ক্লাউডফ্লেয়ার কী? বিশ্বজুড়ে এই বিভ্রাটের কারণই বা কী?

প্রযুক্তি  ডেস্ক
  ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৩:৪৮

ইন্টারনেটের বড় একটি অংশকে আড়ালে থেকে সচল রাখা মার্কিন কোম্পানি ক্লাউডফ্লেয়ার মঙ্গলবার হঠাৎ করেই অনেকের কাছে আরও বেশি পরিচিত হয়ে উঠেছে।
ক্লাউডফ্লেয়ার এমন অনেক বড় কোম্পানির একটি, যারা ইন্টারনেটে পর্দার আড়ালে থেকে কাজ করে। ওয়েবসাইটকে ঠিকমতো চালাতে ও ব্যবহারকারীদের কাছে পেইজ দেখাতে সাহায্য করে এ ধরনের কোম্পানি।
সাধারণত এসব কোম্পানি পেছন থেকেই কাজ করে। ফলে অনেকেই এ ধরনের কোম্পানির সঙ্গে খুব বেশি পরিচিত নন। কেবল সার্ভার ডাউন বা ওয়েবসাইট কাজ করছে না এমন সমস্যা হলেই এসব কোম্পানির নাম সামনে আসে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ পত্রিকা ইন্ডিপেনডেন্ট।
মঙ্গলবার দুপুরের পর এমনটাই ঘটেছে। বিশ্বের অনেক বড় বড় ওয়েবসাইট ঠিকমতো কাজ করছিল না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স ও অন্যান্য সাইটে ঢুকতে গেলে ব্যবহারকারীরা সাধারণ পেইজের বদলে ক্লাউডফ্লেয়ারের একটি বার্তা দেখেছেন।
বার্তায় লেখা ছিল, প্রযুক্তিগত ত্রুটির ফলে ক্লাউডফ্লেয়ারের সিস্টেম ঠিকভাবে কাজ করছে না এবং ‘কয়েক মিনিট পরে আবার চেষ্টা করুন’।

ক্লাউডফ্লেয়ার কী?

ওয়েব অবকাঠামো ও ওয়েবসাইট নিরাপত্তাসেবাদাতা মার্কিন কোম্পানিটি নিজেদেরকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্কগুলোর একটি’ বলে দাবি করে, যাদের অধীনে রয়েছে ‘লাখ লাখ ইন্টারনেট সেবা বা ওয়েবসাইট’।
ক্লাউডফ্লেয়ারের ওয়েবসাইট বলছে, ‘বর্তমানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অলাভজনক সংগঠনকে আমরা আরও দ্রুত ও সুরক্ষিত ওয়েবসাইট ও অ্যাপ ব্যবহারের সুবিধা দিতে পারছি’। তাদের দাবি, ইন্টারনেটকে দ্রুত, নিরাপদ ও স্থিতিশীল রাখতে বড় ভূমিকা রাখছে কোম্পানিটি।
ইন্টারনেটের সবচেয়ে সাধারণ ব্যবস্থা হচ্ছে, কোনো কম্পিউটার একটি ওয়েবসাইটে চাইলে সার্ভার সেই ডেটা পাঠায়। তারপর সেই ডেটা স্ক্রিনে লোড হয়। তবে এ সহজ ব্যবস্থার সমস্যা হচ্ছে, একই সার্ভারে অনেক বেশি মানুষ একসঙ্গে ওয়েবসাইট দেখতে চাইলে সার্ভার সেই চাপ সামলাতে পারে না। ফলে সার্ভার অনেক ধীর হয়ে বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ক্লাউডফ্লেয়ার ও এর মতো বিভিন্ন কোম্পানি ব্যবহারকারীর কম্পিউটার ও মূল ওয়েবসাইটের মাঝখানে কাজ করে। এসব কোম্পানির নিজস্ব শক্তিশালী ও নিরাপদ ডেটা সেন্টার থাকে। এ কারণে ওয়েবসাইটের ডেটা ব্যবহারকারীদের কাছে দ্রুত, নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্যভাবে পৌঁছে দিতে পারে তারা।

বিভ্রাটের কারণ

এক্ষেত্রে সরাসরি সার্ভার থেকে ডেটা না এসে আগে ক্লাউডফ্লেয়ারের মতো কোম্পানির মাধ্যমে আসে। এই কোম্পানিগুলো বিশ্বস্ত ও সন্দেহজনক ডেটা রিকোয়েস্টকে আলাদা করতে পারে ও সন্দেহজনক রিকোয়েস্টকে সার্ভার পর্যন্ত যেতে দেয় না। এতে ওয়েবসাইট বেশি স্থিতিশীল থাকে ও সহজে নষ্ট হয় না।
ঝুঁকির দিক হচ্ছে, ক্লাউডফ্লেয়ারের মতো কোম্পানিতে কোনো সমস্যা হলে অনেক ওয়েবসাইট একসঙ্গে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কারণ নানা ধরনের অসংখ্য ওয়েবসাইট এ কোম্পানির সেবা ব্যবহার করছে। ফলে এক জায়গায় সমস্যা হলে সম্পর্ক নেই এমন অনেকগুলো ওয়েবসাইটও হঠাৎ করে কাজ করা বন্ধ করে দেয়।
গত মাসেও এমনই ঘটনা ঘটেছিল, যেখানে আরেকটি বড় ওয়েব অবকাঠামো কোম্পানি ‘অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস’ বা এডব্লিউএস-এর সিস্টেমে সমস্যা হওয়ায় একইভাবে বহু ওয়েবসাইট বন্ধ হয়েছিল।
ক্লাউডফ্লেয়ার বা এডব্লিউএস-এর মতো কোম্পানির নাম সাধারণ সময়ে চোখে পড়ে না। কারণ তারা কেবল বিভিন্ন ওয়েবসাইটকে ঠিকভাবে চালাতে আড়ালে থেকেই সাহায্য করে।
বিভিন্ন সিস্টেমে যখন সমস্যা বা ওয়েবসাইট বন্ধ হয়ে যায় তখনই সবাই বুঝতে পারেন এসব কোম্পানি কত গুরুত্বপূর্ণ এবং তখনই এরা হঠাৎ করে সবার নজরেও আসে।