জলবায়ু পরিবর্তনে ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ে চাপ তৈরিতে অবদান রাখা আন্তর্জাতিক জলবায়ু বিজ্ঞানী সালিমুল হক মারা গেছেন। রোববার ভোরে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ... রাজিউন)। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইসিসিসিএডি) ফেসবুক পেজে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
রোববার বিকেল সোয়া ৪টায় গুলশান সোসাইটি জামে মসজিদে সালিমুল হকের জানাজা হবে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
আইসিসিসিএডির পেজে বলা হয়, ‘অত্যন্ত দুঃখ ও ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে আমরা আপনাদের জানাচ্ছি যে, আমাদের পরিচালক অধ্যাপক সালিমুল হক ২৯ অক্টোবর মারা গেছেন। তিনি একজন দূরদর্শী নেতা, যিনি শুধু জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াইয়ের মশালবাহক ছিলেন না, বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য তার অতুলনীয় কাজ বছরের পর বছর ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে থাকবে।’
সালিমুল হক ১৯৫২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০২২ সালে বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার’স ঘোষিত শীর্ষ ১০ জন প্রভাবশালী বিজ্ঞানীর একজন নির্বাচিত হন। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে তার গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৭ সালে তাকে বুর্টনি অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক সালিমুল মিসরের শারম-আল-শেখে জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সম্মেলন কপ২৭-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ওই সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত গরিব দেশগুলোর জন্য আর্থিক সহায়তা দিতে একটি তহবিল গঠন করার বিষয়ে চুক্তিতে সম্মত হয় বিশ্বের দেশগুলো।
সালিমুলের নেতৃত্বে প্রায় ৩০ বছরের আন্দোলনের ফসল ছিল ওই তহবিল গঠন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো এই তহবিল থেকে সহায়তা পাবে।
বিভিন্ন দেশে কূটনৈতিক মিশনে বাবা মায়ের চাকরির সুবাদে বিশ্ব ভ্রমণের সুযোগ পেয়েছিলেন সালিমুল। সেখান থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি তার অনুরাগ গড়ে ওঠে।
ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বেড়ে উঠা সালিমুল পড়ালেখা করেছেন বায়োকেমিস্ট্রি বিষয়ে। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করে তিনি বাংলাদেশে ফিরে এসে পরিবেশ নিয়ে কাজ শুরু করেন।
গত শতকের শেষ দশকের মধ্যে তিনি আন্তর্জাতিক জলবায়ু আলোচনায় সক্রিয় হয়ে ওঠেন। জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর উপদেষ্টা হিসেবে জাতিসংঘের আলোচনায় তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে সহায়তা করেন তিনি।