অনেকেরই পছন্দের তালিকায় রয়েছে ডিম। আর এ ডিম থেকেই ‘ডিম্বাকৃতি’ বা ‘ডিম্বাকার’ শব্দটির উৎপত্তি।
এই শব্দটির মানে ঠিক বৃত্তাকার (গোল) নয়, উপবৃত্তাকার (অংশিক গোল)। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, এই ডিম শুধু মানুষের খাদ্যেরই জোগান দেয়নি, একটি বিশেষ শব্দেরও জোগান দিয়েছে।
এ তো গেল শব্দাবলির কথা! এবার ডিম প্রসঙ্গে ফিরে আসা যাক। বাজারে ডিম কিনতে গিয়ে কেউ কেউ সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন। সাদা ডিম কিনবো? নাকি বাদামী বা লালচে ডিম কিনবো? এই প্রশ্নে ঘুরপাক খেতে খেতে শেষে বিক্রেতার পছন্দেই ডিম কিনেন। নিজের পছন্দের ডিমগুলো আর কেনা হয় না।
প্রাণিসম্পদ চিকিৎসক, খামারি এবং ডিম বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাদামী ডিমের তুলনামূলক দাঁড়িপাল্লায় সাদার ডিমের দিকে পাল্লা কিছুটা ভারী।
শ্রীমঙ্গল নতুন বাজারের ব্যবসায়ী পরিতোষ দেব দীর্ঘদিন ধরে ডিম ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ পর্যন্ত অগণন খুচরা ও পাইকারি ক্রেতার হাতে হাতে পৌঁছে দিয়েছেন ওই উৎকৃষ্ট খাদ্যসম্ভার।
আলাপচারিতায় তিনি বলেন, এক কেইস অর্থাৎ ৩০টা সাদা ডিমের বর্তমান বাজারমূল্য ৩শ ৩০ টাকা এবং আর বাদামী ডিমের বর্তমান দাম ৩শ ৩৫ টাকা। তবে এই দাম সব সময় এক থাকে না, ওঠানামা করে। সাদা ডিমের কোষা (বাহ্যিক আবরণ) অপেক্ষাকৃত পাতলা থাকার কারণে ক্যারিং (বহন) করতে গিয়ে ভাঙে বেশি। তাতে আমাদের কিছুটা ক্ষতি হয়।
সর্বসাধারণের চাহিদার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাদামী ডিমটাই চলে বেশি। আমার পরিচিত কিছু ক্রেতা আছেন যারা আমার পছন্দকে কিছুটা গুরুত্ব দেন, সেসব ক্রেতাদের আমি সাদা ডিম দিয়ে থাকি। আমার কাছে সাদা ডিমটাই তুলনামূলকভাবে বেশি ভালো বলে মনে হয়।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার পুরাতন পোল্ট্রি খামারি অসীম মজুমদার বলেন, সাদা ডিম ভালো। আমি বাদামী এবং সাদা দুটো ডিমই উৎপাদন করে থাকি। আর বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির সাহায্যে বাদামী ডিম করা হয়েছে। এখানে কোনো ক্ষতিকর কিছু মুরগিকে খাওয়া হয় না। মুরগিকে সুস্থ রাখার জন্য আমরা ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্স, ক্যালসিয়াম, মাল্টিভিটামিন, মিনারেল, লিভার ও কিডনি ভালো থাকার জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য ভিটামিনযুক্ত খাবার খেতে দিই। সাদা এবং বাদামী দুটো মুরগির বেলাতেই এই একই প্রযুক্তি। এগুলো ব্যবহার করায় কিছু কিছু মানুষ মনে করেন আমরা কি না কি মুরগিকে খাওয়াচ্ছি! পুরো মুরগিটাকে সুস্থ, সবল রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ইউজ (ব্যবহার) হয়।
তিনি আরও বলেন, টেস্ট (স্বাদ) বেশি থাকার কারণে আমি নিজে সবসময় সাদা ডিম খাই। সাদা ডিমের কুসুম হলো উজ্জ্বল কালার মানে হলদে রংটা বেশি। আর বাদামী ডিমের কুসুম হলো ফ্যাকাসে বর্ণের মানে হলুদ রংটা কম।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুস ছামাদ বাংলানিউজকে বলেন, মুরগির দুই প্রজাতি এক নয়। যে মুরগি সাদা ডিম দেওয়ার সেটা সাদা ডিম দেয় আর যেটা বাদামী ডিম দেওয়ার সেটা বাদামী ডিম দিয়ে থাকে। এখানে ওষুধ বা অন্যান্য উপাদান বা উপকরণে কোনো ফ্যাক্টর (বিষয়) নেই। সাদা ডিমের দাম সবসময়ই ডিম প্রতি ২০ থেকে ৫০ পয়সা কম থাকে।
তিনি আরো বলেন, মুরগি যদি খারাপ খাবার খায় সেক্ষেত্রে ডিমে মধ্যে কিছুটা হেবি মেটালের ব্যাপারটা আসতে পারে। কিন্তু মুরগি যখন খারাপ খাবার খাবে তখন তো মুরগিই অ্যাফেক্টেট (রোগাচ্ছন্ন) হয়ে মারা যাবে। আরেকটি বিষয়- বর্তমানে সরকারি নিবন্ধন ছাড়া কোনো খামারের ডিমই বিক্রি করতে পারে না। খামার, মুরগি, ডিম প্রভৃতির কোয়ালিটি কন্ট্রোল (মান নিয়ন্ত্রণ) করেই তাদের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়। আমাদের নিজেদের বিশ্বমানের ল্যাবরেটরি রয়েছে। সেখানে ডিমগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা অর্থাৎ মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কিছু আছে কিনা তা যাচাইয়ের পরই চূড়ান্ত ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
ডা. ছামাদ আরও বলেন, ডিম হলো সব চেয়ে উত্তম বা আদর্শ এবং অত্যন্ত নিরাপদ একটি খাবার। স্বাদ এবং পুষ্টি দুই রঙে ডিমেরই এক। তবে বাদামী রঙের ডিমে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণে রয়েছে।
এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বাজার থেকে ডিমের নমুনা সংগ্রহ করে তা আমাদের ল্যাবরেটরিতে রুটিভিত্তিক পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা হয়ে থাকে বলে জানান তিনি।