হঠাৎ করে তীব্র জন্ডিসে আক্রান্ত 'একিউট ভাইরাল হেপাটাইটিস' এবং 'লিভার ফেইলর' রোগীদের লিভারের কার্যক্ষমতা অত্যাধিক মাত্রায় কমে যাওয়ায় তারা রোজা রাখতে পারবেন না।
ফ্যাটি লিভার রোগীদের জন্য রোজা একটি বড় সুযোগ। উপবাসের সময় লিভার সেলের নানামুখী তৎপরতায় লিভারে ফ্যাট জমা হতে দেয় না। কাজেই অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিস এবং অন্যান্য জটিল রোগ সাথে না থাকলে ফ্যাটি লিভারের রোগীরা রোজা রাখলে উপকৃত হবেন।
হেপাটাইটিস 'বি' কিংবা 'সি' তে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগী, যাদের শারীরিক তেমন কোনো অসুবিধা নাই এবং লিভার ফাংশন ভালো তারা রোজা করতে পারবেন। তবে যারা এই রোগের জন্য ওষুধ খাচ্ছেন তারা অবশ্যই যথারীতি ওষুধ চালিয়ে যাবেন। সাধারণভাবে জটিলতাবিহীন বা 'কমপেনসেটেড লিভার সিরোসিস' রোগীরা রোজা করতে পারবেন। কিন্তু যাদের জন্ডিস, পা কিংবা পেটে পানি আসা, রক্ত বমি কিংবা পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ইতিহাস আছে তাদের জন্য রোজা রাখা ক্ষতিকর হতে পারে। 'লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত কিন্তু লিভার ফাংশান মোটামুটি ভালো এবং সোরাফেনিব ওষুধ খাচ্ছেন এমন রোগীরা রোজা রাখতে পারবেন। লিভার ট্রান্সপ্ল্যানট রোগীরা লিভার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ এবং তত্ত্বাবধানে রোজা রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
খাবারের পরামর্শ: ইফতারের সময় প্রচুর পানি এবং তরল খাবার, কম চর্বিযুক্ত এবং রসালো খাবার ও ফলমূল খাওয়া উচিত। কম তেলে ভাজা দুই-একটি পেঁয়াজু, বেগুনি খেতে পারবেন। মাঝারি মাপের একটি জিলাপি এবং ছোট এক বাটি হালিম খেতে পারবেন। আর ইফতারের সময় একবারে বেশি না খেয়ে অল্প অল্প করে বার বার খেলে হজম ভালো হবে। পানি, দুধ, শরবত, ঘরে বানানো ফলের রস, সাথে অল্প পরিমাণ চিনি খেতে পারবেন। লিভারের রোগীরাও প্রতিদিন ইফতারে তিন-চারটি খেজুর খেতে পারবেন। যে কোনো ধরনের ফল লিভারের রোগীরা খেতে পারবেন। তবে সঙ্গে ডায়াবেটিস থাকলে মিষ্টি ফল বেশি খাবেন না। ভেজিট্যাবল, চিকেন কিংবা কর্ন যে কোনো স্যুপ খেতে পারবেন।
রাতের খাবার রাতের খাবার হালকা হতে হবে, এ সময়ে ভাত অথবা রুটি অথবা পেস্তা, সঙ্গে মুরগি, মাছ, সবজি, পরিমাণ মতো খেতে পারবেন। এ সময় ফ্যাটি লিভারের রোগীরা টক দই খেতে পারেন।
সেহেরি: পরিমিত ভাত, রুটি, সবজি, মাছ, মুরগি খেতে পারবেন। কম চর্বিযুক্ত দুধ এবং সাথে কলা খেতে পারবেন। অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড, গরু ও খাসির মাংস (বিশেষত লিভার সিরোসিস এবং ফ্যাটি লিভারের রোগীরা), বড় চিংড়ি, অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার, অতিরিক্ত ঝাল খাবার, কোমল পানীয় গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।
রমজানে ব্যয়াম: শারীরিকভাবে সক্ষম ক্রনিক হেপাটাইটিস, ফ্যাটি লিভার এবং কমপেনসেটেড লিভার সিরোসিসের রোগীরা ইফতারের এক ঘণ্টা পর সাধ্যমতো হালকা ব্যায়াম কিংবা হাঁটাহাঁটি করতে পারবেন। রোজা রাখার বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে স্বাস্থ্যকর এবং পরিমিত খাবার এবং নিয়মিত ওষুধ সেবনের মাধ্যমে লিভারের বিভিন্ন রোগী রমজানেও সুস্থ থাকতে পারবেন।