সর্বশেষ বরফ যুগের শেষে গাছপালা থেকে নিঃসরিত ব্যাপক পরিমাণের পরাগরেণু থেকে সৃষ্ট অ্যালার্জির প্রভাব ধীরে ধীরে উলি বা পশমী ম্যামথকে বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিতে সহায়তা করেছিল বলে নতুন এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সেই সময়ে গাছপালা এত বেশি পরাগরেণু নিঃসরণ করে যে, এটি প্রাণীদের মধ্যে ব্যাপকহারে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ফলে ধীরে ধীরে ম্যামথের ঘ্রাণশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। এরা একে অপরের সাথে স্বাভাবিকভাবে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়।
গবেষকরা দাবি করছেন, প্রজনন ঋতুতে পশমী ম্যামথগুলো একে অপরের গন্ধ শুঁকতে পারতো না। এই অক্ষমতা ম্যামথদের মধ্যে যৌনতা খুঁজে পেতে বাধা দিত। যার ফলে এদের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পায় এবং শেষ পর্যন্ত বিলুপ্তি ঘটে।
আর্থ হিস্ট্রি অ্যান্ড বায়োডাইভার্সিটি জার্নালে গত ২৭ আগস্ট প্রকাশিত এই গবেষণায় গবেষকরা লিখেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সময় প্রাণীদের বিলুপ্তির সম্ভাব্য প্রক্রিয়াগুলোর মধ্যে একটি হলো- উদ্ভিদের পরিবর্তনের সময় অ্যালার্জির বিকাশের কারণে ঘ্রাণশক্তি নষ্ট হওয়া।
প্লাইস্টোসিন উপযুগে, ২.৬ মিলিয়ন থেকে ১১ হাজার ৭০০ বছর আগে পৃথিবীতে বাস করতো উলি ম্যামথ। তারা প্রায় ১০ হাজার বছর আগে পরিসরের বেশিরভাগজুড়ে বিলুপ্তি হয়ে যায়। যদিও এদের একটি ছোট গোষ্ঠী ৪ হাজার বছর আগে পর্যন্ত উত্তর-পূর্ব রাশিয়ার প্রত্যন্ত রেঞ্জেল দ্বীপে বেঁচে ছিল।
গবেষকরা মনে করেন, ইনব্রিডিং, মানুষের শিকার এবং উদ্ভিদের বড় পরিবর্তনগুলোর সংমিশ্রণ ম্যামথকে বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিয়েছে। তবে এই কারণগুলোর একেকটি ম্যামথের মৃত্যুর জন্য কতটা দায়ী ছিল, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
গবেষকরা যুক্তি দেখান, অ্যালার্জি ম্যামথের জীবনের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রিয়াকলাপকে ব্যাহত করতে পারে। প্রাণীরা খাদ্য ও সঙ্গী খুঁজে পেতে, অভিবাসনের সময় চলাচল করতে এবং শিকারীদের এড়াতে তাদের ঘ্রাণশক্তি ব্যবহার করে।
নিউ ইয়র্কের ইউনিভার্সিটি অ্যাট বাফেলোর বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানী এবং সহযোগী অধ্যাপক ভিনসেন্ট লিঞ্চ বলেন, এই ধারণাটি অনেক বিস্তর বলে মনে হচ্ছে। আমি নিশ্চিত নই, আপনি এই ধারণা কীভাবে প্রমাণ করবেন।
লিঞ্চ বলেন, প্রাচীন ডিএনএ নমুনা ইঙ্গিত দেয়, শেষ বেঁচে থাকা উলি ম্যামথগুলো নির্দিষ্ট উদ্ভিদের গন্ধ নেওয়ার ক্ষমতা হারিয়েছিল। র্যাঞ্জেল দ্বীপ থেকে পাওয়া ম্যামথের পুনর্গঠিত জিনোম ফুলের ঘ্রাণ শনাক্ত করার ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত জিনের মিউটেশন দেখিয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয়- শেষ ম্যামথগুলো ফুল গাছের গন্ধ নিতে পারে না।
তবে যতক্ষণ না নতুন গবেষণার ধারণাটি পরীক্ষামূলকভাবে আরও পরীক্ষা করা হয় এবং আরও গবেষণায় সমর্থিত হয়, ততক্ষণ তিনি মনে করেন, পরিবেশগত কারণ এবং মানুষের প্রভাবের সংমিশ্রণ ম্যামথকে বিলুপ্ত করে দিয়েছে।