রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে জাপানের নিহত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের স্ত্রী আকিয়ে আবে সাক্ষাৎ করেছেন বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন। ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে জাপান-রাশিয়ার 'উত্তেজনাপূর্ণ' কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে আকস্মিক এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হলো।
শিনজো আবের স্ত্রী আকিয়ে আবে বর্তমানে কোনো সরকারি দায়িত্বে নেই। টোকিও সরকার জানিয়েছে, তার এই সফর সম্পর্কে তাদের কোনো যোগাযোগ হয়নি।
৬২ বছর বয়সী আকিয়ে আবে সর্বশেষ পাঁচ মাস আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমন্ত্রণে ফ্লোরিডার মার-আ-লাগো সফর করেন।
সাক্ষাতকালে পুতিন আকিয়ে আবেকে বলেন, 'আপনার স্বামীর মৃত্যু - তাকে যারা চিনতেন তাদের সকলের জন্যই এক ধাক্কা ছিল।' পুতন প্রয়াত জাপানি প্রধানমন্ত্রীকে 'এমন একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে বর্ণনা করেছেন যিনি জানতেন, কখন দৃঢ় থাকতে হবে এবং কখন শক্তিশালী হতে হবে। একই সাথে, তিনি যখনই সম্ভব একজন অত্যন্ত আন্তরিক এবং ভদ্র ব্যক্তি ছিলেন।'
পুতিন আরও বলেন, 'আপনার স্বামী রুশ-জাপানি সম্পর্কের উন্নয়নে অনেক কিছু করেছেন এবং আমার সাথে তার খুব ভালো ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। তার আমন্ত্রণে জাপান সফরের কথাও আমার মনে আছে। আমি জানি তিনি রুশ-জাপানি সহযোগিতার সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধারের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন।'
প্রকাশিত ভিডিওতে প্রেসিডেন্ট পুতিনের কথা শুনে আকিয়ে আবেকে চোখের জল ফেলতে দেখা গেছে।
এ সময় আকিয়ে বলেন, 'আমি রাজনীতিবিদ নই এবং এখনই রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই না। তবে, আমি একটা কথা বলতে পারি: রাশিয়া জাপানের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী।'
তিনি বলেন, 'এই কঠিন সময়েও যদি দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও মানবিক আদান-প্রদান বিকশিত হয়, তাহলে তা আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের হবে।'
পুতিনকে আকিয়ে আরও বলেন, ‘আমার স্বামীর স্বপ্ন ছিল আমাদের দুই দেশের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি সম্পাদন করা।’ জবাবে পুতিন বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন; আমরা আজ সে প্রসঙ্গে যাচ্ছি না।’
আকিয়ে আবে জানান, তার স্বামী পুতিনের সঙ্গে অন্তত ২৭ বার সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন সংকট শুরুর পরেও আমার স্বামী আপনার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার জীবন সেখানেই থেমে যায়।’
এ সময় পুতিন আকিয়ে আবেকে ফুল উপহার দেন এবং বলশই থিয়েটারে ব্যালে উপভোগের জন্য প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের লিমুজিনও তাকে ব্যবহারের জন্য দেন।
রুশ প্রেসিডেন্ট ২০১৬ সালে শিনজো আবের নিজ এলাকা জাপানের ইয়ামাগুচি অঞ্চলে সফর করেন। দুই দেশের সম্পর্ক কখনোই উষ্ণ ছিল না। আর ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর তা আরও অবনতি ঘটে।
উল্লেখ্য, ধনাঢ্য পরিবারে জন্ম নেওয়া আকিয়ে আবে ১৯৮৭ সালে শিনজো আবের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ২০০৬-০৭ এবং ২০১২-২০২০ মেয়াদে আবের প্রধানমন্ত্রীত্বকালে তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি লাভ করেন।
শিনজো আবে ছিলেন জাপানের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালনকারী প্রধানমন্ত্রী। অর্থনৈতিক নীতির জন্য ‘আবেনোমিক্স’ নামে একটি শব্দও চালু হয় তখন। ২০২২ সালের ৮ জুলাই একটি রাজনৈতিক প্রচারসভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় শিনজো আবে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।