উত্তর-পূর্ব ভারতে ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধস

নিহত অন্তত ৩০
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ০১ জুন ২০২৫, ২৩:৩৮

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে টানা ভারি বর্ষণের ফলে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধস। ইতোমধ্যে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩০ জন। পরিস্থিতি ক্রমেই আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে বলে সতর্ক করেছে স্থানীয় প্রশাসন ও আবহাওয়া বিভাগ।
রবিবার (১ জুন) ভারতের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, আসাম, অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়, মণিপুর এবং মিজোরামে ভারি বৃষ্টিপাতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আকস্মিক বন্যা ও পাহাড়ি এলাকায় ব্যাপক ভূমিধসে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত এবং বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ভারী বর্ষণ, ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যায় গত দুই দিনে কমপক্ষে ৩০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। শুধু শনিবার ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি আসাম, অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়, মণিপুর ও মিজোরাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আসামে ১২টি জেলায় অন্তত ৬০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আসাম রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
আসামের কামরূপ মেট্রোপলিটন জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ভূমিধসে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে গোয়াহাটির উপকণ্ঠে বন্ডা এলাকায় ভূমিধসে ৩ নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন রাজ্যের নগর উন্নয়নমন্ত্রী জয়ন্ত মল্ল বড়ুয়া।
অন্যদিকে, অরুণাচল প্রদেশে ভূমিধস ও হঠাৎ বন্যায় ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে ইস্ট কামেং জেলায়, যেখানে দুই পরিবারের সাত সদস্য একসঙ্গে প্রাণ হারিয়েছেন। প্রবল ভূমিধসের সময় তাদের গাড়িটি রাস্তা থেকে ছিটকে পড়ে এবং পানির তোড়ে ভেসে যায়।
এমন অবস্থায় আবহাওয়া দপ্তর আসামের কিছু অংশে রেড ও অরেঞ্জ এলার্ট এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে অরেঞ্জ ও ইয়েলো এলার্ট জারি করেছে। এতে আরও ভূমিধস ও বন্যার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এদিকে আসামের গৌহাটিতে ৬৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে গত শুক্রবার। সেদিন সেখানে ১১১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এতে শহরের একাধিক এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। ব্রহ্মপুত্রসহ বেশ কিছু নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
এদিকে, উত্তর সিকিমেও বন্যা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক রূপ নিয়েছে। শনিবার রাতে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় লাচুং ও লাচেন এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ওই এলাকায় প্রায় দেড় হাজার পর্যটক আটকে পড়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। পুলিশ ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে।
আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, সামনে আরও কয়েকদিন ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে, ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্কতা ও প্রস্তুতির পাশাপাশি উদ্ধার কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।