জুরাছড়িতে দেশের সর্ববৃহৎ বুদ্ধ মূর্তি

পর্যটন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন বেগবান হবে
রাঙামাটি সংবাদদাতা
  ২০ নভেম্বর ২০২২, ১২:৫৫

স্থানীয় বাসিন্দাদের নিজস্ব খরচে পাহাড় আর অরন্য ঘেরা পার্বত্য জেলা রাঙামাটির দুর্গম জুরাছড়িতে রয়েছে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বুদ্ধমূর্তি। ১২ একর জমির উপর স্থাপিত এই মূর্তিটি তৈরিতে ব্যয় হয়েছে চার কোটি টাকা। সিংহশয্যার বুদ্ধমূর্তিটির দৈর্ঘ্য ১২৬ ফুট, প্রস্থ ৪০ ফুট  ও উচ্চতা ৬০ ফুট। 
পার্বত্য রাঙামাটি প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, এই মূর্তিটি নির্মাণের ফলে জুরাছড়ি উপজেলার পর্যটন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরো বেগবান হবে। বিশেষ করে বিদেশি পর্যটকরা এখানে আসতে শুরু করবেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের দিকে জুরাছড়ি উপজেলার সুবলং শাখা বন বিহারে সিংহশষ্যা বুদ্ধ মূর্তিটি তৈরীর উদ্যোগ নেন উপজেলার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ও ভিক্ষুরা। রাঙামাটির রাজ বন বিহারের প্রধান ও পরিনির্বানপ্রাপ্ত মহাসাধক সাধনানন্দ মহাস্থবির (বনভান্তে) এর স্মৃতির উদ্দেশ্য এ মূর্তিটি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি মূর্তিটি নির্মাণ শুরু হয়। ২০২১ সালের শেষ দিকে নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়। এটি তৈরিতে কোনো সরকারি অর্থ সহায়তা নেওয়া হয়নি। বরং স্থানীয় মানুষের দানে চার কোটি টাকা উত্তোলন করে বুদ্ধ মূর্তিটি নির্মাণ করা হয়েছে। 
সুবলং বন বিহারের মোট সাড়ে ১২ একর জায়গার মধ্যে প্রায় এক একর জায়গার উপর নির্মাণ করা হয় দেশের সর্ববৃহৎ এই সিংহশয্যা বুদ্ধ মূর্তিটি। গৌতম বুদ্ধের বিশালাকার মূর্তিতে নানা কারুকার্য করা হয়েছে। এছাড়া বুদ্ধ মূর্তির সামনে বিশালাকার খোলা স্থানে ফুল ও নানা ধরনের গাছপালার শোভা পাচ্ছে। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় জমাচ্ছেন বুদ্ধ মূর্তিটি দেখার জন্য।
খাগড়াছড়ি থেকে বুদ্ধ মূর্তি দর্শনে আসা পারমিতা চাকমা বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধ মূর্তিটি দেখে আমার খুব ভালো লাগছে। সাধারণ মানুষের টাকা দিয়ে নির্মাণ করা এই মূর্তি দেখে আমি আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েছি।’
রাঙামাটির কুতুকছড়ি থেকে বুদ্ধ মুর্তি দানোৎসর্গ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা অন্টি চাকমা বলেন, আমি এর  আগে মূর্তিটি যখন ঢালাইয়ের কাজ চলছিল তখন একবার এসেছিলাম। এখন মূর্তিটির পরিপূর্ণ রূপ দেখে আমার খুব ভালো লাগছে।’ 
দেশের সববৃহৎ ১২৬ ফুট বুদ্ধ মূর্তিটি নির্মাণের ফলে একদিকে প্রত্যান্ত জুরাছড়ি উপজেলার পরিচিতি যেমন বাড়বে অন্যদিকে দর্শনার্থীদের আগমনে পর্যটন স্থান হিসেবে পরিণত হবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রাঙামাটি জুরাছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুরেশ কুমার চাকমা বলেন, ‘কোনো রকম সরকারি সহায়তা ছাড়া এ বৃহত্তম বুদ্ধমূর্তি নির্মাণ করা কষ্টের হলেও ধর্মের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ থাকায় এ কষ্ট আজ সফলতা পেয়েছে।’ 
রাঙামাটি জেলা পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ বলেন, ‘এই বুদ্ধ মূর্তি রাঙামাটির জুরাছড়িকে নতুন করে ব্র্যান্ডিং করবে। এর ফলে সারাদেশের এবং দেশের বাইরের পর্যটকরা জুরাছড়িতে আসবেন। যা  নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মেচন করবে।’
তিনি আরো বলেন, এখানকার টুরিজ্যমকে আকৃষ্ট করার জন্য পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য যতধরনের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন তা আমরা নেবো।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং বিশ্বের কাছে নতুন করে জুরাছড়িকে তুলে ধরবে এ বুদ্ধমূর্তি।’ 
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা বলেন, ‘এই মূর্তি জুরাছড়িকে বিশ্বের পর্যটকদের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরবে।’