বেসিস নির্বাচনে তারা

প্রযুক্তি ডেস্ক
  ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৩:৩৯

আগামী ৮ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতের বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) ২০২৪-২৬ মেয়াদের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন।  
এবারের নির্বাচনে ‘টিম স্মার্টে’র হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন লুজলি কাপলড টেকনোলজিস-এর চিফ অপারেটিং অফিসার সৈয়দা নওশাদ জাহান প্রমি, টিম সাকসেসের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ডিজিডট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাফিসা রেজা বর্ষা এবং এস আর আর কে আইটি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ফারজানা কবির ইশিতা।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি শেষ করে আমেরিকান প্রতিষ্ঠান ভন এয়ার ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশনে জুনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ২০০৬ সালে ক্যারিয়ার শুরু করেন সৈয়দা নওশাদ জাহান প্রমি।  
না আমেরিকায় গিয়ে নয়, বাংলাদেশ থেকেই কাজ শুরু করেছিলেন বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানে। একই প্রতিষ্ঠানে সিপ ডায়ালার প্রজেক্টের প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ শুরু করেন ২০০৯ সাল হতে। কাজ শুরু করেন আমেরিকান পণ্য তৈরিতে। নিজ দক্ষতা এবং কর্মনিষ্ঠায় আমেরিকার বাজারে ক্রেতা সন্তুষ্টি অর্জন করে প্রমির তৈরি সেবাপণ্য। আত্মবিশ্বাস বাড়ে নিজের মাঝে। বিশ্বমানের পণ্যের সিস্টেম সল্যুশনস থেকে শুরু করে টেকনোলজি ডেভেলপমেন্টে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা তাকে উৎসাহিত করে উদ্যোক্তা হতে।
২০১০ সালে প্রথম মেয়ের জন্মের সময় মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকা অবস্থায় জন্ম হয় উদ্যোক্তা প্রমির। গড়ে তোলেন নিজের প্রতিষ্ঠান ‌‘টুগেদার ইনিশিয়েটিভ’। এর মাঝে সিনিয়র পোর্টফোলিও ম্যানেজার (প্রোডাক্ট) হিসাবে যোগদান করেন এসএসডি-টেক এ। টুগেদার ইনিশিয়েটিভের চেয়ারম্যানের দায়িত্বের পাশাপাশি চলছিল এসএসডি-টেকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপালন। সেখানে সিনিয়র পোর্টফোলিও ম্যানেজার (প্রোডাক্ট)-এর দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি, সিনিয়র পোর্টফোলিও ম্যানেজার (ক্যাপাসিটি বিল্ডিং) দায়িত্বও পালন করেছেন প্রমি। এর সাথে হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল (অনলাইন) থেকে বিজনেস অ্যানালিটিকসে, ইকোনমিক্স, ফিনান্সিয়াল অ্যাকাউন্টিংয়ে এইচবিএক্স ‘ক্রেডেনশিয়াল অব রেডিনেস’ (কোর) সম্পন্ন করেন প্রমি।  
২০১৭ সালে লুজলি কাপলড টেকনোলজিসের বাংলাদেশের ডেভেলপমেন্ট সেন্টার হিসাবে এল সি টি সল্যুশনস সেন্টারের যাত্রা শুরু। সেখানেও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেন প্রমি। এরপর গ্লোবাল চিফ অপারেটিং অফিসার হিসাবে লুজলি কাপলড টেকনোলজিসের গ্লোবাল হোল্ডিং কোম্পানির একজন শেয়ার হোল্ডার এবং ডিরেক্টর হিসেবে কাজ শুরু করেন ২০১৯ সাল থেকে। বর্ণাঢ্য প্রযুক্তি ক্যারিয়ারে দেশকেই গুরুত্ব দেন প্রমি। চাইলেই বিশ্বের যেকোনো উন্নত দেশে কাজ করতে পারতেন প্রমি। সুযোগও ছিল। কিন্তু প্রত্যয় ছিল দেশে থেকেই কাজ করবেন বিশ্ববাজারের জন্য।
নিজের এই দীর্ঘ কর্ম জীবনে প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চান দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে। অংশীদার হতে চান স্মার্ট বাংলাদেশে স্বপ্ন বাস্তবায়নে। তাই এবারের বেসিস নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন প্রমি। তিনি মনে করেন, তথ্যপ্রযুক্তিতে তার যে অভিজ্ঞতা রয়েছে তা বেসিস নেতৃত্বের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবে। পাশাপাশি স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে সরকারের যে মেগা পরিকল্পনা,  সেখানেও দেশীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ করবার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। যেখানে নারী-পুরুষ সবাই সমান। এ সুযোগগুলো কাজে লাগাতে হলে দেশীয় সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলোকে তথ্যপ্রযুক্তিতে আরও দক্ষ এবং অধিকার আদায়ে প্রযুক্তিগতভাবে কৌশলী হতে হবে। এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে চান প্রমি। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন, স্থানীয় বাজারে সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলোর সেই সম্ভাবনা আছে। কেবল প্রয়োজন সামগ্রিকভাবে স্মার্ট অ্যাপ্রোজ।
দেশের স্বনামধন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থসাউথ থেকে ইলেকট্রিক্যাল এবং টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে কাজ শুরু করেছিলেন দেশীয় সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান ‌‘টিম ইঞ্জিনে’। ক্যারিয়ারে প্রথম পাঁচ বছরের মধ্যে  ‘টিম ইঞ্জিনে’র ওসিআর সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট টিমের সাথে প্রকল্প সমন্বয়ক (রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগ) হিসেবে দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন বর্ষা। এরপর পরিবারের অনিচ্ছায় চাকরি ছেড়ে নিজ ইচ্ছায় এসেছেন তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়। গড়ে তুলেছেন নিজ প্রতিষ্ঠান জিজিডট লিমিটেড। অ্যাডভান্স ডিজিটাল মার্কেটিং সেবা সরবরাহে বিগত ৯ বছরের বেশি সময় ধরে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন বর্ষা।
দেশে এবং দেশের বাইরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের কাস্টমার তালিকায়। দীর্ঘ নয় বছরে নিজ দায়িত্বে এগিয়ে নিয়েছেন ডিজিডটকে। ছাড়িয়েছেন দেশের সীমা। এবারে নিজ প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে কাজ লাগিয়ে কাজ করতে চান দেশের জন্য এবং ইন্ডাস্ট্রির জন্য। আর সেই ইচ্ছা হতেই বেসিস নির্বাচনে আসা। জয়লাভ করে দায়িত্বে এলে বেসিসে নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ ৩ শতাংশ হতে ২০ শতাংশে উন্নীত করতে চান বর্ষা।
তিনি বিশ্বাস করেন, তথ্যপ্রযুক্তিতে নারীদের কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগ গ্রহণে তাদের উৎসাহিত করে সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি দেশে-বিদেশে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে কাজ করার তার যে অভিজ্ঞতা রয়েছে, সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের জন্য মার্কেটিং তথা ব্র্যান্ডিংয়ে কাজ করতে চান বর্ষা। সেই সঙ্গে কার্যনির্বাহী কমিটির সঙ্গে সাধারণ সদস্যদের দূরত্ব কমিয়ে বেসিসের উন্নয়নে পারস্পরিক সম্পর্কে উন্নতিতে মনোযোগী হবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দেন বর্ষা।
নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ফারজানা কবির ইশিতা। পেশাগতভাবে ক্যারিয়ার শুরু ১৪ বছর আগে শুরু হলেও ব্যবসায়িক ক্যারিয়ার শুরু করেন ২০১৫ সালে এসআরআরকে আইটি লিমিটেড প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, পাশাপাশি কাজ করছেন আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা পরামর্শক হিসাবে।
এসআরআরকে আইটি লিমিটেডের তৈরি ইআরপি সফটওয়্যার এবং এডুকেশনাল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারের রয়েছে দেশীয় এবং বিদেশি বাজারে যথেষ্ট সুখ্যাতি। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে এক ধাপ এগিয়ে ইশিতার আইটি প্রতিষ্ঠান। তাদের তৈরি ইআরপি সফটওয়্যার ব্যবহার করছেন দেশের সাতেরও বেশি তৈরি পোশাক শিল্প কারখানায়। এ ছাড়া এক হাজারের বেশি স্কুলে ব্যবহার করা হচ্ছে তাদের এডুকেশনাল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার। বিশ্ববাজারে এরইমধ্যে অর্জন করেছে ক্রেতাদের আস্থা।
তিনি মনে করেন, ব্যবসা করতে গিয়ে নারী হিসেবে যে সমস্যাগুলো তিনি মোকাবিলা করেছেন, এগুলো সবারই হয়তো করতে হয়। তাই এসব মোকাবিলা করতে যে অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে, তা অন্যকে সাহায্য করতে পারে। তাই বেসিসের নেতৃত্বে তিনি আসতে চান সদস্যদের একজন হয়ে, সদস্যদের সমস্যা সমাধানে কাজ করতে। এ ছাড়া সদস্য হিসেবে নিজের ক্যারিয়ারে যে সমস্যাগুলো ব্যক্তিগতভাবে মোকবিলা করেছেন সেখানে সংগঠনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ করে সদস্যদের জন্য তথ্য এবং নেটওয়ার্কিং সহযোগিতায় কাজ করতে চান। সেই জায়গা থেকে নেতৃত্বে আসতে চান এবং সমস্যা সমাধানে কাজ করতে চান তিনি। পাশাপাশি সদস্যদের জন্য একটি কল্যাণ তহবিল তৈরি করতে চান। কারণ ইশিতা বিশ্বাস করেন, সদস্যদের বিপদে সাহস হয়ে পাশে থাকতে পারার নামই নেতৃত্ব। নারী নেতৃত্বকে উৎসাহিত করতে তাদের জন্য আলাদা করে টেক ইনোভেশন হাবও তৈরি করতে চান তিনি।
আগামী ৮ মে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রাজধানীর রাওয়া কনভেনশন সেন্টারে বেসিস নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলবে। সেদিনই নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হবে।
বেসিসের এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার এক হাজার ৪৬৪ জন। তাদের মধ্যে সাধারণ ৯৩২, সহযোগী ৩৮৯, অ্যাফিলিয়েট ১৩৮ ও আন্তর্জাতিক সদস্য ভোটার ৯ জন। বেসিসের মোট সদস্য সংখ্যা দুই হাজার ৪০১ জন।
বেসিসের নির্বাচন পরিচালনার জন্য টি আই এম নুরুল কবীরকে চেয়ারম্যান ও সৈয়দ মামনুন কাদের ও নাজিম ফারহান চৌধুরী সদস্য করে ৩ সদস্যের নির্বাচন বোর্ড গঠন করা হয়েছে। নির্বাচনে তিন সদস্যের আপিল বোর্ডও গঠন করা হয়েছে। আপিল বোর্ডে চেয়ারম্যান এ তৌহিদ এবং সদস্য আবদুল্লাহ এইচ কাফি ও নাজনীন কামাল।