গ্রিসের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র ক্রিট দ্বীপে ভয়াবহ দাবানলে বনাঞ্চল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দাবানলে স্থানীয়দের পাশাপাশি ছুটি কাটাতে আসা পর্যটকরাও পড়েছেন বিপদে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত অন্তত চারটি এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে নিয়েছেন দমকলবাহিনী।
স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় তিন হাজার মানুষকে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বুধবার বিকেলের দিকে আগুনের সূত্রপাত হলেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে শক্তিশালী ঝোড়ো বাতাসের কারণে।
দমকল বিভাগ বলছে, উষ্ণ ও শুষ্ক গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া দাবানলকে আরও জটিল করে তুলছে। ক্রিট ছাড়াও কিথিরা দ্বীপ ও চালকিদিকি অঞ্চলেও একাধিক দাবানলের খবর পাওয়া গেছে।
গ্রিক দমকল বিভাগ জানিয়েছে, আগুন নিয়ন্ত্রণে ৩৮টি দমকল ইঞ্জিন, জলবাহী ট্রাক এবং অন্তত ১৫৫ জন দমকল কর্মী নিযুক্ত রয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজধানী এথেন্স থেকে বাড়তি সাহায্য, বিমান এবং বিশেষ প্রশিক্ষিত দল, পাঠানো হয়েছে।
এক দমকলকর্মী গণমাধ্যমে বলেন, এটি কোনো সাধারণ আগুন নয়। আমরা নিয়ন্ত্রণে আনার পরও বাতাসের গতি এবং ভূপ্রকৃতির কারণে আবার জ্বলে উঠছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, কয়েকটি বসতবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। প্রশাসনের নির্দেশে চারটি অঞ্চল খালি করে দেওয়া হয়েছে এবং স্থানীয় স্টেডিয়াম, স্কুল ও কমিউনিটি সেন্টারে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাবে এমন দুর্যোগ দেখা দিয়েছে। প্রতি বছর গ্রীষ্মে দাবানল গ্রিসে সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়ালেও গত কয়েক বছরের মতো এবারও এর তীব্রতা এবং ব্যাপ্তি আগের চেয়ে অনেক বেশি।
গ্রিসের অন্যতম অর্থনৈতিক খাত পর্যটন এবং গ্রীষ্মকালে ক্রিটে হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন। হঠাৎ এমন দুর্যোগে স্থানীয় অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এই দাবানল কেবল প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, এটি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকটের একটি স্পষ্ট উদাহরণ। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা ও অনিয়মিত বৃষ্টিপাত গ্রিসসহ দক্ষিণ ইউরোপজুড়ে নিয়মিতভাবে এমন আগুনের ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে, যা ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।
এই দ্বীপে কয়েক শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি অবস্থান করছেন, যাদের অনেকে স্থানীয় হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও পর্যটনখাতে কর্মরত। তাদের সতর্ক থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে এবং পরিস্থিতির অবনতি হলে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস।