প্রকৃতি থেকে প্রযুক্তি

ফিচার ডেস্ক
  ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২২:৩৫

ভোরের আলো ফুটতেই আমাদের দিন শুরু হয়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে প্রথমেই আমাদের চোখ যায় মোবাইলের স্ক্রিনে। একসময় মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙত, এখন সেই দায়িত্ব নিয়েছে অ্যালার্ম টোন। ঘড়ির দিকে না তাকিয়ে স্মার্টফোনেই সময় দেখি, ইলেকট্রিক কেটলে চা বানাই এবং গাড়িতে বসে গান শুনতে শুনতে কাজে যাই। প্রতিটি মুহূর্তেই প্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিক গ্যাজেট আমাদের সঙ্গী হয়ে উঠেছে।
দিনের প্রথম কাজ হলো মোবাইলের নোটিফিকেশন ঘেটে দেখা। মেসেজ, ই-মেইল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আপডেট এসবের মাধ্যমেই আমাদের দিনের শুরু। চলার পথে, যানবাহনে বসে আমরা মোবাইলে কাজ করি, গান শুনি, ভিডিও দেখি, এমনকি কাজের মিটিংও সেরে ফেলি। একসময় লাইব্রেরিতে গিয়ে বই পড়া হতো, এখন তার বদলে পিডিএফ বা অনলাইন আর্টিকেলে ঝোঁক বাড়ছে। আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রযুক্তি যেন আবদ্ধ করেছে।
যানবাহনের প্রসঙ্গ আসলে, একসময় মানুষ হেঁটে বা গরুর গাড়িতে চলাফেরা করত। কিন্তু এখন গাড়ি সময় বাঁচাচ্ছে এবং জীবনকে আরও গতিশীল করছে। তবে প্রযুক্তির এই ব্যবহারে আমাদের শারীরিক ক্রিয়াকলাপও অনেক কমে গেছে।
সময়ের মাপজোকেও প্রযুক্তি বদলে দিয়েছে। আগে মানুষ সূর্যের অবস্থান দেখে সময়ের হিসাব করত, পরে এলো পকেট ঘড়ি, যা ছিল আভিজাত্যের প্রতীক। আজ সেই ঘড়ির প্রয়োজনীয়তাও ম্লান হয়ে গেছে স্মার্টফোনের কাছে। স্মার্টওয়াচের প্রসঙ্গে আসা যাক। এটি সময় দেখার পাশাপাশি স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ, ক্যালেন্ডার রিমাইন্ডার, মেসেজ ও কলের নোটিফিকেশন ইত্যাদি সুবিধা দিচ্ছে।
অতীতে মানুষ প্রযুক্তির ওপর এতটা নির্ভরশীল ছিল না। তারা প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে জীবন যাপন করত। প্রতিদিন সকালে পুকুরে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে আসত, মাটির চুলায় রান্না করত। সন্ধ্যাবেলায় সবাই একসঙ্গে বসে খাবার খেতো, গানের আসর বসত, কাঁথার নিচে বসে গল্পের বই পড়া হতো।
সেই সময়ের সঙ্গে আজকের দিনের তুলনা করলে প্রযুক্তির প্রভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একসময় বাইরে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে সময় কাটানো হতো, এখন আমরা মোবাইলের স্ক্রিনে বুঁদ হয়ে থাকি। আগে চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ করা হতো, এখন সেটা মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপে স্থান পেয়েছে।
প্রযুক্তির সুবিধাগুলো অমূল্য, তবে আমাদের উচিত তার ব্যবহারকে সীমিত রেখে প্রকৃতির সান্নিধ্যকে উপভোগ করা। প্রযুক্তির সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে জীবনকে গুছিয়ে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ, কারণ প্রকৃতির সজীবতা, পরিবারের সঙ্গে সরাসরি সময় কাটানোর আনন্দ বা নির্মল বাতাসে হাঁটার অনুভূতি কখনোই প্রযুক্তির মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব না।