এইচএমপিভি নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ

স্বাস্থ্য ডেস্ক
  ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২২:১৪

পুরো বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে করোনা মহামারি। করোনায় মৃত্যু-আক্রান্ত-আতঙ্ক ছড়িয়েছিল প্রায় সব দেশেই। সেই মহামারি কাটিয়ে স্বাভাবিক হয়েছে বিশ্ব। এর মধ্যেই আবারও হুমকি হয়ে উঠছে নতুন মহামারি। সামনের দিনগুলোতে আবারও এমন মহামারি বা সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ভাইরোলজিস্টরা।
মেটানিউমোভাইরাসের (এইচএমপিভি) প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। চীন-জাপান ছাড়িয়ে মালয়েশিয়া-ভারতেও এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এটা নতুন কোনো রোগ নয়। এর ভয়াবহতার ঝুঁকিও কম।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এটি পুরোনো রোগ, নতুন কিছু না বলেও জানিয়েছেন তারা।

দেশে আগেও এইচএমপিভি রোগী শনাক্ত হয়েছিল, আতঙ্কের কিছু নেই
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আহমেদ নওশের আলম জাগো নিউজকে বলেন, এ ভাইরাস নিয়ে অতিরিক্ত ভয়ের কিছু নেই। এতে বড় ধরনের হুমকি নেই। এর আগেও দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিল।
তিনি বলেন, এই ভাইরাসে আক্রান্তদের ইনফ্লুয়েঞ্জা ও করোনাভাইরাসের মতোই সিম্পটম (উপসর্গ) দেখা দিতে পারে। তবে এতে বড় সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এই রোগের আলাদা ভ্যাকসিন নেই। তবে প্রচলিত চিকিৎসায় এই রোগ ভালো হয়।
আইইডিসিআরের পরিচালক বলেন, এইচএমপিভি ভাইরাস এর আগেও বাংলাদেশে পাওয়া গেছে। এটি নতুন কোনো ভাইরাস নয়। মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ২০১৭ সাল থেকেই আমাদের দেশে এইচএমপিভি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়ে আসছিল। আমরা আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তারা বলেছে এ বছর এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি।
তিনি বলেন, চীন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গেও আমরা আলাপ করেছি। চীন জানিয়েছে তারা এই রোগের কারণে কোনো জরুরি অবস্থা জারি করেনি। অনেক ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। ডব্লিউএইচও জানিয়েছে এ বিষয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে আমরা এ বিষয়ে আলোচনায় বসেছি। আমরা আবারও এই রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসবো।

চীন-জাপানে ছড়িয়ে পড়েছে এইচএমপিবি ভাইরাস
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া চীনের কিছু ভিডিওতে দেখা যায়, হাসপাতালগুলোতে করোনাভাইরাসের সময়ের মতোই ভিড়। এছাড়া জাপানেও একই অবস্থা দেখা যায়। দেশগুলোতে এই রোগ নিয়ে সতর্ক অবস্থানেও যেতে দেখা যাচ্ছে। তবে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়লেও এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) কিংবা দেশগুলোর সরকার সতর্কতা জারি করেনি।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের তথ্যে জানা যায়, চীনে এই রোগে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা। বিশেষ করে আগে যাদের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ছিল, তারা নতুন এই ভাইরাসের আক্রমণে নাজুক অবস্থায় আছেন।
এইচএমপিভি ভাইরাস নিয়ে বিশ্বের অন্য দেশগুলোকে উদ্বিগ্ন না হওয়ার জন্য বলেছে চীন। তারা জানায়, এটি মৌসুমী অর্থাৎ শীতকালীন সংক্রমণ মাত্র।

ভারতেও দুজনের শরীরের এইচএমপিবি ভাইরাস
চীন, জাপান ও মালেশিয়ার পর ভারতেও শনাক্ত হলো হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি)। সোমবার (৬ জানুয়ারি) সকালে দেশটির কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে দুটি শিশুর শরীরে এইচএমপিভি শনাক্ত হয়।
দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির তথ্যে জানা যায়, সোমবার সকালে বেঙ্গালুরুতে প্রথমে আট মাস বয়সী এক শিশুর শরীরে এইচএমপিভি ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়। পরে তিন মাসের এক শিশুর শরীরেও এই ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে ভারতের কর্ণাটকের স্বাস্থ্যমন্ত্রী দীনেশ গুন্ডু রাও বলেন, এই ভাইরাস নিয়ে চিন্তা করার কোনো প্রয়োজন নেই। এইচএমপিভি ভারতেও রয়েছে। তবে এই ভাইরাসের রূপান্তর হয়েছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। অতীতেও ভারতে সাধারণ এইচএমপিভি দেখা গেছে বলে জানান তিনি।

এইচএমপিভি প্রতিরোধ ও প্রতিকার
প্রায় দুই দশক আগে প্রথমবারের মতো এইচএমপিভির উপস্থিতি জানান দিলেও এখন পর্যন্ত এর টিকা আবিষ্কার হয়নি। চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা মোকাবিলায় যেসব সতর্কতা নেওয়া হয়েছিল, একই পদক্ষেপে এই ভাইরাসও প্রতিরোধ করা সম্ভব। টানা ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া, অপরিষ্কার হাতে নাক-মুখ স্পর্শ না করা এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার মধ্যদিয়ে এইচএমপিভি থেকে নিরাপদ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।