নাইজেরিয়ায় বন্যায় ১১৫ জনের মৃত্যু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ৩১ মে ২০২৫, ২২:৫৩

নাইজেরিয়ার উত্তর-মধ্যাঞ্চলের নাইজার স্টেটের মোকওয়া শহরে ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় অন্তত ১১৫ জন মারা গেছে। এখনো বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। একটি পরিবারের ১২ জনের মধ্যে মাত্র চারজনের সন্ধান পাওয়া গেছে।
শুক্রবার (৩০ মে) নাইজার স্টেটের রাজধানী মিনার অপারেশন অফিসের প্রধান হুসেইনি ইসা জানান, এখনও অনেক মানুষ বিপদের মধ্যে রয়েছেন এবং মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
তিনি বলেন, নদীর নিচের দিকেও মরদেহ উদ্ধার করা হচ্ছে। ফলে মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। কিছু মরদেহ ধসে পড়া বাড়িগুলোর ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার কাজে খননযন্ত্র প্রয়োজন, যাতে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া মৃতদেহগুলো উদ্ধার করা যায়।
রেড ক্রসের তথ্য অনুযায়ী, অন্তত ৭৮ জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নাইজেরিয়ার ডেইলি ট্রাস্ট পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই দুর্যোগে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন এবং একটি ইসলামি স্কুলের ৫০ জনের বেশি শিশু নিখোঁজ রয়েছে।
জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা একে ‘অভূতপূর্ব বন্যা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
বিপর্যয়ের মোকাবিলায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে উদ্ধার অভিযানে যুক্ত করা হয়েছে। রাজধানী আবুজা থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরের মোকওয়া শহরে এএফপির একজন সাংবাদিক দেখেছেন, কিভাবে জরুরি উদ্ধারকারী দল স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে মিলে ধ্বংসস্তূপের নিচে খোঁজ চালাচ্ছেন। পানির প্রবাহের পাশেই ভেঙে পড়া বাড়ির ধ্বংসাবশেষে চলছে অনুসন্ধান। 
স্থানীয় গণমাধ্যমের তথ্যানুসারে, পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন।
রেড ক্রস জানিয়েছে, শহরের দুটি প্রধান সেতু বন্যায় ধসে পড়েছে। বন্যার পানি জলবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। ইতোমধ্যে অন্তত দুটি মরদেহ কলা পাতায় ও আনকারা ছাপা কাপড়ে ঢাকা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
মোহাম্মদ ট্যাংকো (২৯) একজন সরকারি কর্মচারী, সাংবাদিকদের দেখিয়ে বলেন, এই বাড়িটাতেই আমি বড় হয়েছি। এখান থেকে অন্তত ১৫ জনকে হারিয়েছি। সম্পত্তি হারালাম। সবকিছু হারিয়ে গেল।’ একজন জেলে দাঞ্জুমা শাবা (৩৫) বলেন, তিনি এখন গাড়ির পার্কিংয়ে ঘুমান, কারণ তার বাড়ি পুরোপুরি ধসে পড়েছে।
নাইজেরিয়ায় সাধারণত ছয় মাসের বর্ষাকাল থাকে আর এই বছর সেটা মাত্র শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রতিবছরই ভারী বৃষ্টিপাত ও দুর্বল অবকাঠামোর কারণে বন্যা ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হয়, শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
বিজ্ঞানীরা বারবার সতর্ক করেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চরম আবহাওয়া আরো বেড়ে যাচ্ছে। নাইজেরিয়ায় বন্যার প্রভাব আরো খারাপ হওয়ার কারণ, ড্রেন ব্যবস্থার অভাব, জলপথের ওপর গৃহনির্মাণ ও নালা এবং নদীতে আবর্জনা ফেলা।
জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা এক বিবৃতিতে বলেছে, এই মর্মান্তিক ঘটনা আমাদের আবারও স্মরণ করিয়ে দেয় যে, জলপথে গৃহনির্মাণ কতটা বিপজ্জনক এবং ড্রেনেজ ও নদীপথ পরিষ্কার রাখার গুরুত্ব কতটা অপরিহার্য।
২০২৪ সালে তারা জানিয়েছে, দেশের ৩৬টি রাজ্যের মধ্যে অন্তত ৩১টি রাজ্যে বন্যায় ১ হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হন এবং ১২ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হন—যা দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যাগুলোর একটি।

সূত্র: এএফপি