সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মানেই যেন নিত্যনতুন ট্রেন্ডের খেলা। রাত পোহালেই একটা ট্রেন্ড পুরোনো হয়ে যায়, নতুন ট্রেন্ড চলে আসে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মেতে ওঠে নতুন ইস্যুতে। শেষ কয়েক দিন ধরেই রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয় ছাড়িয়ে ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম সয়লাব হয়ে আছে ‘বিএমডব্লিউ গাড়ির ১০টি চমকপ্রদ তথ্য’ দিয়ে। বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় গাড়ির কোম্পানি ফেসবুকের ট্রেন্ডে থাকা নতুন কিছু নয়। গাড়িপ্রেমীদের টাইমলাইনে বিএমডব্লিউ গাড়ির আনাগোনা থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু পোস্টের ছবির সঙ্গে ক্যাপশনে লেখা ‘বিএমডব্লিউ গাড়ি’র কোনো সম্পর্কই নেই। অনেকের ধারণা, ‘মেটা’র সেন্সরশিপ কাটাতে নিত্যনতুন পন্থা অবলম্বন করছেন নেটিজেনরা। উদ্দেশ্য যেটাই হোক না কেন, জার্মান গাড়ির কোম্পানিকে নিয়ে চমকের শেষ নেই। শত বছর পেরিয়েও বিএমডব্লিউ এখনো গাড়িপ্রেমীদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে।
জেনে নেওয়া যাক ‘বিএমডব্লিউ গাড়ির ১০টি চমকপ্রদ তথ্য’।
১. শুরু হয়েছিল উড়োজাহাজের ইঞ্জিন তৈরি দিয়ে
বিএমডব্লিউর সূচনা হয়েছিল ১৯১৬ সালে। তখন এই প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল বিএফডব্লিউ। তাদের মূল কাজ ছিল জার্মান যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরি করা। ১৯১৭ সালে নিজেদের নাম পরিবর্তন করে তারা বিএমডব্লিউ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
২. নীল-সাদা লোগো
অনেকেই ধারণা করেন যে বিএমডব্লিউর লোগো মূলত তাদের অতীতকে কেন্দ্র করে তৈরি করা। উড়োজাহাজের প্রপেলার থেকে তৈরি করা হয়েছে বিএমডব্লিউর লোগো। কিন্তু ব্যাপারটি তেমন নয়। বরং বাভারিয়ান পতাকার দুই রং নীল ও সাদা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে তাদের লোগো। বাভারিয়ান ফুটবল ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখের লোগোতেও এমন প্যাটার্ন দেখা যায়।
৩. মোটর ইঞ্জিনের আদলে হেডকোয়ার্টার
জার্মানির মিউনিখে অবস্থিত বিএমডব্লিউর হেডকোয়ার্টার। দূর থেকে যাকে দেখে মনে হবে, একটি চার সিলিন্ডারের ইঞ্জিন। ভবনটির নকশা এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে পুরো ভবনটি সেন্ট্রাল হাব থেকে চালনা করা যায়। যেভাবে গাড়ির ইঞ্জিন পুরো গাড়িকে চালিয়ে নিয়ে যায়। ১৯৭২ মিউনিখ অলিম্পিককে সামনে রেখে নির্মাণকাজ শেষ হয় ভবনটির। ১৯৭৩ সালে সেই ভবনে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়।
৪. বিএমডব্লিউর মোটরসাইকেল
বিএমডব্লিউ যে শুধু গাড়ির জন্যই বিখ্যাত, তা কিন্তু নয়। একসময় বিএমডব্লিউ নিয়মিত মোটরসাইকেলও তৈরি করত। বিএমডব্লিউ তাদের প্রথম মোটরসাইকেল তৈরি করে ১৯২৩ সালে, যার নাম ছিল বিএমডব্লিউ আর৩২। এ ছাড়া ১৯৩৭ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির মোটরসাইকেল তৈরি করে তারা। ঘণ্টায় ২৭৮ কিলোমিটার গতি তুলতে পারত সেই মোটরসাইকেল।
৫. এখনো পুরোনো পার্টস বানায় বিএমডব্লিউ
পুরোনো একটা বিএমডব্লিউ কিনেছেন আর পার্টসের অভাবে চালাতে পারছেন না? কোনো চিন্তা নেই। বিএমডব্লিউর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা ন্যায্যমূল্যেই আপনার গাড়ির পার্টস পাঠিয়ে দেবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে এখনো সব গাড়ির পার্টস উৎপাদন করে তারা।
৬. ট্রেন ও উড়োজাহাজেরর অন্দরসজ্জাও করে
উড়োজাহাজের ইঞ্জিন বানানো বন্ধ করলেও অন্দরসজ্জার কাজ করা বন্ধ করেনি বিএমডব্লিউ। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস, আভা এয়ারের মতো জনপ্রিয় কোম্পানির অন্দরের কাজ করে তাদের ডিজাইন স্টুডিও। এমনকি জার্মানির অত্যাধুনিক ৭৭৫টি ট্রেনের কাজও করেছে তারা।
৭. বিএমডব্লিউর ইলেকট্রিক কার
চলছে ইলেকট্রিক কারের জয়জয়কার। অথচ বিএমডব্লিউ এই ট্রেন্ডে পা দিয়েছিল সত্তরের দশকেই। ১৯৭২ সালে প্রথম ইলেকট্রিক কার তৈরি করে বিএমডব্লিউ।
৮. মার্সিডিজ বেঞ্জের কাছে প্রায় বিক্রি হয়ে গিয়েছিল
১৯৫৯ সালে প্রায় দেউলিয়া হওয়ার পথে ছিল বিএমডব্লিউ। তখন তাদের কিনে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল তাদেরই প্রতিদ্বন্দ্বী মার্সিডিজ বেঞ্জ। স্টকহোল্ডারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রুখে দাঁড়াতে সক্ষম হয় এই প্রতিষ্ঠান।
৯. রোলস রয়েসের মালিকও বিএমডব্লিউ
গাড়ির ইতিহাসের সবচেয়ে বিলাসবহুল আর অভিজাত গাড়ি ধরা হয় রোলস রয়েসকে। ১৯৯৮ সালে ব্রিটিশ গাড়ি প্রস্তুতকারী কোম্পানি রোলস রয়েসকে কিনে নেয় বিএমডব্লিউ। ২০০৩ সাল থেকে রোলস রয়েস প্রস্তুত করে আসছে বিএমডব্লিউ।
১০. বিএমডব্লিউর সবচেয়ে দামি গাড়ি
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে দামি বিএমডব্লিউ গাড়ির মডেল হলো বিএমডব্লিউ এম ৭৬০ আই এক্সড্রাইভ। বিলাসবহুল এই সেডান গাড়ি ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার গতি তুলতে পারে মাত্র ৩ দশমিক ৬ সেকেন্ডে। এই গাড়ির বাজার মূল্য প্রায় ১ লাখ ৪৬ হাজার ডলার। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।