একটি বা দুটি নয়, চারটি নতুন পিক্সেল ফোন উন্মোচন করেছে গুগল। সঙ্গে আছে নতুন পিক্সেল ওয়াচ এবং পিক্সেল বাডস প্রো। জমকালো এক অনুষ্ঠানে ১৩ আগস্ট নতুন ডিভাইসগুলোর সঙ্গে বিশ্ববাসীর পরিচয় করিয়ে দিয়েছে গুগল।
পিক্সেল ৯, ৯ প্রো এবং ৯ প্রো এক্সএল ও পিক্সেল ৯ প্রো ফোল্ড— চারটি নতুন স্ল্যাব ফোন এনেছে গুগল। প্রতিটি ফোন পাচ্ছে গুগলের নতুন টেন্সর ৪ প্রসেসর। সব কটির ডিসপ্লেই এইচডিআর, ১২০ হার্জ রিফ্রেশরেট গতির ওলেড প্যানেল, যার মধ্যে থাকবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর। প্রতিটি ফোনই পাচ্ছে মূল ৫০ মেগাপিক্সেল এফ ১.৭ অ্যাপারচারের ক্যামেরা, সঙ্গে থাকছে ৪৮ মেগাপিক্সেল এফ ১.৭ অ্যাপারচারের আলট্রাওয়াইড সেন্সর।
পিক্সেল ৯ সিরিজ প্রথম পিক্সেল ফোন, যার ফ্রন্ট ক্যামেরাতেও থাকছে অটোফোকাস। স্যাটেলাইটভিত্তিক ইমার্জেন্সি মেসেজিং সিস্টেমও পাচ্ছে পিক্সেল ৯ সিরিজ। পিক্সেল ৯ ও ৯ প্রো ফোনগুলোর চার্জিং গতি থাকছে ২৭ ওয়াট, পিক্সেল ৯ প্রো এক্সএল-এর চার্জিং গতি ৩৭ ওয়াট এবং তারহীনভাবেও চার্জ করা যাবে। পিক্সেল ৯ প্রো এবং ৯ প্রো এক্সএল বাড়তি হিসেবে পাচ্ছে ১৬ গিগাবাইট র্যাম, পিক্সেল ৯ পাবে ১২ গিগাবাইট।
পিক্সেল ৯ এবং ৯ প্রোর ডিসপ্লের সাইজ ৬.৩ ইঞ্চি, ৯ প্রো এক্সএল-এর ডিসপ্লে ৬.৮ ইঞ্চি। প্রো মডেল দুটির ডিসপ্লে এলো পিক্সেল ফোন, সঙ্গে আরো কিছুরেজল্যুশন ১৪৪০পি, যেখানে পিক্সেল ৯ পাচ্ছে ১০৮০পি। অপটিক্যাল পাঁচ গুণ জুমসহ টেলিফটো ক্যামেরাও প্রো সিরিজের বাইরে থাকছে না, যার রেজল্যুশন ৪৮ মেগাপিক্সেল এবং অ্যাপারচার এফ ২.৮। পিক্সেল ৯ প্রো এবং প্রো এক্সএল পাচ্ছে আলট্রাসনিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর, পিক্সেল ৯-এ থাকছে আগের অপটিক্যাল সেন্সর। শরীরের তাপমাত্রা মাপার সেন্সর এবং ৪২ মেগাপিক্সেল অটোফোকাস সেলফি ক্যামেরাও প্রো সিরিজেই দেওয়া হবে, পিক্সেল ৯ পাবে ১০.৫ মেগাপিক্সেল অটোফোকাস সেলফি ক্যামেরা।
ব্যাটারি পিক্সেল ৯ প্রো এক্সএলে থাকছে ৫০৬০ এমএএইচ, ৯ প্রো এবং ৯ পাচ্ছে ৪৭০০ এমএএইচ। প্রতিটি মডেল পাওয়া যাবে চারটি রঙে। স্টোরেজ ১২৮ গিগাবাইট থেকে শুরু, ৫১২ এবং ১ টেরাবাইট স্টোরেজ শুধু প্রো মডেলে পাওয়া যাবে। পিক্সেল ৯-এর মূল্য ৭৯৯ ডলার থেকে শুরু। পিক্সেল ৯ প্রোর মূল্য ৯৯৯ ডলার এবং ৯ প্রো এক্সএলের মূল্য ১০৯৯ ডলার থেকে শুরু।
ভাঁজযোগ্য পিক্সেলের শুরু হয়েছিল পিক্সেল ফোল্ডের মাধ্যমে, এবার পিক্সেল ৯ প্রো ফোল্ডের মাধ্যমে মূল পিক্সেলের মধ্যেই সেটি স্থান করে নিল। পিক্সেল ৯ প্রোর মতোই ৬.৩ ইঞ্চি বাইরের ডিসপ্লেসমৃদ্ধ ফোল্ডেবলটির ভেতরে থাকছে ৮ ইঞ্চি ওলেড ডিসপ্লে। টেলিফটো, আলট্রাওয়াইড এবং সেলফি ক্যামেরা মাত্র ১০.৫ মেগাপিক্সেল দেওয়া হয়েছে, মূল ক্যামেরা অন্যান্য মডেলের মতোই। ফোনটিতে বেশ কিছু সেন্সরও বাদ পড়েছে, ব্যাটারিও দেওয়া হয়েছে ৪০৬০ এমএইচ, পিক্সেল ৯ প্রো-এর চেয়েও কম। স্টোরেজ থাকছে ২৫৬ এবং ৫১২ গিগাবাইট, রং থাকছে দুটি। এ ছাড়া বাকি হার্ডওয়্যার পিক্সেল ৯ প্রোর মতোই। দাম শুরু এক হাজার ৭৯৯ ডলার থেকে।
পিক্সেল ওয়াচ ৩ এবং বাডস প্রো ২
পিক্সেল বাডস প্রো ২-এর বক্সটি দেখতে আগের মডেলটির মতোই। তবে বাডসের নতুন উইংসমৃদ্ধ ডিজাইন কানে আরো আরামদায়কভাবে বসবে বলেছে গুগল। এর মধ্যে থাকা নতুন টেনসির এ১ চিপ শুধু উচ্চমানের অডিওই দেবে না, নয়েজ ক্যান্সেলেশনেও আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ পারফরম্যান্স দেবে। টানা ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা গান শোনা যাবে এতে। দাম শুরু ২২৯ ডলার থেকে। পিক্সেল ওয়াচ ৩-এর সঙ্গে ওয়াচ ২-এর হার্ডওয়্যার তফাত সামান্যই। আরো উজ্জ্বল এবং চিকন বেজেলসমৃদ্ধ ডিসপ্লে এবং নতুন ৪৫ মিমি সাইজ অপশন ছাড়া বাকি হার্ডওয়্যার ওয়াচ ২-এর মতোই। মূল তফাতগুলো সব ওয়্যার ওএসের নতুন আপডেটে যুক্ত করা হয়েছে। অসংখ্য হেলথ সেন্সিং সিস্টেম, নতুন সব অ্যাপের সঙ্গে কানেকশন সুবিধা থেকে শুরু করে হেলথ ট্র্যাকিংয়ের নতুন অ্যালগরিদমগুলোর শক্তিতে ওয়াচ ৩ অবশেষে কেনার মতো একটি ডিভাইসে পরিণত হয়েছে। দাম শুরু ৩৪৯ ডলার থেকে।
সফটওয়্যারেই মূল জাদু
প্রতিটি নতুন পিক্সেল ডিভাইসে গুগল জেমিনি ন্যানো বিল্ট-ইন থাকবে। ফলে সরাসরি ফোনেই টেক্সট জেনারেশন, ট্রান্সলেশন, কথা থেকে লেখা ট্রান্সক্রিপশনের মতো কাজগুলো করা যাবে। এ ছাড়া জুম এনহান্সের মাধ্যমে জুম করার সময় ছবি ফেটে যাওয়া কমানো, অ্যাড মি ফিচারের মাধ্যমে তোলা ছবির মধ্যে নিজেকে জুড়ে দেওয়া এবং অন্যান্য এডিটিং ফিচারও ফোনগুলোতে সরাসরি চালানো যাবে। ওয়াচ থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং বাডসের ব্যবহার বিশ্লেষণ করেও ব্যবহারকারীর জন্য বেশ কিছু কাজ অটোমেট করবে জেমিনি। মূলত পিক্সেল ৯ সিরিজের কাজ হবে জেমিনিকে ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া।