রতন টাটাকে চেনেন না এমন মানুষ বোধহয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। ভারতের বিশ্ববিখ্যাত শিল্পপতিদের একজন রতন টাটা। ব্যবসার মাধ্যমে ভারতকে বহির্বিশ্বে ব্র্যান্ডিং করা সফল এই ব্যবসায়ী। ভারতের অন্যতম এই বিজনেস টাইকুন টাটা গ্রুপকে সফলভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
লবণ থেকে সফটওয়্যার, কী নেই টাটা গ্রুপে? দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে এই প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিয়েছেন রতন টাটা। শতাধিক কোম্পানি এবং ৬ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি কর্মী নিয়ে কাজ করছে ভারতের অন্যতম শীর্ষ এই গ্রুপটি। টাটা গ্রুপের বার্ষিক রাজস্ব আয় ১০ হাজার কোটি ডলারের বেশি।
তবে শুধু ব্যবসার জন্যই নয় তিনি নজির হয়ে আছেন আরও অনেক কারণে। ১৯৪৮ সালে মাত্র দশ বছর বয়সে তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যায় এবং তাই তিনি তার দাদি নওয়াজবাই টাটার কাছে বেড়ে ওঠেন। পড়াশোনা করেছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মুম্বইয়ের ক্যাম্পিয়ন স্কুলে পড়াশোনা করেন, তারপরে ক্যাথেড্রাল এবং জন কনন স্কুল এবং সিমলার বিশপ কটন স্কুল সিমলায় পড়াশোনা করেন। তিনি ১৯৫৫ সালে নিউ ইয়র্ক সিটির রিভারডেল কান্ট্রি স্কুল থেকে ডিপ্লোমা লাভ করেন।
ব্যবসায় শুধু সফল হননি তিনি, মানুষের মন জয় করতেও সফলতা পেয়েছেন। এমনকি পোষা কুকুর, তাদের প্রতিও ছিল তার অঘাত ভালোবাসা। সবসময় তার সঙ্গী ছিল পোষা কুকুর গোয়া। গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়েও তার সঙ্গে থাকত গোয়া। গোয়ার সঙ্গে মজার মুহূর্ত, খাওয়ার মুহূর্ত তিনি শেয়ার করতেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
গোয়ার খাওয়ার সময় তিনি যেন থাকতে পারেন এজন্য বিদেশে অ্যাওয়ার্ড আনতে যাননি। ২০১৮ সালের গল্প, যখন রতন টাটা তার পোষা কুকুরের অসুস্থতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের রাজপরিবারের দেওয়া লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড নিতেও যাননি।
প্রিন্স চার্লস যখন রতন টাটার অনুপস্থিতির কথা জানতে পারেন, তখন তিনি রতন টাটার আদর্শ ও অগ্রাধিকারেরও প্রশংসা করেন। কুকুরের জন্য হাসপাতালও খুলেছেন রতন টাটা। হাসপাতাল খোলার সময় তিনি বলেছিলেন, আমি কুকুরকে আমার পরিবারের অংশ মনে করি। রতন টাটা আরও বলেছিলেন যে আমি আমার জীবনে অনেক পোষা প্রাণী রেখেছি। এ কারণে হাসপাতালের গুরুত্ব জানি। নাভি মুম্বাইতে তাদের দ্বারা নির্মিত হাসপাতালটি ৫ তলা বিশিষ্ট, যেখানে একসঙ্গে ২০০টি পোষা প্রাণী একসাথে চিকিত্সা করা যেতে পারে।
এই গোয়াকে নিয়েই একটি মজার ঘটনা সম্প্রতি সামনে এসেছে। হিউম্যানস অব বোম্বে-নামক ফটো ব্লগের সিইও করিশ্মা মেহতা ঘটনাটি শেয়ার করেন। একবার টাটা হেডকোয়ার্টারে গিয়েছিলেন করিশ্মা। সেখানেই প্রথম গোয়াকে দেখতে পান তিনি। রতন টাটার সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য টাটা হেডকোয়ার্টারে গিয়েছিলেন করিশ্মা মেহতা। সাক্ষাৎকার শুরুর আগে তিনি দেখতে পান, টাটা গোষ্ঠীর প্রভাবশালী এই শিল্পপতির পাশের চেয়ারে আরাম করছে এই পোষা কুকুর গোয়া। যা দেখার পর কিছুটা অস্বস্তিতেই পড়েছিলেন করিশ্মা। তার কুকুর-ভীতির কথা জানতে পারেন রতন টাটার।
পোষ্য গোয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে রতন টাটা বলেছিলেন ‘উনি তোমাকে ভয় পাচ্ছেন, ভালো ছেলের মত এক্কেবারে বসো।’ এরপরই করিশ্মা মেহতাকে ঘরে আসতে আমন্ত্রণ জানান বিশিষ্ট শিল্পপতি। তারপর ক্যারিশ্মা মেহেতা জানান, ৪০ মিনিটের মতো রতন টাটার সঙ্গে কথা বলেছিলেন, ‘গোয়া’ ঠিক একই জায়গায় বসেছিল।
শুধু নিজেই কুকুর পুষতেন তা নয়, পথ কুকুরদের জন্যও তার ভালোবাসা ছিল। টাটা গ্রুপের গ্লোবাল হেডকোয়ার্টারে পথ কুকুরদের জন্য একটি ক্যানেল তৈরি করা হয়। সেখানে তাদের জন্য খাবার, পানি, খেলনা রাখা আছে। পোষ্যরা যে তার কাছে কতটা আদরের, তা নাম নির্বাচনেই বোঝা সহজ।
ইনস্টাগ্রামে রতন টাটার একাধিক তার কুকুর-প্রীতির গল্প তুলে ধরে। রাস্তার কুকুরদের দত্তক নিতেন তিনি। যত্ন করে পুষতেন, সেবা করতেন। এমনকী, নিজের অফিসের সামনে তিনি রাস্তার কুকুরদের আদর করতেন, তাও আবার মাটিতেও বসে। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোষ্যদের পরিচর্যা সংস্থা ‘ডগস্পট ডট ইন’-এ লগ্নি করেছেন রতন টাটা।