অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে চলতি বছর আমেরিকা ও ইউরোপকেও পেছনে ফেলছে এশিয়া। চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও জাপানের মতো দেশে অভ্যন্তরীণ চাহিদা শক্তিশালী থাকার কারণে সার্বিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী থাকবে এশীয় অর্থনীতির সূচক। চলমান বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেও ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে এশিয়ার অবস্থা থাকবে সন্তোষজনক।
মার্কিন বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ‘মরগান স্ট্যানলি’ এই পূর্বাভাস দিয়েছে। সিএনবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মরগান স্ট্যানলির প্রধান চেতন আহইয়া এই পূর্বাভাস দেন।
তিনি বলেন, “সবচেয়ে বড় কথা এশিয়া ও জাপান এ মুহূর্তে আমেরিকা ও ইউরোপের তুলনায় ভালো করছে। তার প্রধান কারণ সেসব দেশে অভ্যন্তরীণ চাহিদা যথেষ্ট শক্তিশালী।”
গত বছরের শেষ দিকে কোভিড-১৯-পরবর্তী নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নেয় চীন। সচল হতে থাকে অর্থনৈতিক কার্যক্রম। চলতি বছরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে সব ধরনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম। বিশেষ করে নির্মাণ প্রকল্প ও আবাসন খাত লাভ করেছে নতুন মাত্রা। চীনের গতিশীলতার প্রভাব সার্বিকভাবে প্রভাবিত করেছে এশিয়ার বাণিজ্যিক চালচিত্রও। অন্যদিকে এশীয় দেশগুলোর অর্থনৈতিক পদ্ধতি ও নীতিমালাও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
অভ্যন্তরীণ চাহিদার দিক থেকে ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও জাপান যথেষ্ট শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সংকট থাকলেও দেশগুলো কৌশলগতভাবে মোকাবেলায় সাফল্য দেখিয়েছে।
চেতন আহইয়ার দাবি, ২০২৩ সালের শেষে অর্থাৎ চলতি বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে অঞ্চলগুলো অর্থনৈতিকভাবে দারুণ কিছু করবে। এশীয় অর্থনীতি নিয়ে একই আশাবাদ ব্যক্ত করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল।
আইএমএফ –এর দাবি, বিশ্ব অর্থনীতি সংকট অবস্থা পার করলেও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোয় অর্থনৈতিক কার্যক্রম গতিশীল থাকবে।
আইএমএফ সম্প্রতি ব্লগে লিখেছে, “চলতি বছরে বৈশ্বিক অর্থনীতির ৭০ শতাংশ এশীয় অঞ্চল থেকে আসবে বলে আমরা মনে করি। গত বছরে বিস্তৃতি ছিল ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। বর্তমানে তা ৪ দশমিক ৬ তে উন্নীত হয়েছে।”
চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার চাইতেও দ্রুত হচ্ছে। দেশটির জন্য মূল্যস্ফীতি বড় কোনও সমস্যা না এ মুহূর্তে। এ কথা সত্য, মূল্যস্ফীতি কিছুটা প্রভাব ফেলছে উপাত্ত সূচকে। কিন্তু বড় কোনও বাধা প্রমাণিত হয়নি এখন পর্যন্ত। দেশটির নির্মাণ স্থাপনা ও আবাসন প্রকল্প খাত তুলনামূলকভাবে দ্রুত শক্তিশালী হয়ে উঠছে। একই সঙ্গে শক্তিশালী হচ্ছে খুচরা ও পাইকারি বাজার, যা সূচকের ঊর্ধ্বমুখী গতিকে নিশ্চয়তা দিয়ে যাচ্ছে। করোনা-পরবর্তী চীনে আরও বেশিসংখ্যক মানুষ বাসা ক্রয় করতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। সম্প্রতি পিপল’স ব্যাংক অব চায়না চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের জরিপ প্রকাশ করেছে। তাতে দেশটিতে মহামারী যাওয়ার পর থেকে নতুন এ প্রবণতার প্রমাণ পাওয়া যায়।
এদিকে বিশ্বব্যাংক মনে করে, পূর্ব এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনীতি প্রত্যাশার চাইতেও বেশি বাড়বে চলতি বছরে। একদিকে চীনের কার্যক্রম গতি পেয়েছে। অন্যদিকে গতি পেয়েছে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার কার্যক্রম। সূচকের প্রবৃদ্ধিতে ভারতও গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটকের ভূমিকা পালন করতে পারে বছরজুড়ে। এশিয়ার ব্যাংক খাতকে মহামারী-পরবর্তী সময়ে পুনর্গঠন করা হয়েছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের পর বাণিজ্যিক কার্যক্রমেও এসেছে পরিবর্তন। ইউরোপ ও আমেরিকা যতটা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে, এশিয়ার ওপর প্রভাব ততটা প্রকট হয়নি। ফলে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সূচকে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষণীয়। সূত্র: সিএনবিসি