রাস্তায় সারাক্ষণ হাজার হাজার, লাখ লাখ গাড়ি চলছে। ট্রেন, প্লেন, জাহাজ সারাক্ষণ কোনো না কোনো গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছুটে চলছে বিশ্বের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়। তবে জানেন কি, সব কিছুরই একটা শেষ আছে। মানুষের যেমন আয়ু ফুরিয়ে যায়, শেষ গন্তব্য হয় কবরস্থান। তেমনই এসব যানবাহনেরও আয়ু ফুরিয়ে যায় একসময়।
কখনো ভেবে দেখেছেন কি, এসব নষ্ট হওয়া যানবাহনগুলোর শেষ পরিণতি কি হয়? কোথায় যায় এরা? পরিত্যক্ত এসব যানবাহন, যন্ত্রপাতি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে থাকে বছরের পর বছর। অবহেলায় এসব যানবাহন হারায় রূপ, সৌন্দর্য। তবে যেখানে তাদের স্থান হয় যেই স্থানের রূপ যেন বদলাতে থাকে। ভুতুড়ে কোনো স্থান বা কবরস্থানে রূপ নেয় জায়গাগুলো।
তেমনই কিছু স্থান সম্পর্কে জানাবো আজ। চলুন জেনে নেওয়া যাক-
গাড়ির কবরস্থান
ব্লুমবার্গের রিপোর্ট অনুযায়ী, চীনের হাংঝো শহরের বাইরে একটি বিশাল কবরস্থান রয়েছে, যেখানে শত শত বৈদ্যুতিক গাড়ি রেখে দেওয়া হয়েছে। গাড়িগুলোর মধ্যে গাছপালা পর্যন্ত গজিয়েছে। একেবারে ভুতুড়ে এক পরিবেশ। তবে মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, এত গাড়ি এখানে কেন ফেলে রাখা হয়েছে? আসলে ২০১৮ তে সালটি চীনে অটো কোম্পানিগুলো একের পর এক বৈদ্যুতিক যানবাহন লঞ্চ শুরু করে। যেগুলোর বৈশিষ্ট্য ছিল দারুণ। সাধারণ মানুষ তাই তাদের পুরোনো গাড়িগুলো ফেলে দিতে থাকে। সেই গাড়িগুলো জমেই এই কবরস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
ট্রেন কোচ কবরস্থান
যারা রহস্যময় কিংবা পুরোনো জঙ্গল জায়গার ব্যাপারে আগ্রহী তাদের জন্য এটি হতে পারে সেরা। গ্রিসের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর থেসালোনিকিতে একটি ট্রেন কোচের কবরস্থান রয়েছে। অ্যাটলাস অবসকুরা ওয়েবসাইট অনুসারে, ১৯৮০-এর দশক থেকে ট্রেনের যে কোচগুলো পুরোনো হয়ে যায়, প্রশাসন সেগুলো এখানে ফেলে দেয়। বছরের পর বছর ধরে ট্রেনের কোচগুলো এখানে এভাবেই পড়ে আছে। লোহাকে স্ক্র্যাপ হিসেবে নিলামে তোলারও চেষ্টা চলছে। কিন্তু এত বেশি টিন আছে যে কিছুতেই তা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না।
জাহাজের কবরস্থান
অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনের টাঙ্গালুমা বিচের কাছে একটি জাহাজের কবরস্থান রয়েছে। প্রায় ১৫টি ডুবে যাওয়া জাহাজকে এখানে একসঙ্গে রেখে দেওয়া হয়েছে। অনেক পর্যটক এগুলো দেখতে আসে। পৃথিবীতে আরও অনেক জাহাজের কবরস্থান রয়েছে। ক্রুজ জাহাজগুলো ভারতের খাম্বাত উপসাগরে পাঠানো হয়, যেখানে সেগুলো স্ক্র্যাপ করে বিক্রি করা হয়। পুরোনো এসব জাহাজের মধ্যে অনেকেই স্কুবা ডাইভিং করতে যান।
টেলিফোন বুথ কবরস্থান
একটা সময় লাল রঙের টেলিফোন বুথগুলো বেশ বিখ্যাত ছিল। রাস্তার ধারে দেখা যেত লাল রঙের এই বুথগুলো। তবে স্মার্টফোনের যুগে এসে এগুলো আর কেউ ব্যবহার করে না। তাই নতুনের জায়গা করে দিতে পুরোনোকে বিদায় নিতে হয়েছে।পুরোনো টেলিফোন বুথগুলো সরিয়ে জায়গা খালি করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। দিনের পর দিন অসংখ্য ফোন জমা হতে থাকে এক জায়গায়। বছরের পর বছর এগুলো পড়ে রয়েছে একই জায়গায়। ফলে অন্যরকম এক দৃশ্যের সাক্ষী হচ্ছে মানুষ।
টায়ার কবরস্থান
কুয়েত শহরের সুলাইবিয়া কবরস্থান বিশ্বের বৃহত্তম টায়ার কবরস্থান। গত ১৭ বছরে, ৪০ মিলিয়নেরও বেশি গাড়ির টায়ার এখানে ফেলা হয়েছে। এটি বিশ্বের বৃহত্তম টায়ারের কবরস্থান, তবে এখন সেখানকার সরকার সেগুলোকে পুনর্ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছে।
বিমানের কবরস্থান
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় বিমানের একটি কবরস্থান রয়েছে, যার নাম ডেভিস-মন্থান আর্মি এয়ার ফোর্স বেস। এটি বিশ্বের বৃহত্তম বিমান কবরস্থান। এখানে ৩২০০টিরও বেশি বিমান, ৬১০০টি ইঞ্জিন এবং অন্যান্য অনেক জঞ্জাল জিনিস রাখা আছে। বিশাল জায়গা জুড়ে মানুষের হাতে গড়া বিশাল সেই ডানা মেলা পাখি যেন আজ কালের সাক্ষ্য দিচ্ছে।