টু-জি বা ফিচার ফোন নয়, সরকারের আগ্রহ স্মার্টফোনে। দেশে ফোর-জি’র ব্যবহার বাড়াতে এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এরইমধ্যে দেশের মোবাইল ফোন উৎপাদকদের এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে টুজি বা ফিচার ফোনকে ফোর-জি ফোনে রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে বলে জানা গেছে। মোবাইল খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই উদ্যোগ কিছুটা হলেও ফোর-জি’র গ্রাহক বাড়াতে সাহায্য করবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র কমিশনার (স্পেক্ট্রাম ম্যানেজমেন্ট) শেখ রিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘আমরা ফিচার ফোনে নয়, স্মার্টফোনের দিকে বেশি নজর দিচ্ছি। সম্প্রতি মোবাইল তৈরির অনুমোদন পাওয়া একটি প্রতিষ্ঠানকে (জিও মোবাইল) স্মার্টফোন তৈরির হার বাড়াতে বলেছি। যদিও প্রতিষ্ঠানটি ফিচার ফোনের দিকে বেশি আগ্রহী। তারা ৯০:১০ অনুপাতে ফিচার ও স্মার্ট ফোন তৈরি করতে চায়। আমরা বলেছি, স্মার্টফোনের হার বাড়াতে।’ তিনি জানান, নতুন করে বাজারে আসা নকিয়া মোবাইলের নির্মাতাদেরও স্মার্টফোনের দিকে বেশি নজর দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে জিএসএমএ’র (গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশনস) রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২ সালে দেশের মোট মোবাইল ব্যবহারকারীর ৪৬ শতাংশ ফোর-জি ব্যবহার করে। ২০৩০ সালে তা বেড়ে হবে ৭৩ শতাংশ।
দেশে ফোর-জি নেটওয়ার্ক চালু হয় ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি। বিটিআরসির হিসাব মতে, দেশে সচল মোবাইল সিমের সংখ্যা ১৯ কোটির কিছু বেশি। এর মধ্যে ১০ কোটির কিছু বেশি গ্রাহক ফোর-জি’র। প্রায় ৬ বছরে দেশে ফোর-জি’র যে গ্রাহক সংখ্যা তৈরি হয়েছে, তাতে খুশি নয় মোবাইল অপারেটররা। দেশের প্রায় শতভাগ এলাকা ফোর-জি নেটওয়ার্কের আওতায় এলেও এর প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক নয়। বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করে এখনও রিটার্ন পাওয়া শুরু হয়নি অপটারেটরগুলোর। সব মিলিয়ে ফোর-জি গ্রাহক বাড়ানোর জন্য এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়ে থাকতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে নকিয়া মোবাইল ফোনের ম্যানুফ্যাকচারার ও ন্যাশনাল ডিস্ট্রিবিউটর সেলেক্সট্রা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাকিব আরাফাত বলেন, ‘আমরা স্মার্টফোন বলতে শুধু ফোর-জি ফোন তৈরি করছি। আমরা ইন্টারন্যাশনাল ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কমদামে (৮ হাজার ৯৯৯ টাকায়) ফোর-জি ফোন দিচ্ছি গ্রাহককে।’ তিনি জানালেন, তাদের কারখানায় উৎপাদিত মোট নকিয়া ফোনের মধ্যে ফিচার ফোন ৮০ শতাংশ, আর স্মার্টফোন ২০ শতাংশ। স্মার্ট ফোনের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বিটিআরসি থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। এক প্রশ্নের জবাবে সাকিব আরাফাত বলেন, ‘ফিচার ফোনকে ফোর-জি ফোনে রূপান্তরের বিষয়ে আমরা কাজ করছি। বিটিআরসির অনুমোদন পেলে আমরা এই বিষয়ে উদ্যোগ নেবো।’
অপরদিকে ভারতে নকিয়া, আইটেল, মাইক্রোম্যাক্স, আইকল, এলজি (ফোল্ডিং ফোন), ইনটেক্স, স্নেক্সিয়ান, ক্যাট ব্র্যান্ডের ফিচার ফোনে ফোর-জি ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কোনও কোনোটিতে টু-জি ও থ্রি-জি সুবিধা চালু আছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবশেষ জরিপের তথ্যমতে, দেশের ১০ কোটি মানুষের হাতে মোবাইল ফোন আছে। তবে নিজের এবং অন্যের ফোন (মা, বাবা, সন্তান ইত্যাদি) ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৪ কোটির বেশি।