি বা এমটিএ’র সাবওয়ে ও বাস নেটওয়ার্ক এত বিস্তৃত যে, সিটির দূরপ্রান্ত থেকে দিন ও রাতের যেকোনো প্রহরে যে কারও পক্ষে তাদের কর্মস্থলে যাতায়াত করা সম্ভব। সেজন্য দেখা যায় স্বল্প আয়ের লোকজন যে নিউইয়র্ক সিটি ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবে না, তার প্রধান একটি কারণ যাতায়াত ব্যবস্থার সুবিধা। তারা স্বল্প ভাড়ায় শহরতলীতে থাকে এবং এমটিএ’র সাবওয়ে বা ট্রেন ব্যবহার করতে পারে।
নিউইয়র্ক সিটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল সিটি হওয়ার কারণে অনেকে কোনো চাকুরিতে নিয়োজিত হওয়ার পরিবর্তে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের অন্য সব বড় সিটিতে সম্ভব হয় না। কমিউনিটি ভিত্তিক ব্যবসাও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ সিটিতে প্রতিটি কমিউনিটির বিপুল সংখ্যক লোকের বসবাসের কারণে। শ্রমশক্তিকে কাজে লাগানোর সুযোগ নিউইয়র্ক সিটিতে যতটা আছে, তা আর কোথাও নেই বললেই চলে। এখানে শুধু স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সহযোগিতা ক্ষেত্রে প্রায় ৭ লাখ লোক নিয়োজিত।
হোটেল ও ফুড সার্ভিসে নিয়োজিত রয়েছে ৫ লক্ষাধিক লোক. খুচরা ব্যবসায়ে ৩ লাখ, শিক্ষাক্ষেত্রে আড়াই লাখ, পরিবহন ও ওয়্যারহাউজে আরো প্রায় তিন লাখ। প্রতিটি ক্ষেত্রে ইমিগ্রান্ট শ্রমজীবীর অংশ ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। সিটির ৩৪৮,৫৪৭ জন ইমিগ্রান্ট ব্যবসায়ী সিটির সেলফ-এমপ্লয়েড শ্রমশক্তির ৩৪ শতাংশ, যাদের বার্ষিক ব্যবসায়িক আয় ৮ বিলিয়ন ডলারের অধিক।
নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুল শিক্ষাব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের অনেক স্টেটের চেয়ে অনেক বেশি প্রতিযোগিতামূলক। নিউইয়র্কে রয়েছে নয়টি স্পেশালাইজড পাবলিক হাইস্কুল, যে স্কুলগুলোতে সন্তানদের ভর্তি করানোর জন্য অভিভাবকরা উদগ্রীব থাকেন এবং তাদেরকে ওই স্কুলগুলোতে ভর্তি করানোর জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করেন। স্পেশালাইজড স্কুল থেকে উত্তীর্ণদের অধিকাংশ যুক্তরাষ্ট্রের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বৃত্তিসহ ভর্তি হওয়ার সুযোগ লাভ করে। শিক্ষার সুযোগ অভিভাবকদের নিউইয়র্ক ছেড়ে যেতে বাধা দেয়।