পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে বর্তমানে চারটি পৃথক ঘূর্ণিঝড় সক্রিয় রয়েছে, যা ফিলিপাইনের জন্য নতুন করে বিপদের ঘণ্টা বাজাচ্ছে। জাপানের আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, ১৯৫১ সালে রেকর্ড রাখা শুরু হওয়ার পর থেকে নভেম্বর মাসে এই প্রথমবারের মতো নামকৃত চারটি ঘূর্ণিঝড় একসঙ্গে সক্রিয় রয়েছে। এছাড়া, যেকোনো মাসের জন্য একসঙ্গে চারটি ঝড় সক্রিয় হওয়ার ঘটনা গত সাত বছরে এটিই প্রথম।
যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের স্যাটেলাইট চিত্র অনুযায়ী, ভিয়েতনাম থেকে গুয়াম পর্যন্ত বিস্তৃত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এই চারটি ঝড়ের অবস্থান দেখা গেছে। বর্তমানে সক্রিয় এই ঝড়গুলো হলো টাইফুন ইয়িনক্সিং, টাইফুন তোরাজি, ক্রান্তীয় ঝড় উসাগি এবং ক্রান্তীয় ঝড় মান-ই।
একের পর এক ঝড়ে বিপর্যস্ত ফিলিপাইন
ফিলিপাইনে প্রতি বছরই একাধিক ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘন ঘন ঝড়ের কারণে দেশটির পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ এখনো বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে।
গত বৃহস্পতিবার টাইফুন ইয়িনক্সিং উত্তর-পূর্ব ফিলিপাইনে আঘাত হানে, যা ছিল ক্যাটাগরি ৪ আটলান্টিক হারিকেনের সমতুল্য। ঝড়টি ব্যাপক বৃষ্টিপাত, জলোচ্ছ্বাস এবং ভূমিধস ঘটালেও কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। ঝড়টি ফিলিপাইন থেকে দক্ষিণ চীন সাগরের দিকে অগ্রসর হয়ে হাইনান প্রদেশের ওপর দিয়ে ভিয়েতনামের দিকে চলে যায়। সেখানে এটি ভারী বৃষ্টিপাত ঘটাচ্ছে।
এর পরপরই লুজোন দ্বীপের অরোরা প্রদেশে আঘাত হানে টাইফুন তোরাজি, যা ক্যাটাগরি ১ আটলান্টিক হারিকেনের সমতুল্য। ঝড়ের আঘাতে হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। তোরাজি এখন দুর্বল হয়ে ক্রান্তীয় ঝড়ে পরিণত হয়েছে এবং দক্ষিণ চীন সাগরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এমনিতেই জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা অঞ্চলগুলোর একটি। অঞ্চলটি উষ্ণ সমুদ্র এবং প্রবল ঝড়ের মতো চরম আবহাওয়ার সম্মুখীন হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, সমুদ্রের তাপমাত্রা অতীতের তুলনায় বেশি উষ্ণ, যা ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি বৃদ্ধির বড় কারণ। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে সমুদ্রের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বছরের শেষের দিকে এমন তীব্র ঝড়ের ঘটনা আরও বাড়তে পারে।
গত জুলাইয়ে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা এবং লুজোনের বিভিন্ন অঞ্চল টাইফুন গ্যামির কারণে মারাত্মক বন্যার সম্মুখীন হয়। সেপ্টেম্বরেদক্ষিণ চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অংশে আঘাত হানে টাইফুন ইয়াগি। এতে বহু মানুষ প্রাণ হারান।
এখন চারটি ঝড়ের কারণে নতুন করে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আরও স্পষ্ট করে তুলছে।