“যুক্তরাষ্ট্র এমন ব্যক্তি, দল ও দেশগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, যারা তাদের জাতীয় নিরাপত্তায় হুমকি হিসেবে বিবেচিত। অন্যদিকে, ইলন মাস্ক তাদের কাছে এক্স-এর প্রিমিয়াম সেবা বিক্রি করছেন।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এর মালিক ইলন মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীকে নিজস্ব গ্রাহক সেবা ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছেন – এমন অভিযোগ উঠেছে।
অলাভজনক সংস্থা ‘টেক ট্রান্সপারেন্সি প্রজেক্ট (টিটিপি)’র দাবি, লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজবুল্লাহর বেশ কয়েকজন সদস্যের অ্যাকাউন্টে নীল রঙের টিক চিহ্ন যোগ করেছে এক্স।
এ টিক চিহ্ন গুনতে মাসে গুণতে হয় আট ডলার করে, যার মাধ্যমে তুলনামূলক দীর্ঘ পোস্ট ও নিজস্ব অ্যাকাউন্ট প্রচারের সুযোগ পেয়ে থাকেন ব্যবহারকারী।
তবে নিরাপত্তা দূর্বলতাকে কারণ দেখিয়ে এরইমধ্যে কয়েকটি অ্যাকাউন্ট থেকে টিক চিহ্ন সরিয়েছে এক্স।
এ টিক চিহ্নের জন্য অর্থ পরিশোধ ব্যবস্থা চালু করাকে চিহ্নিত করা হয় ২০২২ সালে মাস্কের টুইটার অধিগ্রহণের পর অন্যতম বিতর্কিত সিদ্ধান্ত হিসাবে। সমালোচকদের দাবি, এই সিদ্ধান্তে প্ল্যাটফর্মটিতে ভুল তথ্য ছড়ানোর মাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন ছদ্মবেশী অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগও বেড়ে গেছে।
চিহ্নটি আগে বিনামূল্যেই ছিল, যা থেকে ইঙ্গিত মিলত, কোনো অ্যাকাউন্টের সত্যতা যাচাই করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি।
এর আগে সুবিধাটি পেতেন সাংবাদিক, বৈশ্বিক নেতা ও তারকারা।
তবে, কিছু ক্ষেত্রে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়া ব্যক্তিরাও এ সুবিধা ব্যবহারের সুযোগ পাওয়ায় কোম্পানিটির বিরুদ্ধে এমন সমালোচনা শুরু হয়, যেখানে দাবি ছিল, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আইন লঙ্ঘন করে ভুল ব্যক্তিরা প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন।
এদিকে, এখন সুবিধাটির জন্য আর্থিক ব্যবস্থা চালু হলেও ‘এক্স সম্ভবত নতুন আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে’ বলে দাবি করেছে টিটিপি।
সংস্থাটি বলেছে, তাদের প্রতিবেদন প্রকাশের পর এক্স বিভিন্ন এমন অ্যাকাউন্ট থেকে টিক চিহ্ন সরিয়েছে, যেগুলোর সত্যতা এর আগে তারা যাচাই করেছিল।
টিটিপি আরও যোগ করে, ‘আনসার আল্লাহ’ নামের অ্যাকাউন্ট, যারা ‘হাউদি’ নামেও পরিচিত, সেটিতেও আর্থিক ফি’র বিনিময়ে নীল রঙের টিক চিহ্ন ব্যবহার করতে দেখা গেছে। অ্যাকাউন্টটির ফলোয়ার সংখ্যা ২৩ হাজারের বেশি। তবে, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশেই হাউদি ব্যক্তিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
‘হাউদি’ হল ইয়েমেনভিত্তিক একটি রাজনৈতিক আন্দোলন, যাদের লক্ষ্য গোটা ইয়েমেনে দখল করা এবং যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও সৌদি আরবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্দোলনে সমর্থন দেওয়া।
যুক্তরাজ্যের সরকারি ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, হাউদিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কারণ হল ‘লোহিত সাগরে চলাচল করা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জাহাজে তাদের আক্রমণ সক্ষমতায় ব্যাঘাত ঘটানো ও ইয়েমেনের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার সমর্থন দেওয়া’।
এ প্রসঙ্গে বিবিসি মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের মন্তব্য জানতে চাইলেও তাৎক্ষণিক সাড়া মেলেনি। যুক্তরাষ্ট্র কোন প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ব্যবসা করতে পারবে না, সেটি নির্ধারণ করে থাকে এ সংস্থাটিই।
“যুক্তরাষ্ট্র এমন ব্যক্তি, দল ও দেশগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, যারা তাদের জাতীয় নিরাপত্তায় হুমকি হিসেবে বিবেচিত। অন্যদিকে, ইলন মাস্ক তাদের কাছে এক্স-এর প্রিমিয়াম সেবা বিক্রি করছেন,” নিজস্ব প্রতিবেদনে লিখেছে টিটিপি।
এদিকে, আরও বেশ কিছু আর্থিক ফিভিত্তিক অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করেছে টিটিপি। এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেল ‘এনটিভি’। ইউক্রেইনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পরপরই রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।