ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতিতে নতুন উদ্বেগে নেচারালাইজড নাগরিকরাও 

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪:২০

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোববার বলেছেন, আইনগত সুযোগ পেলে তিনি কিছু মার্কিন নাগরিকের নাগরিকত্ব “অবশ্যই” বাতিল করবেন। ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের ওপর সাম্প্রতিক প্রাণঘাতী হামলার পর তাঁর প্রশাসন অভিবাসন দমনমূলক পদক্ষেপ আরও জোরদার করেছে, এবং এবার এর লক্ষ্য হয়েছে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নাগরিকত্ব পাওয়া আমেরিকানরাও। ট্রাম্প দাবি করেন, কিছু অপরাধী বাইডেন প্রশাসনের শিথিলতার সুযোগে নাগরিকত্ব পেয়েছে, এবং যদি তাঁর হাতে ক্ষমতা থাকত তাহলে তিনি প্রয়োজন মনে করলে তাদের নাগরিকত্ব বাতিল করতেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সোমালিয়া থেকে আসা মানুষের ব্যাপারেও কঠোর মন্তব্য করেন এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য নতুন আশ্রয় আবেদন বন্ধ রাখার ইঙ্গিত দেন।
নাগরিকত্ব বাতিলের ক্ষেত্রে ফেডারেল আদালতে মামলা করতে হয় এবং সরকারের ওপর কঠোর প্রমাণের দায় থাকে। নেচারালাইজেশন সেই প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে অভিবাসীরা আইন অনুযায়ী সব শর্ত পূরণ করে নাগরিকত্ব পান। কিন্তু সাম্প্রতিক ন্যাশনাল গার্ড ঘটনার পর ট্রাম্প আবারও নেচারালাইজড নাগরিকদের নিয়ে কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করেন। থ্যাংকসগিভিং–এ প্রকাশিত দীর্ঘ পোস্টে তিনি ঘোষণা দেন, অ-নাগরিকদের সব ফেডারেল সুবিধা বন্ধ করবেন, দেশের শান্তি ব্যাহত করে এমন নেচারালাইজড নাগরিকদের নাগরিকত্ব বাতিল করবেন, এবং অযোগ্য বিদেশিদের দেশ থেকে বের করে দেবেন।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, অভিবাসীরা জন্মসূত্রে নাগরিকদের তুলনায় কম অপরাধ করে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩ সালের এক গবেষণায় অভিবাসীদের কারাবরণের হার জন্মসূত্রে নাগরিকদের তুলনায় ৬০ শতাংশ কম পাওয়া গেছে। তবু বিচার বিভাগ গত জুনে আইনজীবীদের নির্দেশ দিয়েছে, নির্দিষ্ট গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত হলে নাগরিকত্ব বাতিলের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিতে। এর আওতায় যুদ্ধাপরাধ, গ্যাং সহিংসতা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো অভিযোগকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
২০২২ সালের হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ৪৬.২ মিলিয়ন অভিবাসীর মধ্যে ২৪.৫ মিলিয়ন নেচারালাইজড নাগরিক, অর্থাৎ মোট অভিবাসীর অর্ধেকের বেশি এখন মার্কিন নাগরিক। গত দশকে ৭.৯ মিলিয়নের বেশি অভিবাসী নাগরিকত্ব পেয়েছে। সাধারণত কেউ নাগরিকত্ব পেতে স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে অন্তত পাঁচ বছর থাকতে হয়, এবং গড়ে এই সময় দাঁড়ায় ৭.৫ বছর। নাগরিকত্ব বাতিলের ঘটনা আগে খুব কম ঘটত—১৯৯০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মাত্র ৩০৫টি মামলা হয়েছে। তবে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে দাখিল হয় ১৬৮টি আর বাইডেন প্রশাসনে ৬৪টি মামলা। ২০১৭ সালের পর ইউএসসিআইএস প্রায় আড়াই হাজার সম্ভাব্য মামলা চিহ্নিত করেছে এবং একশটিরও বেশি মামলা বিচার বিভাগে পাঠিয়েছে। এ বছর অন্তত একজন দোষী সাব্যস্ত হয়ে নাগরিকত্ব হারিয়েছেন, যিনি যুক্তরাজ্য থেকে এসে শিশু যৌন-নির্যাতন সামগ্রী সংগ্রহ ও বিতরণে জড়িত ছিলেন।
ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন নীতিতে আরও দুটি বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে, যা সরাসরি গ্রিন কার্ডধারী ও আবেদনকারীদের ওপর প্রভাব ফেলবে। ন্যাশনাল গার্ড হত্যাকাণ্ডের পর ১৯টি দেশের নাগরিকদের দেওয়া গ্রিন কার্ড পুনরায় যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এ ছাড়া আশ্রয় আবেদন আপাতত স্থগিত রয়েছে। যাচাইয়ের নীতিমালা কীভাবে প্রয়োগ হবে তা এখনো পুরোপুরি জানানো হয়নি, তবে অতিরিক্ত নথিপত্র, কঠোর জিজ্ঞাসাবাদ বা কারও স্ট্যাটাস বদলের মতো সিদ্ধান্ত আসতে পারে। আফগানিস্তান, মিয়ানমার, চাদ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেনের নাগরিকদের ওপর পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান ও ভেনেজুয়েলার নাগরিকরা আংশিক বিধিনিষেধের মধ্যে পড়বেন।
ডিএইচএসের সাবেক কর্মকর্তা মরগান বেইলি জানিয়েছেন, নতুন যাচাই প্রক্রিয়ায় আবেদনকারীদের আঙুলের ছাপ, আইরিস স্ক্যান, অতিরিক্ত নিরাপত্তা তথ্য, দীর্ঘ সাক্ষাৎকারসহ আরও কঠোর প্রমাণপত্র দিতে হতে পারে। এর ফলে স্বল্পমেয়াদে অনিশ্চয়তা বাড়বে এবং সংশ্লিষ্ট দেশের আবেদনকারীরা বিলম্বের শিকার হতে পারেন। ২৬ ডিসেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন বায়োমেট্রিক প্রবেশ–বহির্গমন নিয়ম কার্যকর হবে, যার ফলে সব অ-আমেরিকান ভ্রমণকারী— এমনকি স্থায়ী বাসিন্দাদেরও—প্রবেশ ও প্রস্থানকালে বায়োমেট্রিক তথ্য দিতে হবে। বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও সমুদ্রবন্দরে ছবি, আঙুলের ছাপ বা আইরিস স্ক্যান নেওয়া হবে। আগের সব ব্যতিক্রম বাতিল করে সব বয়সের মানুষের জন্য এটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
নতুন নিয়ম ভবিষ্যতে নাগরিকত্ব আবেদন, স্থায়ী বসবাসের ধারাবাহিকতা বা গ্রিন কার্ড হারানোর মতো প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষত ১৯টি দেশের আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে জটিলতা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১ কোটি ২৮ লাখ গ্রিন কার্ডধারী বসবাস করছেন। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি দরিদ্র দেশ থেকে অভিবাসন স্থায়ীভাবে স্থগিত রাখবেন এবং যারা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সম্পদ নয়—তাদের সরিয়ে দেবেন। ডিএইচএস কর্মকর্তারা বলছেন, আগের প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো থেকে অভিবাসী গ্রহণ বাড়িয়েছে, আর এখন সেই ভুল সংশোধন করা হচ্ছে। অভিবাসন আইনজীবীরা বলছেন, একটি মর্মান্তিক ঘটনার অজুহাতে পুরো আশ্রয় ব্যবস্থা বন্ধ করা নেতৃত্ব নয়—এটি সমষ্টিগত শাস্তি। সরকার এখনো চূড়ান্ত নির্দেশনা প্রকাশ করেনি, তবে আগামী কয়েক সপ্তাহে ডিএইচএস ও ইউএসসিআইএস আরও তথ্য দিতে পারে বলে জানিয়েছে।