পাকিস্তানের পাঞ্জাবে বায়ুদূষণের কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সী এক কোটি ১০ লাখেরও বেশি শিশু ঝুঁকিতে রয়েছে বলে সতর্কতা দিয়েছে ইউনিসেফ। বায়ুদূষণ কমাতে ও শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংস্থাটির পাকিস্তান প্রতিনিধি আবদুল্লাহ ফাদিল।
ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানায়, ভয়াবহ বায়ুদূষণের কবলে পাকিস্তানের ঘনবসতিপূর্ণ প্রদেশ পাঞ্জাব। প্রায় ১৩ কোটি নাগরিকের এই প্রদেশের বায়ুর মানকে গত অক্টোবরে বিপর্যয়কর বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। এর জেরে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত স্কুল ও ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক স্থান বন্ধ করতে বাধ্য হয় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। জমায়েতেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
আইকিউ-এয়ারের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর) লাহোরে বায়ুমানের সূচক ছিলো ৪০০’রও বেশি। এমন পরিস্থিতিতে রাস্তায় বের হলে চোখ ও গলায় জ্বালাপোড়া হচ্ছে বাসিন্দাদের। এরই মধ্যে বায়ু দূষণজনিত অসুস্থতায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অন্তত ৯০০ জন। চিকিৎসা নিতে হয়েছে ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষকে।
এমন পরিস্থিতিতে, শিশুদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন ইউনিসেফের পাকিস্তান প্রতিনিধি আবদুল্লাহ ফাদিল। তিনি বলেন, আমি ছোট শিশুদের বিষয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। কেননা, তারা বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হচ্ছে। বতর্মানের রেকর্ডভাঙা বায়ুদূষণের আগেও পাকিস্তানে ১২ শতাংশ পাঁচ বছর বয়সীর কম শিশুদের মৃত্যুর কারণ ছিল এই বায়ুদূষণ।
তিনি জানান, গত সপ্তাহে লাহোর ও মুলতানে বায়ু দূষণের মাত্রা রেকর্ড ভেঙেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বায়ু মানের নির্দেশিকাগুলোর ১০০ গুণেরও বেশি বায়ু দূষণ ঘটছে। কয়েক ডজন শিশু সহ শত শতকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ও বায়ুদূষণ এত মারাত্মক রুপ ধারণ করেছে, যে মহাকাশ থেকে তা দৃশ্যমান।
‘এই বছরের বায়ুদূষণের প্রভাব মূল্যায়ন করতে সময় লাগবে। তবে আমরা জানি যে, বাতাসে দূষণের পরিমাণ দ্বিগুণ বা তিনগুণ বৃদ্ধির প্রভাব মানুষের শরীরে খুব বাজেভাবে পড়বে। বিশেষ করে, শিশু ও গর্ভবতী নারীদের উপর বিধ্বংসী প্রভাব পড়বে।’
আবদুল্লাহ ফাদিল বলেন, শিশুরা বায়ু দূষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কারণ তাদের ফুসফুস ছোট ও তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অনেক কম থাকে। তারা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় দ্বিগুণ দ্রুত শ্বাস নেয় ও প্রায়ই মুখের মাধ্যমে অনেক বেশি বাতাস গ্রহণ করে। তাই দূষিত এই বাতাস তাদেরকে প্রাণঘাতী শ্বাসযন্ত্রের রোগে আক্রান্ত করবে।
তার মতে, বাতাস দূষণের সম্ভাব্য প্রভাব শিশুদের ফুসফুস ও মস্তিষ্কের উপর চরম হতে পারে। ক্ষতিকর কণাযুক্ত বায়ু মস্তিষ্কের টিস্যুগুলোকে ক্ষতি করতে পারে ও জ্ঞানের বিকাশে স্থায়ী ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। অন্যদিকে, গর্ভবতী নারীরা যখন দূষিত বায়ুর সংস্পর্শে আসেন, তখন তাদের শ্বাসকষ্ট হয়, সময়ের আগেই প্রসবের আশঙ্কা থাকে ও বাচ্চার ওজন কম হতে পারে।
ফাদিল জানান, বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শিশুদের রক্ষা করতে ধোঁয়া-আক্রান্ত এলাকার স্কুলগুলি নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। এর ফলে পাঞ্জাবের প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ শিশুর পড়ালেখা ব্যাহত হচ্ছে। এমনিতেই পাকিস্তানে স্কুলে ভর্তি হতে না পারা ২ কোটি ৬০ লাখ শিশু জরুরি অবস্থার কবলে রয়েছে। এমন পরিস্থিতি বায়ুদূষণের মাত্রা কমাতে ব্যর্থ হলে শিক্ষার আরও ক্ষতি হবে।
এদিকে, ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিও বিশ্বের অন্যতম দূষিত বায়ুর শহর। কুয়াশা আর দূষণে শ্বাসকষ্টে ভুগছে নাগরিকরা। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকালে দিল্লির আইকিউ-এয়ারের সূচক ছিলো ৩৫৫। যা বিপজ্জনকের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। এমন পরিস্থিতিতে দীর্ঘমেয়াদী সমাধান চাইছে দিল্লিবাসী।
দিল্লিতে বায়ুদূষণের জন্য পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশের মতো কাছের বিভিন্ন রাজ্যে ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানোকে দায়ি করা হয়। ২০২৩ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের রেকর্ড করেছিল নয়াদিল্লি।
সূত্র: ইউনিসেফ