
ইসরায়েল জানিয়েছে, গাজা ও মিসরের মধ্যবর্তী গুরুত্বপূর্ণ রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং আগামী কয়েক দিনের মধ্যে খুলে দেওয়া হবে। এতে ফিলিস্তিনিরা মিসরে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক সংস্থা কোগাট জানায়, গোয়েন্দা অনুমোদনের পর মিসরের সঙ্গে সমন্বয় করে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের তত্ত্বাবধানে ক্রসিং দিয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হবে। তারা জানায়, এটি জানুয়ারির যুদ্ধবিরতির সময় চালু থাকা ব্যবস্থার মতোই হবে।
একজন ইসরায়েলি গোয়েন্দা কর্মকর্তা এই পদক্ষেপকে হামাসের সঙ্গে সাত সপ্তাহ ধরে চলমান অস্ত্রবিরতির প্রতি ইসরায়েলের সমর্থনের প্রকাশ বলে উল্লেখ করেন।
তবে মিসর জানিয়েছে, রাফাহ ক্রসিং পুনরায় খোলার বিষয়ে তারা ইসরায়েলের সঙ্গে কোনও সমন্বয় করছে না। দেশটির রাষ্ট্রীয় তথ্যসেবা একটি সরকারি সূত্রের বক্তব্য উদ্ধৃত করে জানায়, ক্রসিং খোলার কোনও সমঝোতা হলে তা দুই দিকেই চালু হবে এবং তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী হবে।
ট্রাম্পের ২০ দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, রাফাহ ক্রসিং উভয় দিকেই খোলা হবে এবং জানুয়ারির যুদ্ধবিরতির সময় যে সমন্বয় ব্যবস্থা ছিল, সেটিই অনুসরণ করা হবে।
২০২৪ সালের মে মাসে ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনি অংশের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকেই রাফাহ ক্রসিং প্রায় বন্ধ ছিল। এর আগে এই ক্রসিং দিয়েই যুদ্ধের সময় সীমিত সংখ্যক ফিলিস্তিনি বাইরে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন এবং মানবিক সহায়তা প্রবেশ করত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, গাজায় এখন অন্তত ১৬ হাজার ৫০০ গুরুতর অসুস্থ বা আহত ব্যক্তি রয়েছেন, যাদের জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া জরুরি। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রিত ক্রসিং দিয়ে মাত্র ২৩৫ জন রোগীকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছে। তাদের প্রায় সবাই শিশু।
ইসরায়েলের হারেৎজ পত্রিকা জানায়, পুনরায় চালু হওয়া রাফাহ ক্রসিং পরিচালনায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) নিরাপত্তা বাহিনীও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বর্ডার অ্যাসিস্ট্যান্স মিশনের সঙ্গে কাজ করবে। পত্রিকাটি এক ইউরোপীয় সূত্রের বরাত দিয়ে জানায়, আগের যুদ্ধবিরতির সময়ও পিএ-র লোকজন সহযোগিতা করেছিল, তবে গাজায় তাদের উপস্থিতি নিয়ে ইসরায়েলের সংবেদনশীলতার কারণে তারা পিএ-র পরিচিতি চিহ্ন ব্যবহার করেনি। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজার ভবিষ্যৎ শাসনে পিএ-র কোনো ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন।
হারেৎজ আরও জানায়, হামাস ও অন্যান্য গোষ্ঠীর কাছে নিহত জিম্মিদের দেহ ফিরতে দেরি হওয়ায় নেতানিয়াহু এতদিন রাফাহ ক্রসিং পুনরায় খোলার অনুমোদন দেননি।
১০ অক্টোবর কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে হামাস ২০ জীবিত ইসরায়েলি জিম্মি এবং গাজায় থাকা ২৮ জন নিহত ইসরায়লি ও বিদেশি জিম্মির দেহ ফেরত দেওয়ার কথা মেনে নেয়। ১৩ অক্টোবর জীবিত সবাইকে মুক্তি দেওয়া হয় ২৫০ ফিলিস্তিনি বন্দি ও গাজার ১ হাজার ৭১৮ আটক ব্যক্তির বিনিময়ে।
এ পর্যন্ত ২৩ জন নিহত ইসরায়েলির দেহ এবং থাইল্যান্ড, নেপাল ও তাঞ্জানিয়ার তিন বিদেশি জিম্মির দেহ ফেরত দিয়েছে হামাস। এর বিনিময়ে ইসরায়েল ৩৪৫ জন নিহত ফিলিস্তিনির দেহ হস্তান্তর করেছে।
যে দুই জিম্মির দেহ এখনও পাওয়া যায়নি। তারা হলেন ২৪ বছর বয়সী ইসরায়েলি র্যান গাভিলি এবং ৪৩ বছর বয়সী থাই নাগরিক সুথিসাক রিনতালাক। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বুধবার জানায়, আগের দিন হামাসের দেওয়া দেহাবশেষ পরীক্ষায় দেখা গেছে, তা এই দুই জনের মধ্যে কারোরই নয়।
বুধবার বিকেলে ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের সামরিক শাখা জানায়, তারা গাজার উত্তরাঞ্চলে এক জিম্মির দেহ উদ্ধার করেছে। হামাসের সামরিক শাখা বলেছে, দেহটি পরে রেড ক্রসের মাধ্যমে ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ও তাদের মিত্রদের হাতে ২৫১ জনকে অপহরণের ঘটনায় এই দুই জনও ছিলেন। ওই দিনে প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয়। পাল্টা অভিযানে ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে নিহতের সংখ্যা এখন ৭০ হাজার ১০০ ছাড়িয়েছে।