মাল্টিটাস্কিং ও প্রফেশনালদের জন্য আসুস জেনবুক ডুও

প্রযুক্তি  ডেস্ক
  ২৫ আগস্ট ২০২৪, ২৩:৩৬

ল্যাপটপে ডুয়াল-স্ক্রিন আইডিয়া খুব নতুন কিছু নয়। অনেক বছর ধরেই ডুয়াল স্ক্রিনের ফিচার নিয়ে আসছে বেশ কিছু টেক ব্র্যান্ড। তবে এর মধ্যে কেবল কয়েকটি ল্যাপটপ ব্র্যান্ড বাজারের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারছে। আসুস সেদিক থেকে এগিয়ে।

কারণ ব্র্যান্ডটি কেবল ডুয়াল স্ক্রিন নয়, এর সঙ্গে নিয়ে আসছে অন্যান্য ফিচার। ওলেড স্ক্রিন, এআই প্রসেসর, ডিসপ্লের নানান মোড, মাল্টিটাস্কিং ফাংশন, পোর্টেবিলিটি, ভার্চুয়াল কি-বোর্ডসহ আরও ফিচার নিয়ে ডিজাইন করছে তাদের ল্যাপটপ।
 ২০১১ সালে এসার ব্র্যান্ডের আইকোনিয়া ৬১২০ ল্যাপটপে ছিল ১৪ ইঞ্চির দুটি ডিসপ্লের ফিচার। পরবর্তীতে ২০২০ সালের দিকে ‘কনসেপ্ট ডুয়েট’ নিয়ে আসে ব্র্যান্ড ডেল। এমনকি অ্যাপলও কয়েক বছর আগে ম্যাকবুক প্রো-তে ‘টাচ বার’ ফিচার নিয়ে এসেছিল কিন্তু পরবর্তীতে সেই ফিচারটি সরিয়ে ফেলা হয়।
অন্যদিকে, ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো তাইচি মডেল ল্যাপটপটির মাধ্যমে আসুস বাজারে নিয়ে আসে ডুয়াল ডিসপ্লে বা দুটি স্ক্রিন ফিচার। এরপর বিভিন্ন মোডে ডুয়াল ডিসপ্লের নিয়ে আসতে থাকে আসুস। ২০১৯ সালে জেনবুক প্রো ডুও, এবং ২০২৩ সালে আরওজি জিফাইরাস ডুও মডেলে নিয়ে দেখা যায় ডুয়াল ডিসপ্লে। তবে এই মডেলগুলোতে দ্বিতীয় ডিসপ্লের অর্ধেক অংশ জুড়েই ছিল কীবোর্ড। এর মধ্যে ২০২২ সালে আসুস নিয়ে আসে আরেকটি ল্যাপটপ– জেনবুক ফোল্ড ১৭ ওলেড। যেখানে ফোল্ডিং স্টাইলে ডিসপ্লেটি দুটি ডিসপ্লে হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

চলতি বছরে আসুস সর্বশেষ এবার নিয়ে এসেছে আসুস জেনবুক ডুও (২০২৪)। আসুস ব্র্যান্ডটির এই জেনবুক সিরিজটি ডুয়াল স্ক্রিনের জন্য বরাবরই গ্রাহকদের পছন্দের শীর্ষে। ২০২৪ এর আসুস জেনবুক ডুও ল্যাপটপটিতে এবার ডুয়াল-স্ক্রিন ফিচারের পাশাপাশি অন্যান্য ফিচারে এসেছে নতুনত্ব। যেমন এবারের জেনবুকের কি-বোর্ডটি ডিট্যাচেবল এবং এর সেকেন্ডারি ডিসপ্লেটি সম্পূর্ণভাবে ফুল ডিসপ্লে হিসেবে কাজ করবে। যেটি কিনা পূর্বের বেশিরভাগ জেনবুক ল্যাপটপগুলোতে ছিল না। এছাড়া, বর্তমানের এআইয়ের সুবিধা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাওয়ায় এই ল্যাপটপের প্রসেসরে এনপিইউ বা নিউরাল প্রসেসিং ইউনিটে ব্যবহার করা হয়েছে ডেডিকেটেড এআই ইঞ্জিন। 
দেশের বাজারে আসুসের এই নতুন জেনবুকটির দাম ২ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা থেকে শুরু হয়েছে। 
সিম্পল ডিজাইন এবং ভার্সেটাইল ফিচার
জেনবুক ডুও ল্যাপটপটির ডিজাইন বাইরে থেকে দেখলে সাধারণ মনে হলেও ব্যবহার করার সময় বোঝা যায় এর দারুণ সব ফিচার। ল্যাপটপটি আকারে ১৪ ইঞ্চি। দুটি স্ক্রিন থাকা সত্ত্বেও জেনবুক ডুও ল্যাপটপটি ওজনে খুব ভারী নয়। ওজনে এটি ১.৬৫ কেজি এবং পাতলায় ০.৭৮ ইঞ্চি। আর কি-বোর্ড ছাড়া, এর ওজন মাত্র ১.৩৫ কেজি। ল্যাপটপটির বাইরের দিকে রয়েছে বেশ কিছু পোর্ট– দুটি থান্ডারবোল্ট ৪ পোর্ট, একটি ইউএসবি ৩.২ টাইপ-এ পোর্ট এবং একটি এইচডিএমআই ২.১ জ্যাক। 
ল্যাপটপটির আসল বিশেষত্ব বোঝা যায় এটি খোলার পর, এর ভেতরের অংশে। যেখানে আপনি পাবেন এরগোসেন্সের একটি ফিজিক্যাল কি-বোর্ড এবং টাচপ্যাড। এই কি-বোর্ডটি ডিট্যাচড বা আলাদা করলেই সেটি হয়ে যাবে ল্যাপটপটির দ্বিতীয় ডিসপ্লে। যেটি কিনা পুরো ল্যাপটপে এনে দেয় মূল আকর্ষণ। অর্থাৎ ডিট্যাচড কি-বোর্ডের আর এই দুটি ডিসপ্লে মিলে পুরো ল্যাপটপটি তখন ব্যবহার করা যাবে একাধিক কাজের জন্য। আর এখানেই জেনবুক নিয়ে আসে ল্যাপটপে বহুমুখী ফাংশনের সুবিধা।  

ভিন্ন মোডে কি-বোর্ড ব্যবহার 
ল্যাপটপটির ফিজিক্যাল কি-বোর্ডটির নিচের প্যানেলে রয়েছে টাচপ্যাড। ব্যবহারকারীর সাথে কখনো এই ফিজিক্যাল কি-বোর্ডের অংশটি না থাকলেও আছে বিকল্প সমাধান- ভার্চুয়াল কি-বোর্ড। আট আঙুলের স্পর্শে দ্বিতীয় ডিসপ্লেটি রুপান্তর হয়ে যাবে সম্পূর্ণ একটি ভার্চুয়াল কি-বোর্ডে, যেখানে ট্র্যাকপ্যাডের সুবিধাও আছে। ভার্চুয়াল কি-বোর্ড হওয়ায় এতে এর মোডগুলো পরিবর্তন করা যায় সহজে। যেমন কারো যদি ডেটা এন্ট্রি করার প্রয়োজন হয় তখন ভার্চুয়াল টাচপ্যাডটি পাশে সরিয়ে সেখানে ভার্চুয়াল নম্বরের প্যাডটি এনে ব্যবহার করতে পারবে। 

ডুয়াল ডিসপ্লেতে মাল্টিটাস্কিং  
ল্যাপটপটির দুটি ডিসপ্লে একটি সেটআপে একইসাথে ব্যবহার করার জন্য ল্যাপটপটির সাথে আছে একটি বিল্ট-ইন কিকস্ট্যান্ড। এই ক্ষেত্রে কি-বোর্ডটি ব্লুটুথের মাধ্যমে কানেক্ট করতে হবে। ওয়্যারলেস হয়ে যাওয়ায় তখন কি-বোর্ডটি ডেস্কটপে বা সুবিধাজনক স্থানে রেখে কাজ করা যাবে।

এছাড়া, জেনবুক ডুওয়ের ডিসপ্লেটি পোর্ট্রেট মোডেও ব্যবহার করা যাবে। যেখানে দুটি ডিসপ্লে পাশাপাশি ভার্টিক্যাল অবস্থায় রেখে কাজ করতে হবে। দুটি ডিসপ্লে জুড়ে একই কাজ অথবা দুটি ডিসপ্লেতে ভিন্ন দুটি আলাদা কাজ করতে পারবে ব্যবহারকারীরা। আবার অন্যের সাথে কোন ফাইল বা প্রেজেন্টেশনের স্লাইডের মতো কোন কিছু শেয়ার করতে চাইলে ডিসপ্লেগুলো ভিন্ন অ্যাঙ্গেলে শেয়ারিং মোডে ব্যবহার করা যাবে।    

ভিজ্যুয়াল এবং সফটওয়্যার 
ডুওর মূল আকর্ষণ হল এর ১৪ ইঞ্চির দুটি ডিসপ্লে। এর প্যানেলগুলো ওলেড। এর ডিসপ্লের রিজল্যুশন ৩কে এবং রিফ্রেশ রেট ১২০ হার্জ। ল্যাপটপটি উজ্জ্বলতায় প্রায় ৫০০ নিট। সব মিলিয়ে এর ভিজ্যুয়ালও চমৎকার। দুটি প্যানেল একসঙ্গে কাজ করলে এই রঙিন ভিজ্যুয়াল আরও স্পষ্ট হয়ে উঠে। 

জেনবুক ডুওর ডিসপ্লেটির উপরের দিকে একটি মেনুবার রয়েছে। এর অপশনগুলো ব্যবহার করে সহজেই ল্যাপটপ ব্যবহারকারীরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যাপ্লিকেশনগুলো এক ডিসপ্লে থেকে অন্য ডিসপ্লেতে স্থানান্তর কিংবা ড্রপ করতে পারবে। অপরদিকে, ডিসপ্লের একবারে নিচের দিকে আছে একটি ফ্লোটিং বাটন। যেখানে রয়েছে আসুসের ‘স্ক্রিনএক্সপার্ট’ সফটওয়্যারের নির্দিষ্ট একটি প্যানেল অপশন। এই প্যানেলটিতে রয়েছে কিছু শর্টকাট অপশন যার মাধ্যমে ডিসপ্লের উজ্জ্বলতা বা ব্রাইটনেস এডজাস্ট করা যাবে। এছাড়া, নির্দিষ্ট কোন প্যানেল এবং অ্যাপের উইজেটও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে এই সফটওয়্যারটির মাধ্যমে। 

মাল্টিটাস্কিং
পারফরম্যান্সে এআই 
জেনবুক ডুও ল্যাপটপটিতে প্রসেসর হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ইন্টেল কোর আল্ট্রা ৭.১৫৫ এইচ প্রসেসর। সাথে আছে ১৬ জিবি র‍্যাম এবং ১ টেরাবাইট এনভিএমই এসএসডি। বেস কনফিগারেশনটি খুব দ্রুত হলেও আরও সুবিধা পেতে ল্যাপটপটি দ্বিগুণ মেমরি এবং আল্ট্রা ৯ চিপ দিয়ে আপগ্রেড করা যাবে। এই ল্যাপটপের এনপিইউয়ে আছে ডেডিকেটেড এআই ইঞ্জিনটি। এআই-সম্পর্কিত কাজগুলো আরও দক্ষভাবে এবং দ্রুত করার জন্য এটি ডিজাইন করা হয়েছে। বিশেষভাবে, ইমেজ বা ভিডিও এডিটিংয়ের মতো কাজগুলো আরও সহজে করতে পারবে ল্যাপটপ ব্যবহারকারীরা ।

ব্যাটারি 
কোন ল্যাপটপে দুটি ডিসপ্লে থাকলে এটি মনে হতেই পারে যে, এতে চার্জ অনেক বেশি প্রয়োজন। কিন্তু জেনবুক ডুও ল্যাপটপটি সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। কেবল একটি স্ক্রিন চালু থাকা অবস্থায় ল্যাপটপটি টানা ১৩ ঘন্টা ৩০ মিনিট স্থায়ী থাকে এবং দুটি ডিসপ্লে চালু অবস্থায় ল্যাপটপটি চলতে পারে ১০ ঘণ্টা ৩০ মিনিট।

যাদের জন্য এই জেনবুক
জেনবুক ডুওয়ের মতো ল্যাপটপগুলো পোর্টেবল হওয়ায়, যারা অনেক বেশি ট্র্যাভেল করে থাকেন তাদের জন্য এটি বেশি ব্যবহারযোগ্য। যেমন গাড়ি কিংবা প্লেনে বসে ল্যাপটপটির কি-বোর্ড ডিট্যাচড করে ব্যবহারকারী স্বাচ্ছন্দ্যে এতে কাজ করতে পারবে। আবার যারা একাধিক মনিটরে কাজ করতে পছন্দ করে অথবা ট্র্যাভেল টাইমেও একটি সিস্টেমের এক্সপেরিয়েন্স চায় তাদের জন্যও এই জেনবুক ডুও সেরা একটি ডিভাইস। এই ল্যাপটপে অনেকগুলো পোর্ট থাকায় কোন ডঙ্গল বহন করারও ঝামেলা নেই। 

ডেস্কটপে বড় জায়গাজুড়ে এই জেনবুক ডুওতে কাজ করলে, ব্যবহারকারীদের কাছে এটি হয়ে উঠবে একটি ওয়ার্কস্টেশন। বিশেষভাবে, কনটেন্ট ক্রিয়েটর, ক্রিয়েটিভ প্রফেশনাল বা রিমোট ওয়ার্কারদের মতো ইউজাররা, যাদের কিনা প্রচুর স্ক্রিন স্পেস দরকার হয় তাদের জন্য এটি একটি পারফেক্ট ডিভাইস। ওয়ার্ক অথবা গেমিং- সবসময়েই ল্যাপটপটির ওলেড স্ক্রিনের কারণে এর ভিজ্যুয়াল থাকে দুর্দান্ত। আসুসের পূর্বের জেনবুক ডুও মডেলের আদলে ২০২৪ এর জেনবুক ডুও ল্যাপটপটি ডিজাইন করা হয়েছে যেখানে আরও অভিনব ফিচার যুক্ত হয়েছে। ব্যবহারকারীদের জন্য এই ল্যাপটপটি যেমন বহনে সুবিধাজনক তেমনি কাজের ক্ষেত্রেও উপযোগী।